ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সালাউদ্দিনের নাম ফিফার রিপোর্টে

সালাউদ্দিনের নাম ফিফার রিপোর্টে

বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। ছবি: ফাইল

ক্রীড়া প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৪ | ১১:২৭ | আপডেট: ২৫ মে ২০২৪ | ১৮:২৯

বাফুফেতে অনিয়মের দায় যে এড়াতে পারেননি আবদুস সালাম মুর্শেদী, তা ফিফার জরিমানাতেই স্পষ্ট। ত্রুটিপূর্ণ ক্রয় আদেশ এবং ভুয়া দলিল পরিবেশনের দায়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সিনিয়র সহসভাপতি এবং ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান মুর্শেদীকে ১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৩ লাখ) জরিমানা করেছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বৃহস্পতিবার ফিফার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংস্থাটির এথিকস কমিটির এডজুডিকেটরি চেম্বার মুর্শেদীর ৫২ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই রিপোর্টে শুধু তিনিই নন, বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের নামও এসেছে। ব্যক্তিগতভাবে কোনো অনিয়ম করেননি বলে দাবি সালাম মুর্শেদীর। বরং যারা বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি পেয়েছেন, তারা নাকি তাঁর ডিজিটাল স্বাক্ষর নকল করেছে।

২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল বাফুফের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে ফুটবলের সব কর্মকাণ্ড থেকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে ফিফা। ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ফিফা ফান্ডের অপব্যবহার, ক্রয়নীতি অনুসরণ না করাসহ নানা অভিযোগে সোহাগের দুর্নীতির আরও প্রমাণ পেয়েছে ফিফার এথিকস কমিটি। তাঁকে তিন বছরের নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে বাফুফের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেন এবং অপারেশন্স ম্যানেজার মিজানুর রহমানকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা এবং জরিমানা করা হয়।

বাফুফেতে চাকরি করা এসব কর্মকর্তা দোষী সাব্যস্ত হলেও ফিফার দেওয়া রিপোর্টে দেখা গেছে সালাম মুর্শেদীর সঙ্গে সালাউদ্দিনও জড়িত। যদিও দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানকে কোনো শাস্তি দেয়নি ফিফা। তবে সালাম মুর্শেদীর তদন্ত রিপোর্টের দুটি জায়গায় সালাউদ্দিনের নাম ছিল। পাঁচ নম্বর পাতায় ২৬ নম্বর পয়েন্টে ফিফার তদন্তকারী দল বাফুফের ভেন্ডরস নির্ধারণের ক্ষেত্রে চারজনের জড়িত থাকার কথা লিখেছে। সেখানে আবু হোসেন, আবু নাঈম সোহাগ, সালাম মুর্শেদীর সঙ্গে সালাউদ্দিনের নাম উল্লেখ করেছে তারা।

বাফুফের ত্রয়নীতি অনুসারে কোনো দ্রব্য বা সেবা ১ লাখ টাকার অধিকমূল্য হলে সেই দ্রব্য বা সেবা কিনতে তিনটি কোটেশন প্রয়োজন। ১০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে কোনো কিছু ক্রয়/সেবার ক্ষেত্রে টেন্ডার আহ্বান করে ফেডারেশন। সালাম মুর্শেদীর প্রতিবেদনে বেশ কিছু চেক এবং ডকুমেন্টস প্রকাশ করেছে ফিফা। ক্রয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে সালাউদ্দিন জড়িত না থাকলেও পেমেন্ট প্রদানে তাঁর অনুমোদন আবশ্যক। কোনো কিছুর মূল্য ১০ লাখের ঊর্ধ্বে হলে সেটার অনুমোদন করার এখতিয়ার একমাত্র বাফুফে সভাপতির।

তেমনি করে ২০২১ সালের ৩০ জুলাই স্পোর্টস লিংক, স্পোর্টস কর্নার এবং রবিন এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠানের যে কোটেশন দেওয়া হয়েছিল, সেই ডকুমেন্টসে গ্রাসরুট ম্যানেজার হাসান মাহমুদ, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আবু হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহাগ, ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারমান সালাম মুর্শেদীর সঙ্গে সই আছে সালাউদ্দিনের।

বাফুফেতে শাস্তি পাওয়াদের মধ্যে শুধু সালাম মুর্শেদী ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি। বাকি সবাই চাকরিজীবী। একজন নির্বাহী কমিটির নাম আসায় ফেডারেশনের মধ্যেই বিব্রত অনেকে। তবে নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করা মুর্শেদী দায় চাপিয়েছেন নিষিদ্ধ হওয়া ব্যক্তিদের কাঁধেই।

ফেডারেশনে তাঁর ডিজিটাল সই আছে, সেটা শাস্তি পাওয়ারা পেপারে বসিয়েছেন বলে গতকাল সমকালের কাছে বলেন তিনি, ‘প্রকিউরমেন্ট করেছেন যারা, তারা আমার স্বাক্ষর জাল করেছেন। এই জাল স্বাক্ষর করা ব্যক্তিদের ফিফা শাস্তি দিয়েছে, একই সঙ্গে বাফুফেও তাদের বরখাস্ত করেছে। মূলত আমি যেহেতু অথরিটির একটি পার্ট, তাই জরিমানা হয়েছে। আর রিপোর্টে কাজী সালাউদ্দিনের নামও আছে। যেহেতু ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আমি মূল দায়িত্বে আছি। পদবির কারণেই মূলত আমার নাম এসেছে।’

ফিফার এই জরিমানার বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ থাকলেও আপাততে সেই পথে না যাওয়ার ইঙ্গিত মুর্শেদীর, ‘নৈতিকতার দিক দিয়ে আপিল করা যায়। করলে আইনজীবী নিতে হবে। শুনানি হবে। তাদের অর্থ দিতে হবে। দেখা গেল ১০ হাজার ফ্রাঁ জরিমানা করেছে আপিল করলে চলে যাবে ২০ হাজার সুইস ফ্রাঁ। যে নিয়ম এবং সময় আছে, সেভাবে জরিমানাটা দিয়ে দেব।’

আরও পড়ুন

×