ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

এবার বড় জয়ের অপেক্ষা

এবার বড় জয়ের অপেক্ষা

দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এক টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরির পর শান্তর উদযাপন- এএফপি

সেকান্দার আলী

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৩ | ১৮:০০

কতদিন রানের পাহাড়ে চাপা পড়ে পিষ্ট হয়েছে বাংলাদেশ! ইনিংস ব্যবধানে হারের রেকর্ডও তো কম নয়! নিজেদের সেই করুণ দিনগুলোর মতো প্রতিপক্ষকে বিশাল লক্ষ্য দেওয়ার পর কেমন অনুভূতি বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে? আফগানিস্তানকে ৬৬২ রানের লক্ষ্য দেওয়ার পেছনে কোনো কারণ ছিল কিনা জানতে চাওয়া হয়েছিল মুমিনুল হকের কাছে। অফিসিয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বললেন, না, তেমন কিছু নয়। নিজেদের পরিকল্পনাকেই সামনে নিয়ে এলেন বাঁহাতি এ ব্যাটার। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছিলেন লম্বা সময় ব্যাটিং করার। জাকির হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হকরা শুধু সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গেছেন। তাতেই ফুলে ফেঁপে উঠেছে স্কোর বোর্ড। আফগানিস্তানের সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া গেছে অসম্ভব এক লক্ষ্য। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে এমন সুখের দিন কালেভদ্রে দেখা গেছে। সে রেকর্ড খুঁজতেও ডুব দিতে হয় স্মৃতির অতলান্তিতে। স্মৃতি হাতড়ে যা পাওয়া যায়, তা কিন্তু এবারের ঢাকা টেস্টের মতো বিলাসী কিছু নয়। মুমিনুলদের মুখের হাসি বলে দেয় স্বস্তির স্বাদ আস্বাদন করছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে এগিয়ে ছিল ২৩৬ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ২০০ রান করলেও বিশ্ব রেকর্ড করে জিততে হতো আফগানিস্তানকে। মিরপুরের কন্ডিশনে যেটা অসম্ভব ব্যাপার। স্বাগতিকরা সেখানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ৪ উইকেটে ৪২৫ রানে। সব মিলিয়ে ৬৬১ রানের লিড। অর্থাৎ চতুর্থ ইনিংসে আফগানিস্তানকে জয়ের জন্য করতে হবে ৬৬২ রান। যা প্রতিপক্ষকে দেওয়া বাংলাদেশের সর্বোচ্চ টার্গেট। বিশ্ব রেকর্ড যেখানে ৪১৮ রানের, সেখানে সাড়ে ছয়শ রানের বেশি তাড়া করা টেস্টের নবীনতম সদস্য দেশের পক্ষে অসম্ভব একটা ব্যাপার। আফগানিস্তানকে এই টেস্টে বাঁচাতে পারে একমাত্র প্রকৃতি। এ ছাড়া বাংলাদেশকে জয় বঞ্চিত করতে পারবে না কেউ। সেদিক থেকে বলা যায়, জয়তো লেখা হয়েই গেছে, অপেক্ষা শুধু ব্যবধানের।

এক উইকেটে ১৩৪ রানে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছিল বাংলাদেশ। জাকির ও শান্ত ৫৪ রান করে নিয়ে গতকাল তৃতীয় দিন শুরু করেন। সেই জুটি ভাঙে ১৭৪ রানে। টানা দুই ইনিংসে টপঅর্ডারের এমন সাফল্য আগে খুব একটা দেখা যায়নি। নাজমুলের শান্ত স্বভাবের ব্যাটিং রোমাঞ্চকর মুহূর্ত এনে দেয় মিরপুরে। প্রথম ইনিংসে ২ রানে আউট হন জাকির। তিনিই দ্বিতীয় ইনিংসে বড় জুটি গড়েন। ৯৫ বল খেলে ৭১ রানে আউট না হলে একটা রেকর্ডের সাক্ষী হতো মিরপুর। তিন টেস্ট খেলে দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করা দেশের প্রথম ব্যাটার হতেন তিনি। ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হওয়ায় মাইলফলকটি পাওয়া হয়নি তাঁর। তবে টানা তিন টেস্টে কোনো এক ইনিংসে পঞ্চাশের বেশি রান করে ধারাবাহিকতার তকমাটা জুটিয়ে নেন ঠিকই।

জাকিরের আউটের সময় শান্ত সেঞ্চুরি থেকে অল্প দূরে ছিলেন। মুমিনুলের সঙ্গে জুটি বেঁধে সে রান করে ফেলেন দ্রুতই। দেশের মাঠে আগে ১১ টেস্টে যিনি কোনো সেঞ্চুরির দেখা পাননি, তিনিই কিনা আফগানিস্তানের বিপক্ষে করেন জোড়া সেঞ্চুরি। প্রথম ইনিংসে ১৪৬, দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৪ রান তাঁর। রান করার কতটা ক্ষুধা থাকলে একজন ব্যাটার আষাঢ়ের ভ্যাপসা গরমেও মাটি কামড়ে পড়ে থেকে সেঞ্চুরি ইনিংস খেলতে পারেন। বাঁহাতি এ ব্যাটারের প্রশংসা করতে গিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘শান্তর ব্যাটিং দেখা চোখের প্রশান্তি।’ টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি করা দেশের একমাত্র ব্যাটার ছিলেন মুমিনুল। সে রেকর্ডে ভাগ বসালেন শান্ত।

ওপেনিংয়ে জয়, জাকির রান করে স্বস্তিতে ছিলেন। ধারাবাহিক শান্ত তো প্রশ্ন তোলার সুযোগই রাখেননি। প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হওয়া মুমিনুলের জন্য ম্যাচটি হয়ে যায় এসিড টেস্টের। মাথায় চেপে থাকা রাশি রাশি চাপ নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামেন মিডলঅর্ডার এ ব্যাটার। ধীরে এবং ধরে খেলে ২৬ ইনিংস পর সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে মাথা থেকে চাপের বিষ নামান। মুমিনুল ১২১ রানে অপরাজিত। এটি তাঁর দ্বাদশ টেস্ট সেঞ্চুরি। ১১ সেঞ্চুরি নিয়ে তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমের ওপরে ছিলেন আগেই। গতকাল তাঁদের সঙ্গে ব্যবধানে বাড়ালেন দুই সেঞ্চুরির। এত লম্বা বিরতি দিয়ে সেঞ্চুরি পাওয়া মুমিনুল মুক্তির আনন্দে ভাসছেন।

বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখার পর রানের উইকেট হয়ে গেছে ভাবার কারণ নেই। গতকালও স্বাগতিক বোলাররা দাপট দেখাতে পেরেছেন শেষ বেলা পর্যন্ত। শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ চার ওভার করে বোলিং করে দুটি উইকেটও শিকার করেন। ১১ ওভার শেষে দুই উইকেটে ৪৫ রান আফগানিস্তানের। লক্ষ্য থেকে এখনও ৬১৭ রান দূরে তারা। তিন দিনে ২৭০ ওভার খেলা হওয়ার কথা ছিল। গরম, বিরতি ও পেস বোলিং বেশি করায় বেশি সময় খেলিয়েও কোটা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। ৫৪ ওভার কম খেলা হয় তিন দিনে। গতকাল ২০ ওভার কম খেলা হয়। তাই ম্যাচ শেষে স্লো ওভার রেটের কারণে জরিমানা গুনতে হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।


আরও পড়ুন

×