ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

গার্দিওলা কি ফার্গির চেয়েও ভালো!

গার্দিওলা কি ফার্গির চেয়েও ভালো!

প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা হাতে পেপ গার্দিওলা। ছবি: টুইটার

নাজমুল হক নোবেল

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৪ | ১২:১৬

২০১৬ সালের আগস্টে পেপ গার্দিওলা ম্যানচেস্টার সিটির দায়িত্ব নেওয়ার আগে স্কাই স্পোর্টসে কাতালান এ কোচ সম্পর্কে নিজের মতামত দিয়েছিলেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। স্কটিশ এ কিংবদন্তির শঙ্কা ছিল, ইংল্যান্ডে এসে কিছুটা ভড়কে যেতে পারেন গার্দিওলা। তিনি কেমন কোচ সেটা ফার্গুসন বেশ ভালোভাবেই জানতেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দুটি ফাইনালে গার্দিওলার বার্সার কাছে বিধ্বস্ত হয়েছিল ফার্গির ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। 

তার পরও ইংল্যান্ডে গার্দিওলার সফলতা নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন ম্যানইউ কিংবদন্তি। আট বছর পর সেই গার্দিওলা ইতিহাস গড়েছেন ইংল্যান্ডে। টানা চারবার প্রিমিয়ার লিগে জিতে অ্যালেক্স ফার্গুসনকেই পেছনে ফেলে দিয়েছেন। এমনকি ফুটবল খেলাটার ইতিহাসের সেরা কোচদের তালিকায়ও নিজের নাম তুলে ফেলেছেন ৫৩ বছর বয়সী স্প্যানিশ এ কোচ।

মজার বিষয় হলো, সেদিন স্কাই স্পোর্টসে গার্দিওলার নাম বলতে গিয়েও কিছুটা ভুল করেছিলেন ফার্গুসন। পেপে সম্বোধন করে ইংল্যান্ডে তাঁর সফল হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, ‘প্রশ্নাতীতভাবে পেপের দুর্দান্ত কাজের নীতি রয়েছে। তাঁর অসাধারণ কোচিং সামর্থ্য রয়েছে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহই নেই। তবে বার্সেলোনায় তিনি যা করেছেন, এখানেও তেমন কিছু করাটা মনে হয় বেশ কঠিন হবে। পেপের জন্য কাজটা এত সহজ নাও হতে পারে। ইংলিশ ফুটবল এত সহজ নয়। ইংল্যান্ডে আসা প্রতিটি বিদেশি কোচ আপনাকে এ কথা বলবে। পেপে এখানে লিগ জেতার বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারবেন না। এখানে যে কোনো দল যে কোনো দলকে হারিয়ে দিতে পারে। এটাই আমাদের লিগের সৌন্দর্য।’ 

ফার্গির অভিমত ইংল্যান্ডে গার্দিওলার অভিষেক মৌসুমের জন্য ঠিকই ছিল। প্রথম বছর লিগে তাঁর দল তৃতীয় হয়েছিল, অন্য কোনো ট্রফিও জিততে পারেনি। তবে পরের মৌসুমেই ফার্গিকে ভুল প্রমাণ করে দেন গার্দিওলা। একের পর এক ট্রফি জিতে ইংলিশ ফুটবলকে জলের মতো সহজ বানিয়ে ফেলেন তিনি। গত ৭ বছরে ৬টি লিগ জিতেছেন তিনি। যার মধ্যে এবার টানা চতুর্থ লিগ শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়েছেন। ইংলিশ ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এর আগে কোনো দল টানা চার শিরোপা জিততে পারেনি।

এর পরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, গার্দিওলা কি ফার্গুসনের চেয়েও ভালো? প্রশ্নটা হয়তো অনেকের কাছেই অস্বস্তিকর হতে পারে। আধুনিক ফুটবলের সেরা কোচ ফার্গুসনকে ছাপিয়ে যাওয়া তো চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু গার্দিওলার সফলতা ও ফুটবল দর্শন দেখলে না মেনে উপায় নেই।

গত বছর ট্রেবল জিতে ফার্গির রেকর্ড স্পর্শ করেন গার্দিওলা। এবার টানা চার লিগ শিরোপা জিতে স্কটিশ কিংবদন্তিকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। গার্দিওলার আরেকটি গুণ হলো, শিরোপা লড়াইয়ের নিয়ন্ত্রণ একবার তাঁর হাতে চলে এলে, সেটা কোনোভাবেই হাতছাড়া করেন না। ইউরোপের তিনটি লিগে মোট ১৫ বছর কোচিং করিয়ে তিনি ১২ বার লিগ জিতেছেন। এ পরিসংখ্যানের ধারেকাছে কেউ নেই। 

ফার্গুসন ম্যানইউকে ২১ মৌসুম কোচিং করিয়ে ১৩ বার লিগ জিতিয়েছেন। ট্রফি জেতার পরিসংখ্যানেও এগিয়ে গার্দিওলা। ফার্গুসন তাঁর ৩৪ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে মোট ৪৮টি বড় ট্রফি জিতেছেন। আর গার্দিওলা ১৫ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে ৩৮ ট্রফি জিতে ফেলেছেন। ২৫ মে এফএ কাপের ফাইনালে জিততে পারলে সেটা ৩৯ হয়ে যাবে। 

২০০৮-০৯ মৌসুমে বার্সেলোনায় কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন তিনি। ৪ বছরে বার্সার হয়ে জেতেন ১৪ ট্রফি। বায়ার্ন মিউনিখে তিন বছর ছিলেন। সেখানে প্রতি মৌসুমে লিগ শিরোপাসহ ৭টি ট্রফি জিতেছেন। সিটিতে আট মৌসুমে জিতেছেন এখন পর্যন্ত ১৭ ট্রফি।

গার্দিওলার শ্রেষ্ঠত্বে সার্টিফিকেট দিয়েছেন গত আট বছরে তাঁর সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ইয়ুর্গেন ক্লপ। লিভারপুলের সদ্য বিদায়ী এ কোচ গত শুক্রবার গার্দিওলাকে ‘বিশ্বসেরা কোচ’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, সিটির ডাগআউটে অন্য কোনো কোচ থাকলে টানা চার শিরোপা জেতা সম্ভব হতো না। গত রোববার লিগ জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক বিষয়টি সামনে আনতেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন গার্দিওলা, ‘আমি তাঁকে অনেক মিস করব। ইয়ুর্গেন আমার জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে গেছেন। তিনি আমাকে কোচ হিসেবে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছেন।’ 

আগামী মৌসুমে চুক্তি শেষে সিটি ছাড়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন গার্দিওলা, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, আমি যতটা না থেকে যাওয়ার কাছাকাছি, তার চেয়ে বেশি চলে যাওয়ার কাছাকাছি। ক্লাবের সঙ্গে কথা হয়েছে। এখন আমি থেকে যাচ্ছি।’ সব পাওয়া হয়ে যাওয়ার পর বার্সা ছেড়েছিলেন তিনি। সিটির হয়েও সব জেতা শেষ তাঁর। তাই হয়তো আগামী মৌসুম শেষে নতুন কোনো মিশনে বেরিয়ে পড়বেন।

আরও পড়ুন

×