ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

এ মণিহার কিংসেরই সাজে

এ মণিহার কিংসেরই সাজে

ছবি- সংগৃহীত

সাখাওয়াত হোসেন জয়, ময়মনসিংহ থেকে

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৪ | ০৯:১৯

রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘এ মণিহার আমায় নাহি সাজে।’ কিন্তু বসুন্ধরা কিংস বুক ফুলিয়ে গর্ব করে বলতে পারে, এ মণিহার কিংসের জন্যই সাজে। ঠিক তাই! এই মৌসুমে দেশের ফুটবলে কিংসের আরেক দফা দাপটই দেখল সবাই। স্বাধীনতা কাপ, এর পর প্রিমিয়ার লিগ, সর্বশেষ বুধবার ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। আসলেই তো, এত এত অর্জনের মণিহার তাদেরই মানায়। তারাই ফুটবলের ত্রিরত্ন পাওয়ার দাবিদার।

গতকাল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে‌ও ফুটবলের টানে, ফুটবলের প্রেমে ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে হাজির প্রায় ৭ হাজার দর্শক। জ্যৈষ্ঠের তাপদাহ থেকে বাঁচতে অনেককে দেখা গেছে ছাতা ব্যবহার করতে। দক্ষিণ পাশের গ্যালারি মোহামেডান আর উত্তর পাশের গ্যালারি বসুন্ধরা কিংসের দখলে। ফুটবল যে হারিয়ে যায়নি, ফুটবলের জনপ্রিয়তা যে কমেনি, ময়মনসিংহের গ্যালারির স্রোতেই তা ফুটে উঠেছে। বুধবার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনালে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ‌ও বসুন্ধরা কিংসের মধ্যকার মাঠের লড়াইয়ের সঙ্গে গ্যালারিতে‌ও উত্তাপ ছড়িয়েছে। রেফারির সিদ্ধান্ত মানতে না পারা মোহামেডান সমর্থকরা গ্যালারি থেকে বোতল নিক্ষেপ করেছেন। খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মাঠ ছেড়ে চলে যান মোহামেডান খেলোয়াড়রা। মাইকিং করে দর্শকদের শান্ত থাকার অনুরোধ করে পুলিশ।

ঘটনাবহুল এই ফাইনালে প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে নতুন ইতিহাস গড়েছে বসুন্ধরা কিংস। মোহামেডানকে ২-১ গোলে হারিয়ে শুধু ফেডারেশন কাপের ট্রফিই জিতেনি, পেশাদার যুগে দ্বিতীয় ক্লাব হিসেবে ঘরোয়া ট্রেবল জয়ের কীর্তি গড়েছে অস্কার ব্রুজোনের দল। স্বাধীনতা কাপ, প্রিমিয়ার লিগের পর ফেডারেশন কাপের ট্রফি জেতা কিংস স্পর্শ করেছে ২০১২-১৩ মৌসুমে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের এক মৌসুমে তিনটি শিরোপা জয়ের কীর্তি। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা ১-১ গোলে ড্রয়ের পর অতিরিক্ত সময়ে জাহিদ হোসেনের গোলেই নতুন ইতিহাস গড়ে বসুন্ধরা।

ফেডারেশন কাপের ফাইনালে পাঁচ রেফারি পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে বাফুফেতে চিঠি দিয়েছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। তাদের সেই দাবি পুরোপুরি পূরণ না হলে‌ও ময়মনসিংহে বাঁশি বাজানোর দায়িত্ব পড়ে লিস্টের বাইরের রেফারি জসিম আক্তারের কাঁধে। যখনই রেফারি বাঁশি বাজিয়েছেন, তখনই প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে দু’দলের ফুটবলারদের। শৈল্পিক ফুটবলের পরিবর্তে শারীরিক খেলাটাই খেলেছে দু’দল। শুরুতে খেলায় ছিল না গতি। সময়ের সঙ্গে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে ‌ওঠে দু’দলের লড়াইটি। যে লড়াইয়ে বিরতির পর এগিয়ে যা‌ওয়ার উচ্ছ্বাসটি করে সাদা-কালো জার্সিধারীরা। ম্যাচের ৬৩ মিনিটে বদলি শাহরিয়ার ইমনের কাছ থেকে বল পান এমানুয়েল সানডে। বসুন্ধরা কিংসের সোহেল রানা আর ববুরবেককে কাটিয়ে বাঁ পায়ের যে বুলেট গতির শট নেন এমানুয়েল, তা বল চলে যায় কিংসের জালে। লিড নেওয়া মোহামেডান ব্যবধান আরও বাড়াতে পারত যদি সুলেমান দিয়াবাতে আর ইমন নিশ্চিত কয়েকটি মিস না করতেন। ব্যবধান বাড়াতে না পারলে‌ও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণটা ছিল মোহামেডানের হাতেই। তখনই সবাইকে হতভম্ব করে দেন কিংসের মিগুয়েইল ফেরেরা। ম্যাচের ৮৬ মিনিটে নিজেদের অর্ধ থেকে একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে পাঁচজনকে কাটিযে বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের নিখুঁত ফিনিশিংয়ে গোল করেন মিগুয়েইল।

নির্ধারিত ৯০ মিনিট পর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে দাপট দেখায় বসুন্ধরা। এর মধ্যে ১০৫ মিনিটে এগিয়ে যা‌ওয়ার আনন্দে মেতে ‌ওঠে কিংস শিবির। মিগুয়েইলের কর্নার থেকে লাফিয়ে ‌ওঠে বল ধরতে গিয়ে‌ও পারেননি মোহামেডান গোলরক্ষক সুজন। তাঁর হাত থেকে বল ফসকে গেলে বদলি খেলোয়াড় মোহাম্মদ জাহিদ হোসেনের শট চলে যায় জালে। রেফারি গোলের বাঁশি বাজালে কিংস শিবির ফেটে পড়ে উল্লাসে। দৌড়ে গিয়ে রেফারি জসিম আক্তারকে ঘিরে ধরেন মোহামেডানের খেলোয়াড়রা। তাদের দাবি, জাহিদ গোল করার আগেই গোলরক্ষককে ফাউল করেছেন বসুন্ধরার ফুটবলার। তবে মোহামেডানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঠে নামার জন্য ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীবকে নির্দেশ দেন।

বাকি সময়ে বদলায়নি স্কোরলাইন। স্বাধীনতা কাপের পর ফেডারেশন কাপে‌ও পিছিয়ে পড়ে মোহামেডানকে হারিয়ে শিরোপা জেতে কিংস। এই ট্রফিটা ট্রেবলের স্বপ্নপূরণ করেছে বলেই উদযাপনটা একটু বেশিই ছিল বিশ্বনাথ ঘোষ-মেহেদি হাসান শ্রাবণদের। ‘চ্যাম্পিয়ন’ লেখা জার্সি গায়ে জড়িয়ে পুরো মাঠ প্রদক্ষিণ করেন দলের ফুটবলাররা। দূর থেকে দাঁড়িয়ে মোহামেডান খেলোয়াড়রা শুধু আফসোসে পুড়েছেন।

আরও পড়ুন

×