কবে ঘুচবে নারী ফুটবলারদের বেতন বৈষম্য?

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ২৩:৪৬ | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ২৩:৫৪
এক ট্রফিতেই দেশের ফুটবলে ফুটেছে ফুল। সারা বছর নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হওয়া ফুটবলই এখন 'টক অব দ্য কান্ট্রি'। দীর্ঘ ১৯ বছর পর মেয়েদের হাত ধরেই এসেছে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। তাতেই যেন বদলে গেছে পুরো দৃশ্য।
একসময় মেয়েদের ফুটবল খেলা নিয়ে যারা টিপ্পনী দিয়েছিলেন, তারাই কিনা এখন অভিনন্দন জানাচ্ছেন ট্রফি জয়ে। যাদের হাত ধরে এসেছে ফুটবলের বড় এই সাফল্য, সেই কৃষ্ণা রানী-আঁখি খাতুনরা প্রত্যাশা অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাননি। আবার অনেক ক্লাবই মেয়েদের ফুটবলের প্রতি অনাগ্রহ। গতকাল বাফুফে ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রসঙ্গ উঠতেই সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন দিলেন পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতায় এখন সব কিছুতেই পরিবর্তন আসবে বলে জানান তিনি।
এর মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে সাবিনাদের বেতন কাঠামো নিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে বাফুফে ভবনের আবাসিক ক্যাম্পে ৩০-৪০ জন নারী ফুটবলার থাকছেন। তাদের থাকা-খাওয়ার সব ব্যবস্থাই করছে ফেডারেশন। কিন্তু পরিবারের জন্য ফুটবলে আসা এসব মেয়ে যে বেতন পান, তা অনেকটা টোকেন মানির মতোই। যে সানজিদা-সাবিনারা ইতিহাস লিখলেন, তাদের মাসিক বেতন শুনলে চমকে যেতে পারে যে কেউ। 'এ+' ক্যাটাগরিতে বেতন ১২ হাজার, 'এ' ক্যাটাগরিতে ১০ আর 'বি' ক্যাটাগরিতে ৮ হাজার টাকা মাত্র। আর পুরুষরা যেখানে লিগে ক্লাবগুলোর কাছে পান ৫০-৬০ লাখ টাকা, সেখানে ক্যাটাগরি ভেদে সানজিদাদের পারিশ্রমিক ৪-৫ লাখ।
অথচ দীর্ঘ ১৯ বছর দেশকে কোনো সাফল্য এনে দিতে না পারা ছেলেরা সুযোগ-সুবিধায় মেয়েদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। একেকজন খেলোয়াড় ক্লাবের হয়ে মৌসুমে কোটি টাকার মতো পান। আর জাতীয় দলে এক ম্যাচ খেলে ৫০ হাজার টাকার মতো আয় হয় তাদের।
এসব বিষয় তুলে ধরলে সালাউদ্দিন শুনিয়েছেন আশার কথা, 'বাস্তবে ছেলেদের সমান বেতন তো মেয়েরা পায় না। এমবাপ্পে পায় ৪ মিলিয়ন ইউরো, আর মেয়েদের ফুটবলের সবচেয়ে বড় খেলোয়াড় পান ২ মিলিয়ন। তো এখানে তো সমান করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমরা ওদের থাকা-খাওয়াসহ মাসিক বেতনের ব্যবস্থা করেছি। ক্লাব থেকে যে টাকা পায়, সেটা আমরা মেয়েদের কাছ থেকে নেইনি। তাদের দিয়েছি। আমি তো চাই প্রত্যেকটা মেয়েকে একবারে দুই কোটি টাকা দিয়ে দিতে। আমার কাছে থাকলে দিয়ে দিতাম। আমি চেষ্টা করছি আনতে, আনলে তাদেরই দেব। মেয়েগুলোকে যত দেব, তত পাব। ফান্ড বেড়ে গেলে মেয়েদের দিকেই যাবে।'
ভবিষ্যতে নারী ফুটবলের জাগরণের জন্য করপোরেট প্রতিষ্ঠানসহ সবারই এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন সালাউদ্দিন। এই শিরোপা জয়ে অনেক মেয়েরই ফুটবলের প্রতি আগ্রহ বাড়বে, বিশ্বাস বাফুফে সভাপতির, 'মিডিয়া যদি আমাদের সাপোর্ট করে তাহলে আমাদের ফুটবলের ব্র্যান্ডিং আরও বাড়বে। স্পন্সররাও এগিয়ে আসবে। এই জয়ে তৃণমূলে প্রভাব পড়বে। এই চ্যাম্পিয়নশিপের পর বাফুফে এবং মন্ত্রণালয় যে সংবর্ধনা দেবে, তখন বাচ্চাগুলো দেখে আগ্রহী হয়ে বলবে আমিও ফুটবলার হতে চাই। আশা করি এটা ইতিবাচক হবে।'
সাফের গণ্ডি পেরিয়ে সালাউদ্দিনের চোখ এখন আসিয়ানে, 'ওরা আসার পরে বলব 'তোমরা এখন চ্যাম্পিয়ন'। তবে এটা এখন শেষ। তোমাদের সামনে তাকাতে হবে। তোমাদের সামনে তাকাতে হলে আরও দ্বিগুণ ট্রেনিং করতে হবে। ফিন্যান্সিয়াল সাপোর্ট সব কিছুই তোমরা পাবা। এখন সামনে তাকাতে হবে। আমার লক্ষ্য এবার আসিয়ানের দিকে।'