টেস্টে তেত্রিশও পেলেন না শান্ত

কোচ হাথুরুর সঙ্গে অধিনায়ক শান্ত। ছবি: ফাইল
সঞ্জয় সাহা পিয়াল
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১০:২২ | আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১৩:৫৪
আইপিএল ক্রিকেট বিনোদনের সঙ্গে যে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে বাণিজ্যিক স্বার্থ, সে কথা ছেলেবুড়ো সবার কাছেই ‘ওপেন সিক্রেট’। লোকে পারফরম্যান্সের সঙ্গে রান কিংবা উইকেটের ভগ্নাংশ করে ব্যবসায়িক এক ধরনের লাভ-ক্ষতির হিসাব নিজেরাই খুঁজে নেন। এই যেমন অসি পেসার মিচেল স্টার্ক। সর্বোচ্চ ২৪ কোটি রুপিতে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে তিন ম্যাচ খেলে ২ উইকেট নিয়েছেন। ফেসবুকের দেয়ালে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে শাহরুখ খানদের এই লগ্নি ঘিরে।
এই আসরে তিনি যদি ২৫ উইকেটও নেন, তাহলে তার একেকটির মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ১ কোটি রুপি! অথচ চেন্নাই সুপার কিংসের ২ কোটি রুপির মুস্তাফিজ এরই মধ্যে ৭ উইকেট তুলে নিয়েছেন। বাজার দরে যাকে বলে সস্তায় ভালো জিনিস কিনেছে ধোনির দল!
ক্রিকেটে ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেল আজ প্রায় দেড় যুগের পুরোনো। তাই এখানে ক্রিকেটাররাও বুঝে নিয়েছেন যে মালিকের পয়সা উসুলেই তাঁর স্বার্থকতা। সেখানে সমর্থকরাও স্টেকহোল্ডার, তাদের টিকিটের বিনিয়োগের কিঞ্চিত ক্রিকেটারও পান। তাই ভালো-মন্দ বলার অধিকারটা তাঁর অর্জিত। তবে এসব কোনো ঝামেলা বা চাপ নেই জাতীয় দলে। সেখানে বোর্ডের মাসিক বেতনের সঙ্গে নির্ধারিত ম্যাচ ফি একেবারে গ্যারান্টি।
এই শ্রীলঙ্কা সিরিজই যদি ধরা যায়, তাহলে তিন ম্যাচের টি-২০, ওয়ানডের পর দুটি টেস্ট। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তরই কেবল দলের হয়ে সব ম্যাচ খেলার সৌভাগ্য হয়েছে। তাতে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এক মাসে (৪ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল) প্রায় ৫০ লাখ টাকা জমা পড়েছে। একটি আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ খেললে দেওয়া হয় আড়াই লাখ টাকা, ওয়ানডেতে ৪ লাখ আর একেকটি টেস্টের ম্যাচ ফি ৮ লাখ করে। এর সঙ্গে বিসিবির বেতন প্রায় ৮ লাখ আর অধিনায়ক ভাতা ১ লাখ।
ওয়ানডেতে একটি ম্যাচে সেরাসহ সিরিজ সেরার পুরস্কারের অর্থও যোগ হয়েছে। যেহেতু এটা কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট নয়, তাই সমর্থকরাও এই ভগ্নাংশে যায়নি। কেউ প্রশ্ন তোলেনি, দুই টেস্টের চার ইনিংসে শান্ত যে ৩২ রান করলেন, তাতে একেকটি রানের মুল্য দাঁড়িয়েছে কত? ৫০ হাজার টাকা মাত্র!
তবে আইসিসির অনুদান আর বিসিবির রাজস্ব থেকে টাকাটা আসে বলে এখানে জবাবদিহিতা গণপর্যায়ে কখনোই আসে না। বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে বহু বছর পর নতুন প্রজন্মের কেউ প্রতিনিধিত্ব করছেন। বর্তমানে তিন ফরম্যাটেই অধিনায়ক তিনি। আর তাঁর প্রথম পরীক্ষায় ছিল ঘরের মাঠের এই শ্রীলঙ্কা সিরিজ। যেখানে টি২০ সিরিজ ২-১ হারলেও ওয়ানডেতে বদলা নিয়েছেন ২-১ এ জেতে। যেখানে অধিনায়ক নিজে পারফর্ম করে সামনে থেকে দলকে অনুপ্রাণিত করেছেন। ভীষণ প্রশংসিত হয়েছেন শান্ত, যা তাঁর প্রাপ্য। ১৬৩ রান তাঁর তিন ওয়ানডেতে, যার মধ্যে ১২২ রানের অপরাজিত একটা ইনিংস জ্বলজ্বল করছে।
তাঁর এই পারফরম্যান্স স্বস্তি দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টকেও। আনুগত্য কায়েম করার যে সংস্কৃতি নিয়ে বিব্রত থাকতে হতো বোর্ড কর্তাদের, তারা অন্তত শান্তর এই শিষ্টরুপে মুগ্ধ। তা ছাড়া তিনি ক্যামেরার সামনে বলেনও ভালো। সামনে থাকা মুখগুলোকে সহজেই আপন করে নিতে পারেন। আর আপনজনের দোষত্রুটি কখনও কখনও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতেই দেখা হয়।
সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে শান্ত যে সময়ে যেভাবে উইকেট দিয়ে এসেছিলেন, সে একই ভুল করেছিলেন লিটন দাসও। পুরো ম্যাচটিকে বিপদে ফেলে দিয়েছিলেন তারা। সিলেটে ৫ আর ৬ রান করার পর চট্টগ্রামে এসে ১ আর ২০। ফ্লিক করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন, পরের ইনিংসে বোল্ড। টেস্ট সিরিজে ডাহা ফেল করেছেন শান্ত।
শুধু তাঁর রান কম করার কারণের জন্য নয়, ওয়ানডে স্টাইলে শট খেলার প্রবণতা, যেভাবে অন্যের কথায় বিশ্বাস রেখে রিভিউ নিয়েছিলেন, যেভাবে স্লিপে দাঁড়িয়ে ক্যাচ মিস করেছিলেন, যেভাবে চট্টগ্রাম টেস্টের শুরুর দিকেই আস্থা হারিয়ে বোলার পরিবর্তন করেছিলেন– সব কিছু মিলিয়েই টেস্টের জন্য তাঁকে অপ্রস্তুত মনে হয়েছে। ওয়ানডে সিরিজের মাঝে জনপ্রিয় কিছু সিদ্বান্ত নিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেল লিপু। টেস্টের ছয়টি ইনিংসে অধিনায়ক শান্তর মোট রান ৫৬। মিলিয়ে দেখার অপেক্ষা গাজী আশরাফ হোসেন কি বার্তা দেন লাল বলে অফফর্মে থাকা শান্তকে।