ঝুঁকি নিতে চান না কেউ

ছবি- ক্রিকইনফো
সেকান্দার আলী, দিল্লি থেকে
প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪ | ১০:১১
স্লো ও লো উইকেটে খেলতে খেলতে ক্রিকেটারদের চিন্তাধারাও কি নিম্নমুখী হয়ে গেছে? তাই যদি না হবে, তবে নাজমুল হোসেনদের চাওয়া বা চিন্তার গণ্ডি ছোট কেন? এই যে তাওহিদ হৃদয় ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে সাহস নিয়ে বলতে পারেননি ভারতের বিপক্ষে ‘ধামাকা’ ক্রিকেট খেলতে চান। ম্যাচ শেষে শান্ত যেমন হতাশ হয়ে বললেন, দেড়শ রানের দল তারা। জানা নেই, কীভাবে ১৮০ রান করতে হয়!
তবে কি বাংলাদেশ দলের বড় ইনিংস খেলতে না পারার কারণ মানসিকতা? বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিমও তাই মনে করেন। সাবেক প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বুঝতে পারেন না ব্যাটাররা কেন খোলস ছেড়ে বেরোতে পারেন না! এত বছরও কেন নিজস্ব স্টাইল দাঁড় করাতে পারেননি ক্রিকেটাররা, সে প্রশ্ন নান্নুর।
বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক টি২০তে ১৮০ রানকে পার স্কোর হিসেবে ধরা হয়। উইকেট মোটামুটি ভালো হলে ২০০ রান ছাড়িয়ে যাওয়ার রেকর্ডও ভূরিভূরি। আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসের মতো দলগুলোও ১৭০-১৮০ রানের ইনিংস খেলে নিয়মিত। বাংলাদেশ সেখানে ১৮ বছরেও নিয়মিত ১৮০ রান করা দল হয়ে উঠতে পারেনি। ১৭৭টি আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচে ২০০ ছাড়ানো ইনিংস মাত্র পাঁচটি। ১৮০ বা বেশি রানের মোট ইনিংস ১৬টি। এই বড় ইনিংসগুলো শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড, ওমান ও পিএনজির বিপক্ষে। ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিংয়ের বিপক্ষে তারা পারেন না।
বিসিবি পরিচালক ও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ নাজমুল আবেদীন ফাহিম মনে করেন ঝুঁকি নেওয়ার সাহস দেখাতে না পারায় দলের এই হাল, ‘আমরা কেউ কোথাও ঝুঁকি নিতে চাই না। আমরা ১০০তে ৫০ পেলে খুশি। যে ৫০ পায় সে প্রথম হয়। আমাদের মানদণ্ডটাকে ওই রকম করে ফেলেছি। কেউ ৭০, ৮০, ১০০ রান করতে থাকলে আমরা উন্নতি দেখতে পাব। এই ঝুঁকিটাই কেউ নিচ্ছে না। কেউ আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট খেলবে, সে চিন্তা করে না। সবাই লোকাল স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে। এর মধ্যেই থাকতে চায়। সেখানে কেউ প্রথম হয়, কেউ দ্বিতীয় হয়।’
যে ৯টি ইনিংস ১৭০ রানের ঘরে, সেখানেও প্রতিপক্ষ ভারত নেই। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৬৬ রান নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে। ২০১৯ সালে দিল্লিতে ভারতকে হারানো ম্যাচের স্কোর ছিল দেড়শর নিচে। রোহিত শর্মারা ১৪৮ রান করায় মাহমুদউল্লাহরা দেড়শ করার ঝুঁকি নিয়ে সফল হয়েছিলেন। অথচ এবার অভিজ্ঞতায় ঠাসা দল নিয়ে অনভিজ্ঞদের কাছে ১২৭ রানে অলআউট হন তারা।
এখান থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী– জানতে চাওয়া হলে মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ফোনে বলেন, ‘বেশি বেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলতে হবে। লম্বা এবং ঝোড়ো ইনিংস খেলার চেষ্টা করতে হবে। এজন্য ঘরোয়া ক্রিকেটে টি২০ ম্যাচ বাড়াতে হবে। জাতীয় লিগের টি২০ একাধিক ভেন্যুতে খেলতে হবে। সেটা করা গেলে কয়েক বছরের মধ্যে সুফল পাবে। বিপিএল দিয়ে এটা হবে না, কারণ ভেন্যু কম থাকে। ফলে উইকেটের মান ঠিক রাখা সম্ভব হয় না।’
ফাহিম মনে করেন বড় ইনিংস খেলতে হলে ঝুঁকি নেওয়ার বিকল্প নেই, ‘আমাদের দল হিসেবে ভালো করতে হলে কাউকে না কাউকে ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, ঝুঁকি নিতে হবে। এভাবে চিন্তা করতে হবে আমরা ১৭০-১৮০ রান করব, ২০০ রান করব; বিপক্ষ দলকে গুড়িয়ে দেব। এ ধরনের মানসিকতা দিয়ে কেউ শুরু করলে অন্যরাও বাধ্য হবে তাকে অনুসরণ করতে এবং তাল মেলাতে।’
এই মৌসুম থেকে ক্রিকেটারদের মানসিকতা এবং কন্ডিশন নিয়ে কাজ করতে চান ফাহিম, ‘আমার মনে হয়, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হওয়াটা জরুরি। ঝুঁকি নিয়ে খেলা এবং একে অপরকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার মানসিকতার যথেষ্ট অভাব আছে খেলার ভেতরে।’
- বিষয় :
- বাংলাদেশ-ভারত
- টি-টোয়েন্টি সিরিজ