সাক্ষাৎকার
দাবায় আমাদের কোন রোল মডেল নেই

বাংলাদেশের দাবাড়ু ফাহাদ।
সাখাওয়াত হোসেন জয়
প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১৫:২৮
কোচ নেই, তবুও ঘুঁটির চালে বিশ্বের নামিদামি অনেক দাবাড়ুকে হারিয়েছেন। ভিয়েতনামে গ্র্যান্ডমাস্টার টুর্নামেন্টে রানারআপ হয়ে ফাহাদ রহমান অর্জন করেছেন প্রথম নর্ম। গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার শৈশবের স্বপ্নটা হাতছানি দিয়ে ডাকলেও এইচএসসিতে পড়ুয়া ফাহাদের মনে লুকিয়ে আছে অনেক কষ্ট। দেশের দাবায় জাতীয় কোচ না থাকার আফসোস যেমন আছে, তেমনি করে কোনো রোল মডেল না থাকার দুঃখ আছে তাঁর। এসব ছাড়া আরও অনেক বিষয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়
সমকাল : এই পর্যায়ে আসতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে আপনাকে। দাবায় যারা আসতে চান, সেই নতুন প্রজন্মের কাছে আপনার মেসেজটা কী?
ফাহাদ : প্লেয়ারদের জন্য আমার মতামত হলো, কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। বাংলাদেশে দাবা খেলা শেখাটা অনেক কঠিন। কারণ বাংলাদেশে অনেক কিছুরই অভাব। কেউ গ্র্যান্ডমাস্টার হতে চাইলে তার মনোবল অনেক শক্ত হতে হবে। অনেক বাধা আসবে, সেটাকে এড়িয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আর যদি কর্মকর্তাদের জন্য কিছু বলতে হয়, আমি বলব প্লেয়ারদের যেন আরও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। একটা জাতীয় কোচের প্রয়োজন। আপনি দেখেন, প্রতিটি ইভেন্টেই কিন্তু জাতীয় কোচ আছে। ক্রিকেট, ফুটবলে আছে; কিন্তু দাবাতে নেই। আমি বলব, একজন জাতীয় কোচ আসতে হবে, যাতে করে পরবর্তী প্রজন্ম কোচের মাধ্যমে নিজেদের খেলায় উন্নতি করতে পারে। কোচের সহযোগিতা ছাড়া নিজে নিজে তো আর দাবা শেখা যায় না। সবাই একা একা শিখতে পারে না, যেমন আমি শিখছি।
সমকাল : অনেক দেশে ঘুরেছেন। বড় বড় দাবাড়ুদের সঙ্গে খেলেছেন। অন্যান্য দেশের চেয়ে আমরা কোথায় পিছিয়ে?
ফাহাদ : যাদের সঙ্গে আমি মিশেছি, তাতে আমার মনে হয়েছে আমাদের মেন্টালিটি সম্পূর্ণ আলাদা। দাবায় ওদের তুলনায় আমাদের স্বপ্ন অনেক ছোট। দাবায় লক্ষ্য বড় থাকতে হবে। শুধু গ্র্যান্ডমাস্টারই শেষ না, এর পরও অনেক লেভেল আছে। সেই লেভেলে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগোতে হবে। ওদের অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে। তারা অনেক বেশি টুর্নামেন্ট খেলতে পারে। নিজেদের দেশে তাদের অনেক টুর্নামেন্ট হয়, কোচও আছে। তাদের সঙ্গে আমাদের আকাশ-পাতাল পার্থক্য।
সমকাল : পার্থক্যটা কমানোর জন্য করণীয় কী?
ফাহাদ : প্রথমত আপনাকে একজন মডেল প্লেয়ার বানাতে হবে। ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান মডেল খেলোয়াড়। দাবায় রোল প্লেয়ার বানাতে হবে, যাতে তাঁকে দেখে আরও অনেকে অনুপ্রাণিত হয়। গ্রামগঞ্জে, সব জায়গায় ক্রিকেট খেলে শুধু সাকিবের মতো রোল মডেল আছেন বলে। এই খেলার পরিচিতি বাড়াতে হবে। এর পর বিদেশিদের সঙ্গে মিল রেখে যতটুকু সম্ভব, টুর্নামেন্ট করা। পাশের দেশ ভারতকে চাইলে অনুসরণ করা যায়। তাদের দেশে ৯০ জনের মতো গ্র্যান্ডমাস্টার আছেন। তাদের কাছ থেকে আমরা অনেক আইডিয়া নিতে পারি। ভারত যদি পারে, তাহলে বাংলাদেশ কেন পারবে না?
সমকাল : ভারতে ৯০ জন গ্র্যান্ডমাস্টার অথচ উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার বাংলাদেশের। এর পরও বাংলাদেশের গ্র্যান্ডমাস্টার মাত্র পাঁচজন…
ফাহাদ : বিশ্বনাথন আনন্দকে তো সবাই চিনেন। তিনি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ভারতের অন্যতম সেরা একজন খেলোয়াড়। আনন্দ না থাকলে ভারতে কিন্তু এত গ্র্যান্ডমাস্টার হতো না। আনন্দ কিন্তু রোল মডেল হতে পারছেন। বাংলাদেশে দাবায় রোল মডেল নেই। কাকে অনুসরণ করবে। পর্তুগাল এত ফুটবল খেলে রোনালদোর জন্য। মেসি-ম্যারাডোনার জন্য আর্জেন্টাইনরা ফুটবল খেলে। দাবাতে আনন্দের মতো রোল মডেল হয়েছে ভারতে, যে কারণে তাদের এত গ্র্যান্ডমাস্টার। বাংলাদেশেও আশা করি ভবিষ্যতে আরও অনেক জিএম আসবে।
সমকাল : দাবায় এমন কোনো চাল দিয়েছেন, যেটা আপনার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ছিল…
ফাহাদ : এ রকম অনেক আছে। ২০২৩ সালে উজবেকিস্তানে প্রেসিডেন্স কাপে একজন হাই রেটিংয়ের গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে আমি একটা ভালো চাল দিয়ে পয়েন্ট নিয়েছিলাম। সেই ম্যাচটি আমি জিতেছিলাম। ভিয়েতনামে এই টুর্নামেন্টে শেষ ম্যাচটি আমি যেভাবে জিতেছি, জিএম নর্মের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
সমকাল : দেশের পতাকা নিয়ে সামনে কী চ্যালেঞ্জ আছে?
ফাহাদ : আমার প্রথম টার্গেট এই বছরের মধ্যে গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়া। তার পর নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোব। বাংলাদেশি প্লেয়ারদের মধ্যে যেন সর্বোচ্চ লেভেলে যেতে পারি, সেই চেষ্টা করব। বাংলাদেশে কেউ ২৬০০ রেটিং টাচ করতে পারেনি। এটা টাচ করার চেষ্টা করব। যদি ২৬০০ টাচ করতে পারি, তাহলে আরও বড় লেভেলে যাওয়ার চেষ্টা করব।
- বিষয় :
- সাক্ষাৎকার
- দাবা
- ফাহাদ রহমান