ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সমকালকে জেসি

‘ম্যাচে কেউ অসম্মান করেনি’

‘ম্যাচে কেউ অসম্মান করেনি’

ছবি- সংগৃহীত

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৪ | ০৯:৪৩

বাংলাদেশ নারী দল যেদিন সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হলো, সেদিন দেশের গণমাধ্যম থেকে শুরু করে ফেসবুকে খেলোয়াড়রা প্রশংসায় ভেসেছেন। ওই যে জয়া চাকমা; দেশের ফুটবলে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী রেফারি; তাঁর উত্থানেও খুশির বান ডেকেছিল। তিনি ফুটবলের রেফারি; নারী বা পুরুষের নন। জয়া ফুটবলের সর্বজনীন রেফারি হিসেবে সম্মানও পান খেলোয়াড়দের কাছ থেকে। আসলে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নারীদের উত্থানকে এই সময়ে দেখা হয় নারীজাগরণ হিসেবে। মুশফিকুর রহিমও নারী ফুটবলারদের প্রশংসা করে অফিসিয়াল ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। সেই ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধেই কিনা অভিযোগ– তারা নারী আম্পায়ার সাথীরা জাকির জেসিকে অনফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে মেনে নিতে চাননি। 

বিসিবির আম্পায়ার বিভাগের চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান মিঠু যখন মিডিয়াকে জানান, জেসিকে নিয়ে আপত্তি ছিল ক্লাব কর্মকর্তাদের; তখনই মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে হইচই পড়ে যায়। যদিও মোহামেডান স্পোর্টিং ও প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের কর্মকর্তারা মিঠুর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। 

জেসিও জানান, খেলোয়াড় বা ক্লাব অফিসিয়ালদের দিক থেকে ম্যাচের আগে-পরে কোনো ধরনের আপত্তির মুখে পড়তে হয়নি তাঁকে। প্রশ্ন হলো– কিছু না হয়ে থাকলে বিদ্যুৎগতিতে বিষয়টি ছড়াল কেন? ক্রিকেটারদের কাছে এমন প্রশ্ন করা হলে একজন বলেন, প্রিমিয়ার লিগে অনভিজ্ঞ জেসিকে ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে দেখে অবাকই হয়েছিলেন সবাই। সেটাকেই ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়ে থাকতে পারে।

জেসির আগে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দেশি বা বিদেশি কোনো নারী আম্পায়ারকে অনফিল্ডে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এর আগে মোহামেডান স্পোর্টিং ও শাইনপুকুর স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে তিনিই ছিলেন প্রথম রিজার্ভ আম্পায়ার। ইফতেখার মিঠু জানান, জেসিকে টি২০ বিশ্বকাপের উপযোগী করে গড়ে তুলতে প্রিমিয়ার লিগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ‘জেসি আইসিসির ডেভেলপমেন্ট আম্পায়ার। অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ নারী দলের সিরিজেও তিনি আম্পায়ার ছিলেন। বাংলাদেশ-ভারত সিরিজেও অনফিল্ড আম্পায়ার। কোনো দিক দিয়েই তাঁকে অনভিজ্ঞ বলা যাবে না। লিগে আগে কখনও ম্যাচ পরিচালনা করেননি বলে করবে না, তা তো না। আমি শুনেছি মোহামেডানের টিটু (তারিকুল ইসলাম) হৈহুল্লোড় করেছেন। অনভিজ্ঞ জেসিকে কেন নিয়োগ দেওয়া হলো তা নিয়ে।’ 

মিঠুর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, দুই ক্লাবের পক্ষ থেকে লিখিত বা মৌখিক কোনো অভিযোগ তারা পেয়েছেন কিনা। বিসিবি আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান জানান, অফিসিয়ালি কোনো অভিযোগ বা আপত্তি তারা পাননি। জেসিও বোর্ডের কাছে আপত্তিকর কিছু বলেননি। 

গতকাল বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের আগে দুপুর ১২টায় ফোনে জেসির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে তাঁর অভিষেক এবং বিতর্কের বিষয় নিয়ে। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে কোনো সমস্যা মনে হয়নি, কেউ অসম্মানও করেননি। বরং খেলা শেষে খেলোয়াড়রা হাত মিলিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এ ছাড়া আগে-পরে কিছু হয়ে থাকলে আমার জানা নেই।’

মোহামেডান অধিনায়ক ইমরুল কায়েসের কাছে জেসির আম্পায়ারিং ও ম্যাচ-পরবর্তী বিতর্ক নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়দের দিক থেকে কোনো কথা হয়নি। এমনকি অধিনায়কের রিপোর্টেও আমি বা প্রতিপক্ষ দল আম্পায়ার জেসিকে নিয়ে কিছু লেখেনি। দুটি আউট নিয়ে ঝামেলা ছিল। একটি আমাদের দলের এলবিডব্লিউ। অন্যটি মুশফিকের ক্যাচ। আমি আমাদের একজনকে আউট দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, ভুল হয়েছে। বিষয়টি ওখানেই শেষ। আর মুশফিকের আউটের পর ১৩ মিনিট খেলা বন্ধ ছিল, সেখানেও জেসির কোনো দোষ নেই। কারণ তিনি ফিল্ডারের কাছে জানতে চেয়েছেন ক্যাচ ঠিক ছিল কিনা। রনি বলেছে, বাউন্ডারি রোপে পা লাগেনি। সেভাবে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। মাঠে বা মাঠের বাইরে আম্পায়ার জেসিকে নিয়ে কারও কোনো সমস্যা হয়েছে বলে তো দেখিনি। এর পরও কেন এত কিছু হচ্ছে বলতে পারব না।’

আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান মিঠুর অভিযোগের প্রসঙ্গ তুলে মোহামেডানের প্রধান সমন্বয়কারী (চিফ কো-অর্ডিনেটর) তারিকুল ইসলাম টিটুর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি ড্রেসিংরুমে ছিলাম, আমি বা দলের কেউ জেসিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য বা প্রতিবাদ করেনি। হ্যাঁ, আমরা চিন্তিত ছিলাম বড় ম্যাচের চাপ জেসি নিতে পারবে কিনা। কিন্তু তিনি তো ভালোভাবেই ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। আমাদের ম্যানেজার সাজ্জাদ আহমেদ শিপন তো বিসিবির নারী বিভাগের প্রধান নির্বাচক। তিনি ড্রেসিংরুমে থাকতে কোনো মন্তব্য হওয়ার সুযোগ নেই।’ 

প্রাইম ব্যাংকের ম্যানেজার শিকদার আবুল হাসেম কংকন বলেন, ‘বিসিবির কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যায় না প্রাইম ব্যাংক। অফিস থেকে আমাদের সে রকম নির্দেশনা দেওয়া আছে। যেটা মিডিয়াতে এসেছে, আমি কথার কথা বলেছিলাম।’

উভয় ক্লাবের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ বা আপত্তির বিষয়টি অস্বীকার করা হলেও দু’দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনফিল্ড আম্পায়ার জেসিকে নিয়ে চাপা অস্বস্তি ছিল। কারণ হিসেবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোহামেডানের একজন ক্রিকেটার বলেন, ‘লিগে সব সময় পুরুষ আম্পায়ার থাকেন। আমরা পুরুষ আম্পায়ারের অধীনে খেলে অভ্যস্ত। কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আপত্তি থাকলে পুরুষ আম্পায়ারের সঙ্গে যেভাবে কথা বলা যায়, সেটা তো নারী আম্পায়ারের সঙ্গে সম্ভব না। আমরা পুরুষ আম্পায়ারকে ঘিরে ধরতে পারি, নারী আম্পায়ারের ক্ষেত্রে তা করা যাবে না। স্লেজিং বা মন্তব্য করতে গেলেও সুশীল মন্তব্য করতে হবে! আসল কথা হলো, প্রথম দিকে যে কোনো কিছুই মানিয়ে নিতে একটু-আধটু সমস্যা হয়। কিছুদিন গেলে দেখবেন জড়তা বলে কিছু নেই।’

মালয়েশিয়ায় নারীদের আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা আগেই ছিল জেসির। আইসিসির ডেভেলপমেন্ট আম্পায়ার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর দেশে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া টি২০ সিরিজের তিন ম্যাচে তিন ধরনের দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম ম্যাচে ছিলেন রিজার্ভ আম্পায়ার। দ্বিতীয় ম্যাচে টিভি আম্পায়ার আর শেষ ম্যাচে ফিল্ড আম্পায়ার। এ দু’দলের এক দিনের সিরিজেও রিজার্ভ আম্পায়ার ছিলেন শেষ ম্যাচে। অস্ট্রেলিয়ার মতো পেশাদার ক্রিকেট দল যেখানে আপত্তি জানায়নি, সেখানে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আপত্তি তোলাকে বাঁকা চোখে দেখা স্বাভাবিক বলে মনে করেন বিসিবি কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন

×