মোরসালিনের সাক্ষাৎকার
অবাক হয়েছি কীভাবে গোলটা মিস হলো

শেখ মোরসালিন
--
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৩ | ০২:৫৭
দুই সতীর্থ ইনজুরিতে থাকায় প্রাথমিক স্কোয়াডে সুযোগ পাওয়া। অনুশীলনে কোচের মন জয় করে জায়গা করে নেন চূড়ান্ত স্কোয়াডে। এরপর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়িয়ে মালদ্বীপ ও ভুটানের বিপক্ষে গোল করে আলোচনায় চলে আসেন ১৯ বছর বয়সী মিডফিল্ডার শেখ মোরসালিন। কিন্তু শনিবার কুয়েতের বিপক্ষে সেমিফাইনাল ম্যাচের ২ মিনিটে তাঁর গোল মিস নিয়ে আলোচনা চলছে ফুটবল অঙ্গনে। স্বপ্নের খুব কাছে গিয়ে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় পুড়লেও এখানেই হাল ছাড়ছেন না একসময় বৃত্তির টাকা দিয়ে বুট কিনে ফুটবল খেলা তরুণ ফুটবলার। ক্যারিয়ারে একবারের জন্য হলেও সাফের ট্রফি ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখা ফরিদপুর চরভদ্রাসন থেকে উঠে আসা শেখ মোরসালিন রোববার বেঙ্গালুরু থেকে মোবাইলে সমকালের কাছে খুলে বলেন মনে কথা। শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়
সমকাল : স্কিলটা কীভাবে রপ্ত করেছেন?
মোরসালিন : আমি যখন একদমই ছোট, তখন মায়ের একটা বাটন ফোন ছিল। নকিয়া ফোনে আমি রোনালদিনহো, মেসি, রোনালদো, নেইমারদের খেলার ভিডিও দেখেছি। আমার মনে আছে, সেই সময় মোবাইলের মধ্যে ৭৫টির মতো স্কিলের ভিডিও ছিল, আমি প্রতিদিন সেগুলো দেখতাম।
সমকাল : দারুণ ফুটবল খেলেও হেরেছে বাংলাদেশ। রাতটি নিশ্চয় ভালো কাটেনি।
মোরসালিন : রাতটি ভালো না কাটাটাই স্বাভাবিক। ফাইনাল খেলার দারুণ একটি সুযোগ ছিল আমাদের। যদিও আমরা ভালো খেলেছি; কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারার দুঃখটা থেকেই গেল। ইচ্ছা ছিল ফাইনাল খেলব, সাফের ট্রফি উঁচিয়ে ধরব; কিন্তু সেই ইচ্ছা পূরণ হলো না। টেনশনে রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি। নিজের কাছে খারাপ লাগছে আমি একটা গোলের সুযোগ নষ্ট করেছি। তারপর আবার দল হারছে– সব মিলিয়ে রাতটা ভালো যায়নি।
সমকাল : ওয়ান টু ওয়ানে গোল মিস করেছেন।
মোরসালিন : প্র্যাকটিস বা ম্যাচে এই রকম গোল কখনও মিস হয়নি। এ রকম ওয়ান টু ওয়ান পজিশনে আমি কখনও গোল মিস করেছি বলে মনে হয় না। আমি নরমালি সুন্দর করে পুশ করে একটা সাইডে বলটা মারার চেষ্টা করি। কিন্তু গতকাল (শনিবার) কী হলো বুঝলাম না। নিজেও অবাক হয়ে গেছি, কীভাবে ওটা মিস হয়ে গেছে। পোস্টে ছিল বলটা; আর গোলরক্ষকও লাইনে ছিল, যে কারণে গোলটি হয়নি।
সমকাল : যদি গোলটি হতো, তাহলে মোমেন্টামটা পরিবর্তন হয়ে যেত।
মোরসালিন: হ্যাঁ বলতে পারেন চেঞ্জ হতো। ফুটবল খেলায় অনেক কিছুই হতে পারে।
সমকাল : গোল মিসের পর কে কি বললেন?
মোরসালিন : সারা রাতে আফসোসে পুড়ছি। আমার টিমমেট, রুমমেট, কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে সবাই আমাকে বলেছে মিস হতেই পারে। এটা খেলারই অংশ। মন খারাপ করার কিছু নেই। সামনে যেন আরও ভালো করতে পারি, সেই চেষ্টা আমি করব। আমার যেখানে দুর্বলতা আছে, সেগুলো কাটিযে উঠে দলকে কিছু দিতে চাই। যেন এ ধরনের ছোট ভুল না হয়।
সমকাল : মালদ্বীপ ও ভুটানের বিপক্ষে বাঁ পায়ে অসাধারণ গোল করেছেন। বাঁ পায়ের এ স্কিলটা কীভাবে রপ্ত করেছেন?
মোরসালিন : ওই রকম কোনো ক্যারিশমা নেই। আমি আসলে ছোটবেলা থেকে ট্রেনিং করি। সব সময় শুট প্র্যাকটিস করি। ছোটবেলা থেকে দেখা গেল টাইমিংটা ভালো হওয়ায় আস্তে আস্তে ট্রেনিং করতে করতে বাঁ পায়ে গোল করাটা কিছুটা আয়ত্তে আসছে। আশা করি, সামনে আরও ভালো করতে পারব।
সমকাল : সেমিফাইনালে উঠতে না পারলেও এই দল নিয়ে গর্ব করার মতো অনেক কিছুই আছে।
মোরসালিন : আমরা এ টুর্নামেন্ট অনেক ভালো খেলছি। দেখা গেল র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে হেড টু হেড লড়াই করেছি। টিম কম্বিনেশনও ভালো ছিল। সবার মধ্যে বোঝাপড়াটা ছিল দারুণ, যে কারণে ভালো খেলা সম্ভব হয়েছে। যদিও আমরা কুয়েতের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছি, তারপরও অনেক ভালো খেলেছি।
সমকাল : কোনো বয়সভিত্তিক পর্যায়ে খেলেননি। সরাসরি জাতীয় দলে ঢুকলেন এবং গোলও করলেন।
মোরসালিন : আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে খেলব। বিপিএলে তো কিছু কিছু ম্যাচ খেলেছি, সেই অভিজ্ঞতাও কাজে লেগেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলাটা অনেক কঠিন। তবে আমি আবেগে ভেসে যাইনি। দলে সুযোগ পাওয়ার পর স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেছি। যদি অতি আত্মবিশ্বাসী হতাম, তাহলে পারফরম্যান্সটা ভালো করা যায় না।
সমকাল : সাফের প্রাথমিক স্কোয়াডে ছিলেন না। দু’জনের ইনজুরির কারণে দলে ঢুকলেন। এরপর করেছেন দুটি গোলও।
মোরসালিন : আমি কেন এটা কেউই প্রত্যাশা করতে পারবে না। দলে অনেক সিনিয়র প্লেয়ার থাকতে, আমার মতো একজন জুনিয়র ফুটবলার ম্যাচ খেলার সুযোগ পাব, এটা স্বপ্নের মতো মনে হয়েছে। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল। অনুশীলন থেকে শুরু করে সব জায়গায় শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কোচ হয়তো মনে করেছেন, আমি ভালো করছি, আমাকে সুযোগ দেওয়া দরকার। আমার কাছে মনে হয়েছে, কোচ যেভাবে যেভাবে বলেছেন, আমি তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছি।
সমকাল : বর্তমান প্রজন্মের ক্রিকেটের প্রতি টান বেশি। আপনার ফুটবলকে বেছে নেওয়ার কারণ কী?
মোরসালিন : ছোটবেলা থেকে ফুটবল আমার কাছে একটি আবেগের জায়গা। অন্যান্য খেলা খেলতাম, তবে ফুটবলের প্রতি আমার আবেগটা একটু বেশিই ছিল।
সমকাল : ফুটবল নিয়ে আপনার স্বপ্ন।
মোরসালিন : আমার স্বপ্ন ছিল দেশের হয়ে সাফের ট্রফি জেতা। স্বপ্নপূরণের খুব কাছে চলে এসেছিলাম। এবার হয়নি তো কী হয়েছে। নতুন করে স্বপ্নটা আরও দৃঢ় হয়েছে। বলতে পারেন এখন আমার কাছে নতুন স্বপ্ন– সাফের ট্রফি ধরা। ফুটবল ক্যারিয়ারে আমি যদি সাফের ট্রফিটা স্পর্শ করতে না পারি, তাহলে আমার জীবনে একটা আক্ষেপ থেকে যাবে। আমার খুব ইচ্ছা এক দিন সাফের ট্রফি হাতে নিব। আর দেশকে কিছু দেওয়ার পর আমার স্বপ্ন দেশের বাইরে গিয়ে বিদেশি লিগে খেলব। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা দেশের বাইরের লিগে খেলা।
সমকাল : দেশের বাইরে লিগ বলতে কোন লিগে খেলার ইচ্ছা।
মোরসালিন : এটা হতে পারে যে কোনো দেশ। যেমন আমি জাতীয় দলের হয়ে খেলছি, তখন কোনো একটি দেশ আমাকে ভালো একটি অফার দিয়েছে। এটা হতে পারে আইএসএল কিংবা অন্য কোনো লিগ।
সমকাল : আপনার খেলার ধরন অনেকটা ইউরোপিয়ান ধাঁচের। সেখানে খেলার স্বপ্ন কি দেখছেন?
মোরসালিন : এটা মনে মনে আছে। আমি যদি এখন বলে ফেলি, তাহলে মানুষ আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে। ইউরোপিয়ান লিগে খেলা বাস্তবায়ন করাটা খুবই কঠিন। তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে স্বপ্নটা বাস্তবায়ন করতে পারব।
সমকাল : মাঠ ও মাঠের বাইরের ইস্যু নিয়ে ফুটবলের প্রতি অনেকেই বিমুখ হয়ে গিয়েছিলেন। তবে এবারের সাফের পারফরম্যান্সে নতুন করে ফুটবলের প্রতি পুরোনো টান ফিরে পেয়েছেন ফুটবলপ্রেমীরা।
মোরসালিন : সবার সাপোর্ট খুব দরকার আমাদের। দিন শেষে আমরাও তো মানুষ। আমরা দেশের জন্যই খেলতে যাই। দেশের মানুষ যদি সাপোর্ট না করে, তাহলে মানসিকভাবে আমরা ভেঙে পড়ব। যদি সবাই সাপোর্ট করে, তাহলে ভালো খেলতে আরও অনুপ্রেরণা পাব। এখন সবাই আমাদের নিয়ে কথা বলছে, এটা দেশের জন্য এবং ফুটবলের জন্যও ভালো। আশা করি, সবাই যদি সাপোর্ট করে, তাহলে ফুটবল আগের থেকে অনেক এগিয়ে যাবে।