বাশারের সাক্ষাৎকার
‘বাকি নারী দলগুলো অনেক এগিয়ে গেছে’

ছবি- সংগৃহীত
সেকান্দার আলী
প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪ | ১২:২০
অস্ট্রেলিয়ার কাছে বাজেভাবে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সদ্য সমাপ্ত টি২০ সিরিজেও ৫-০তে হেরেছে। নারী ক্রিকেটে হঠাৎ ছন্দপতন দুশ্চিন্তায় ফেলেছে কর্মকর্তাদের। বিশেষ করে টি২০ বিশ্বকাপের আগে দলে ব্যাপক পরিবর্তন পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন হাবিবুল বাশার। বিসিবি নারী বিভাগের প্রধানের বিশ্বাস, বিশ্বকাপের আগে ১৫ থেকে ২০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দেওয়া গেলে ভালো করার সুযোগ থাকবে। নারী ক্রিকেট নিয়ে হাবিবুল বাশারের বিশ্লেষণ শুনেছেন সেকান্দার আলী
প্রশ্ন: ভারতকে হারিয়ে টি২০ এশিয়া কাপ জিতেছিল নারী দল। সেই দলের এভাবে ছন্দপতনের কারণ কী?
হাবিবুল বাশার: আমি দুইটি সিরিজ দেখলাম। আগের ও বর্তমান দল নিয়ে স্টাডি করে যেটা বুঝতে পারলাম, দলটা একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই দলে ছয় থেকে সাতজন কম বয়সী খেলোয়াড় আছে। তারা ভালো খেলোয়াড়, কিন্তু বড় দলের বিপক্ষে চাপ নেওয়ার মতো মানসিক সক্ষমতা তৈরি হয়নি। চাপ নেওয়ার সক্ষমতা গড়ে ওঠেনি। যেটার প্রভাব পড়ছে মাঠের পারফরম্যান্সে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ কি অন্য দল থেকে খুব বেশি পিছিয়ে?
হাবিবুল বাশার: গত দুই বছরে আমরা আগের জায়গায় থেকে গেছি, কিন্তু অন্য দেশগুলো এগিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, অন্য দেশ নারী ক্রিকেটকে এখন আলাদা করে দেখে না। তারা ক্রিকেটার হিসেবে মূল্যায়ন করে। ফিটনেস ও স্কিলের দিক দিয়ে অনেক উঁচুতে তারা। শারীরিক সক্ষমতায় এগিয়ে। তাই বাকি দেশগুলো যেভাবে এগিয়েছে, আমরা সেভাবে পারিনি। এক বছর আগের ভারত দল থেকে এই দলটি অনেক বেশি পারদর্শী। অস্ট্রেলিয়া সবসময়ই ভালো ছিল। আমরা পিছিয়ে গেছি বলব না, যেখানে ছিলাম সেখানেই আছি। বাকি দলগুলো অনেক এগিয়ে গেছে। দুইটি সিরিজ দেখে আমার তাই মনে হয়েছে। যদিও দুটি সিরিজই ছিল বড় দলের বিপক্ষে। বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে অস্ট্রেলিয়া এক নম্বর, ভারত তিন নম্বরে। সেখানে আমরা আট বা ৯ নম্বরে।
প্রশ্ন: আপনি পরিবর্তনকালের কথা বলছেন, বেশি পরিবর্তন করা কি ক্ষতি বয়ে এনেছে?
হাবিবুল বাশার: গত এক বছর ধরে এই দলটিই হয়তো খেলছে। অনভিজ্ঞতার কারণে টপঅর্ডার ভালো করতে পারেনি। আমি যেটা বুঝেছি– আমাদের এশিয়া কাপ বা বিশ্বকাপে ভালো করতে হলে অনেক উন্নতি করতে হবে। বিশেষ করে ফিটনেস লেভেলে উন্নতি করা অপরিহার্য। মানসিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এককথায়, সব দিক দিয়ে আমাদের অনেক উন্নতি করতে হবে। সমস্যা হয়ে গেছে আমাদের হাতে খুব বেশি বিকল্প নেই। বিকল্প না থাকায় খেলোয়াড় পরিবর্তনের সুযোগ থাকে না।
প্রশ্ন: এত কম সময়ে কি অত বেশি উন্নতি করা সম্ভব?
হাবিবুল বাশার: না, সম্ভব না। আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী ছয় মাস, এক বছর লাগবে। দল যেটা আছে সেটাই। এখানে হাত দেওয়ার মতো কিছু নেই। যেটা চেষ্টা করব, এক বছরে গুছিয়ে নেওয়া। বিশ্বকাপের আগে যত বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা যায়। অন্তত ১৫ থেকে ২০টি ম্যাচ খেলার পরিকল্পনা করছি। এশিয়া কাপ আছে, থাইল্যান্ডের সঙ্গে আলোচনা আছে। এ ছাড়া আরেকটি দলের সঙ্গে সিরিজ খেলার পরিকল্পনা আছে। সময়মতো মিলে গেলে ভালো হবে। এনসিএল টি২০ সংস্করণে হবে। আশা করছি, বিশ্বকাপের আগে পর্যাপ্ত টি২০ খেলার সুযোগ পাবে মেয়েরা।
প্রশ্ন: ফিটনেস নিয়ে কোনো প্রোগ্রাম?
হাবিবুল বাশার: ট্রেনারের সঙ্গে বসেছিলাম। তিনি একটা গাইডলাইন তৈরি করেছেন। এই প্রোগ্রাম সবাইকে অনুসরণ করতে হবে। মেয়েরা আগের থেকে অনেক সচেতন। প্রিমিয়ার লিগের খেলা আছে। লিগের খেলার সময় আমাদের ট্রেনার থাকছেন। লিগের পর পরই এশিয়া কাপ। এই সময়টুকুতে যেন ফিটনেসের কাজ করতে পারে।
প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয় সিনিয়র ক্রিকেটারদের একসঙ্গে বাদ দেওয়া ঠিক হয়নি?
হাবিবুল বাশার: আমি নির্বাচকদের সঙ্গে বসব। তাদের নিশ্চয়ই পরিকল্পনা আছে। দেখি তাদের পরিকল্পনা কী। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, সিনিয়র-জুনিয়রের মিশ্রণে দল হলে ভালো। মিশ্রণ থাকা দলগুলোই সবসময় ভালো করে।
প্রশ্ন: মেয়েদের সুযোগ-সুবিধার ব্যাপারে কী ভাবছেন? বোর্ডের দিক থেকে কতটা সাপোর্ট পাবেন?
হাবিবুল বাশার: খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়মিত করা; বয়সভিত্তিক খেলা, এনসিএল ও বিপিএল সময়মতো করা। আমাদের দেশের বড় সমস্যা জাতীয় দলের বাইরের ক্রিকেটাররা অনুশীলন করতে পারে না। একটা ছেলে যত সহজে কোনো একাডেমিতে গিয়ে অনুশীলন করতে পারে, মেয়ে পারে না। জেলায় বিসিবির কোচ আছেন। সেখানে মেয়েদের জন্য একটা আলাদা সেশন রাখার ব্যবস্থা করা গেলে অনেক মেয়ে পাওয়া যাবে। সপ্তাহে তিন দিন অন্তত মেয়েদের অনুশীলনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। তাহলে খেলোয়াড় পাওয়া যাবে।
প্রশ্ন: এই কয়েক মাসে আপনি কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন?
হাবিবুল বাশার: আমি চেষ্টা করছি, স্কুলে স্কুলে মেয়েদের মধ্যে নারী ক্রিকেট সম্পর্কে একটা ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে। জাতীয় দলের মেয়েদের স্কুলে নিয়ে যাচ্ছি। তাদের দেখে স্কুলের মেয়েরা বেশ খুশি। খুলনাতে প্রথমে নিয়ে গেছি। এবার সিলেটে তিনটি স্কুলে নিয়ে গেছি। আমাদের এই উদ্যোগকে আইসিসি খুব প্রশংসা করেছে। অন্য দেশকে আইসিসি এই মডেলটা পাঠিয়েছে। আশা করি, নারী ক্রিকেটে ভালো কিছু করতে পারব। দুই বছর পর ভালো জায়গায় দেখতে পাবেন।
- বিষয় :
- সাক্ষাৎকার
- হাবিবুল বাশার
- নারী ক্রিকেট