অবনমিতই থাকছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ

ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৩ | ০৭:৩৮
তখনও প্রিমিয়ার লিগের গত মৌসুমের সমাপ্তি ঘটেনি। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষে লিগে নিজেদের শেষ ম্যাচ থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের কর্তাদের মনোযোগ টেবিলের খেলাতে। প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমিত হওয়া ক্লাবটি ঐতিহ্য আর আবেগকে পুঁজি করে দেশের ফুটবলের শীর্ষ লিগে টিকে থাকার চেষ্টায়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের অনুমোদন নিয়ে অবনমন না করতে গত ২০ জুলাই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে একটা চিঠি জমা দেন ক্লাবের ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম।
প্রায় এক মাস হয়ে গেলেও ইতিবাচক কোনো উত্তর বাফুফে থেকে পায়নি মুক্তিযোদ্ধা। এর মধ্যে নতুন মৌসুমের জন্য ঘোষিত দলবদলের ১৮ দিন অতিবাহিত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে নিয়ে বাফুফে নির্বাহী কমিটির যে সভা হওয়ার কথা ছিল তাও হয়নি। আর হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। গতকাল সমকালের সঙ্গে বাফুফে সভাপতি এবং পেশাদার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান কাজী সালাউদ্দিনের মন্তব্যেই স্পষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অবনমন না করার বিষয়টি বিবেচনা করার সুযোগ নেই, ‘মুক্তিযোদ্ধার ব্যাপারে সিদ্ধান্তটি বোর্ড দেবে। তবে তাদের প্রিমিয়ার লিগে রাখা মনে হয় কঠিন। কারণ এটা তো কোনো ফরম্যাটে, কোনো নিয়মে পড়ে না।’
২০২২-২৩ মৌসুম থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সঙ্গে আজমপুর এফসিরও অবনমন নিশ্চিত হয়েছে। গত ৩১ জুলাই লিগ কমিটির সভায় পয়েন্ট টেবিলের অনুমোদনও দিয়েছিল বাফুফে লিগ কমিটি। বাইলজের ধারা শিথিল করে অবনমন না করতে মুক্তিযোদ্ধার আবেদনটি ছিল না লিগ কমিটির সেই মিটিংয়ের এজেন্ডায়। মূলত মুক্তিযোদ্ধার ইস্যু নিয়ে নির্বাহী কমিটির মধ্যেই আছে দ্বিধাবিভক্তি। কারণ তাদের মতো ২০২০-২১ মৌসুমে অবনমিত হওয়া ব্রাদার্স ইউনিয়নও অবনমন না করতে অনেক অনুনয়-বিনয় করেছিল।
কিন্তু পেশাদার লিগ কমিটি তাদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিল। এবার মুক্তিযোদ্ধার আবেদন বাস্তবায়ন করতে গেলে নিয়ম ভাঙতে হবে। সেটা চান না লিগ কমিটির চেয়ারম্যান সালাউদ্দিনও, ‘আইনের কারণেই তো আমরা অতীতে নিজেদের অবস্থানে কঠোর ছিলাম। লিগের বাইলজে আছে অবনমন, আমি তো সেটার বাইরে যেতে পারি না। আমার যত ইচ্ছাই থাকুক আমি তো নিয়মের বাইরে যেতে পারব না। এখনও আমি কোনো কিছুতে নিয়মের বাইরে যাইনি এবং আমি যাওয়া শুরুও করব না।’
দলবদল শুরু হলেও বাফুফের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় আগেই হাল ছেড়ে দেন ক্লাবটির ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার নিজের হতাশার কথা সমকালের কাছে জানান তিনি, ‘আমার কাছে তাই মনে হচ্ছে যে তারা মনে হয় প্রিমিয়ার লিগে রাখবে না। ইতিবাচক কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। সভাপতি তো একা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। পক্ষে-বিপক্ষে লোকজনও আছে।’ এখন তো সভাপতি বলেছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে প্রিমিয়ার লিগে রাখা সম্ভব হবে না। ‘আমরা হয়তোবা বিসিএলে খেলব না। কারণ এখানে সম্মানের বিষয়টি জড়িত। ধরতে পারেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হারিয়ে যাবে’– বলেন আরিফুল।
কালের স্রোতেই অনেক ফুটবল ক্লাব হারিয়ে গেছে দেশের ফুটবল থেকে। অবনমন হওয়ায় এবং বাফুফে নিয়ম না ভেঙে প্রিমিয়ার লিগে না রাখায় আর ক্লাব কর্তাদের না খেলার মানসিকতায় পেশাদার লিগের দু’বারের রানার্সআপ এবং ঢাকা লিগে দু’বারের চ্যাম্পিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রও হয়তো হারিয়ে যেতে পারে ঘরোয়া ফুটবল থেকে।