ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

স্বপ্নের পারফরম্যান্স: তিলক ভার্মার উত্থানের গল্প

স্বপ্নের পারফরম্যান্স: তিলক ভার্মার উত্থানের গল্প

ছবি- ক্রিকইনফো

তরিকুল ইসলাম রাজন

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪ | ১৮:০৯ | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪ | ১৪:৫৩

ক্রিকেটীয় ইতিহাসে এমন অনেক গল্প রয়েছে যেখানে প্রতিভা আর পরিশ্রমের মিশেলে গড়ে উঠেছে সাফল্যের সিঁড়ি। ঠিক তেমনই এক গল্প তিলক ভার্মার। জোহার্নেসবার্গের বাইশ গজে গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে তিলক দেখিয়ে দিলেন, কীভাবে স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করা যায়। সঞ্জু স্যামসনের (৫৬ বলে ১০৯) সঙ্গে ২১০ রানের জুটি গড়েন তিলক, যেখানে ৪৭ বলে ১২০ রানের দাপুটে ইনিংস খেলেন তিনি। তিলক-সঞ্জ্যুর এই জুটি আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ।

শৈশবের স্বপ্ন এবং তিলকের উত্থান: ২০০২ সালের ৮ নভেম্বর জন্ম নেওয়া তিলক ভার্মা হায়দরাবাদের এক সাধারণ পরিবারে বড় হয়েছেন। বাবা নম্বূরি নাগারাজু পেশায় একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, আর মা গায়ত্রীদেবী একজন গৃহবধূ। মধ্যবিত্ত সংসারের টানাটানির মধ্যেও তিলকের ক্রিকেটপ্রেমের প্রতি বাবা-মায়ের কোনো আপত্তি ছিল না। বরং বাবার কথায়, ছোট থেকেই তিলকের জীবনে ব্যাট-বল ছাড়া আর কিছু ছিল না। এমনকি ঘুমের সময়ও তার বালিশের পাশে থাকত প্রিয় ব্যাট।

তিলকের প্রতিভা প্রথম নজরে আনেন সালাম বায়িশ, তার ছোটবেলার কোচ। কোচ হিসেবে সালাম স্যার শুধু তার খেলার দিকেই নজর দেননি, তিলকের পরিবারের আর্থিক সমস্যাতেও পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। খাবার থেকে শুরু করে ক্রিকেট সরঞ্জাম- সবকিছুই দেখভাল করতেন তিনি। তার অকুণ্ঠ সমর্থন তিলককে স্বপ্ন দেখতে এবং তা পূরণ করতে সাহস জুগিয়েছে।

আইপিএল থেকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে উত্তরণ: তিলকের বড় ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পথে সবচেয়ে বড় মোড় ছিল আইপিএল। ২০২২ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স তাকে ১.৭ কোটি টাকায় দলে নেয়। সেখান থেকেই শুরু হয় জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার লড়াই। মুম্বাইয়ের হয়ে ২০২৩ মৌসুমে ১১ ম্যাচ খেলে ৩৪৩ রান সংগ্রহ করে নির্বাচকদের নজরে আসেন তিলক। এরপর ২০২৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার।  

সেঞ্চুরিয়ানের পর জোহার্নেসবার্গে তিলকের শাসন: দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে তিলক দেখালেন তার আসল সামর্থ্য। ম্যাচের শুরুতেই ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ যখন ধাক্কা খেয়েছে, তখন ক্রিজে নেমে ধীরে সুস্থে ইনিংস গড়ে তোলেন তিলক। প্রথমে পরিস্থিতি বুঝে খেললেও পরে ঝোড়ো শুরু করেন তিনি। সেদিন ১৯১ স্ট্রাইক রেটে ৫৬ বলে ১০৭ রান তোলেন তিলক। পরের ম্যাচ জোহার্নেসবার্গে তো আরও বাজিমাত করলেন হায়দরাবাদের এই ক্রিকেটার। সঞ্জু স্যামসনের সঙ্গে গড়েন ২১০ রানের রেকর্ড জুটি, যেখানে অসাধারণ স্ট্রোক প্লে এবং নান্দনিক ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী দেখিয়ে ৪৭ বলে ১২০ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তার ইনিংসে ছিল ৯টি চার এবং ১০টি ছক্কার মার।

গতকাল ম্যাচসেরা ও সিরিজসেরা হয়ে নিজের সাফল্যের কারণ জানাতে গিয়ে তিলক বলেন, ‘গত বছর এখানে খেলার সময় আমি প্রথম বলেই আউট হয়েছিলাম। এই ইনিংসটি দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি শুধু নিজের প্রতি কন্ট্রোল রেখেছিলাম এবং নিজের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম, পাশাপাশি মূল বিষয়গুলিতে মনোযোগ দিয়েছিলাম। আমি শান্ত ছিলাম এবং শুধু মৌলিক বিষয়গুলি মেনে চলার চেষ্টা করছিলাম। আসলে এটি এক অবিশ্বাস্য অনুভূতি। আমি কখনও ভাবিনি যে আমি দুটি শতরান করতে পারব - তাও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে। আমি ঈশ্বর এবং আমার অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’

আরও পড়ুন

×