গঙ্গা পাড়ে পদ্মার হাহাকার

সঞ্জয় সাহা পিয়াল, কলকাতা থেকে
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৩ | ০৭:০৭ | আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৩ | ০৭:০৭
ইমিগ্রেশন অফিসার পাসপোর্ট উল্টে– পাল্টে দেখেই বুঝে নিলেন– ‘কী, বিশ্বকাপ দেখতে এসেছেন। বাংলাদেশের ম্যাচ?’ লাইনে দাড়ানো আগের কয়েকজনকেও একই প্রশ্ন করে স্বান্তনার স্তুতি শুনিয়েছেলন– ‘দেখুন পাকিস্তানকে হারাতে পারেন কিনা। ওদেরও যা অবস্থা।’
এমনিতে কলকাতায় আসা ঢাকার পর্যটকদের একটা বড় আকর্ষন শপিং। সেই সঙ্গে চিকিৎসার জন্যও আসে অনেকে। কিন্তু ইমিগ্রেশন অফিসার সাংবাদিক পরিচয় জেনে যে তথ্য দিলেন তাতে গত চার পাঁচ দিনে পদ্মাপাড়ের ঢল নেমেছে যেন কলকাতার গঙ্গা পাড়ে।
কিন্তু নেদারল্যান্ডসের কাছে প্রথম ম্যাচটা ওই রকম বিশ্রীভাবে হারার পর এখন সেখানে শুধুই হাহাকার। নিউমার্কেটের আশে পাশের এলকাগুলাকে আগে থেকেই ‘মিনি বাংলাদেশ’ বলে থাকে এখানকার স্থানিয়রা।
বাংলাদেশি পরটা থেকে শুরু করে পাঁচ ফোরনের সবজি। বাংলাদশিদের জন্যই বিশেষ কিছু রেস্টুরেন্টও হয়েছে এখানে। প্রতি রাতেই ঢাকার বাস ছাড়ে এখান থেকে। মার্ককুইজ স্ট্রিট, সাদর স্ট্রিট, তালতলা– কলকাতায় শপিং করতে আসলে এখানকার হোটেল গুলাতেই দেখা মিলে ঢাকা–চট্টগ্রামের অনেককে।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ম্যাচ আছে বলে দুদিন আগেও এখানকার হোটেল গুলোতে সিট মেলেনি। তবে ডাচদের কাছে অমন বিব্রতকর হারের পর গতকাল থেকেই বাংলাদেশ–পাকিস্তান ম্যাচের টিকিটও কম দামে বিক্রি হচ্ছে এখানে।
‘প্রথম ম্যাচ দেখার পর একজন বাংলাদেশি ঢাকা ফিরে গেছে। তিনিই আমাকে এই বাংলাদেশ–পাকিস্তান ম্যাচের টিকিটটি উপহার দিয়ে গেছেন। এখন সেটা বিক্রি করে দেব। বেশি না, দেড় থেকে এক হাজার রুপি পেলেই বিক্রি করব। কয়েকজনকে বলেওছি, কিন্তু কেউ নিতে চায় না।’
মার্ককুইজ স্ট্রিটের সিটি লজের কর্মী মিরাজ খানের আফসোস। যদি বাংলাদশে ভালো খেলত তখন দেখতেন আরও কত মানুষ আসতো ঢাকা থেকে।
একেবারেই যে আসেনি, তা অবশ্য নয়। ঢাকার বেশ কিছু ক্লাব কর্মকর্তারা একসঙ্গে খেলা দেখতে এসেছেন। তারা এখনও আশাবদি যদি পাকিস্তানের সঙ্গে কিছু একটা হয়। এই আশাতেই সেই ধর্মশালা থেকে বাংলাদেশ দলের ছায়া সঙ্গি হয়েছেন বিসিবির বয় বুলু। মাথায় তিনটি বাঘের প্রীতিক নিয়ে প্রতি ম্যাচেই গ্যালারিতে থাকছেন।
‘প্রতি ম্যাচের আগেই মনে হয় আজ হবে, আজ হবে। কিন্তু আর হয়ে উঠে না। তবে মন বলছে পাকিস্তানের সঙ্গে ইডেনে জিততে পারি আমরা।’ আসলে এই আশায় আশায় কলকাতার দিকে তাকিয়ে এখন পদ্মাপাড়ের পর্যটকেরা।
অবশ্য পাকিস্তান দল ‘সিটি অব জয়’ –এ এসেও কিছুক্ষণের জন্য পর্যটক হয়েছিল। বাবর আজম আর ইমাম উল হক এই শহরে সন্ধ্যার পর ঘুরতে বেরিয়েছিলেন নিউটাউনের ইকো পার্কে। সৌদ আহমেদ আর আবদুল্লাহ শফিক বেরিয়েছিলন ক্যামাক স্ট্রিটের গহনার মার্কেটে।
তবে বাংলাদেশ দলের সবাই এদিনও হোটেলেই ছিলেন। আজ সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৯ টা পর্যন্ত ইডেনে অনুশীলন করবেন সাকিবরা।