ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

‘এক অধিনায়ক’ এখন কোথাও নেই

স্ট্রেইট ড্রাইভ

‘এক অধিনায়ক’ এখন কোথাও নেই

কলম্বো টেস্টে আউট হয়ে ফেরার পথে নাজমুল শান্ত। ছবি: এএফপি

সঞ্জয় সাহা পিয়াল

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫ | ১৪:০২ | আপডেট: ২৯ জুন ২০২৫ | ১৫:১২

অভিমানের মেঘ জমতে জমতে যে আষাঢ়ের আকাশ হয়ে আছে, তা বোঝা গিয়েছিল গল টেস্টের পরপরই। কলম্বো টেস্টের আগের দিন সাংবাদিক সম্মেলনে গুঞ্জনটা চাপা দিয়ে রেখেছিলেন মাত্র, টেস্টটি শেষ হতেই বজ্রসহ বৃষ্টি নাজমুল হোসেন শান্তর। ‘আই হেভ সামথিং টু টেল...; বলে চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাওয়া সাংবাদিকদের সামনে সংযত ও আত্মমগ্ন অধিনায়ক বলতে থাকলেন। ‘এটা ব্যক্তিগত কোনো কিছু নয়। পুরোপুরি দলের ভালোর জন্যই আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই ড্রেসিংরুমে কয়েক বছর ধরে, লম্বা সময় ধরে আমার থাকার সুযোগ হয়েছে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত যে তিন জন অধিনায়ক দলের জন্য সমস্যা হতে পারে। দলের ভালোর জন্য এখান থেকে সরে আসছি।’ 

সাকিব-উত্তর ক্রিকেট সাম্রাজ্যে তিন ফরম্যাটে অধিনায়কত্বের যে মুকুট পরেছিলেন বিসিবির বিশ্বাসের ওপর ভর করে, সেটা নিজেই খুলে রাখলেন ভারী মনে করে! একটুও কি ভাবলেন না মেঘের আড়ালে নীল আকাশের কথা। তিনিই তো নেতৃত্ব নিয়ে পাকিস্তানে দুটি টেস্ট জিতে সূর্যের হাসি দেখিয়েছিলেন, তাঁর হাতেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রের চাবি দেওয়া হয়েছিল। শুধু ওয়ানডে ফরম্যাটের নেতৃত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্যই কি এত তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে? তাও আবার শ্রীলঙ্কায় সিরিজ চলার মাঝে? সামনে ওয়ানডে সিরিজ। এটা কি পেশাদারিত্বের সঙ্গে যায়?

অবশ্য পেশাদারিত্বের ব্যাপারটি দুই পক্ষের মধ্যেই থাকতে হয়। সম্পর্কের ভিতই হলো বিশ্বাস। যেদিন তাঁকে না জানিয়ে ওয়ানডে ফরম্যাটে মেহেদী হাসান মিরাজকে অধিনায়কত্ব করা হলো, সেদিনই বিশ্বাসের জায়গাটি টালমাটাল হয়ে সম্পর্কের ভিত নড়ে যায়। টেস্টে ভালো কিছু করে ‘ছেড়ে দেওয়ার’ মোক্ষম জবাবটাই হয়তো খুঁজছিলেন শান্ত। গল তাঁকে সেই সুযোগ করে দেয়, কিন্তু কলম্বো? যেখানে গতকাল লঙ্কান অধিনায়ককে সাংবাদিক সম্মেলনে তাদের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্টের হিসাব নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে দেখা যায়, সেদিন কিনা শান্তর ‘তিন অধিনায়ক’ তত্ত্বের বিরোধিতায় চাপা পড়ে যায় ইনিংস হারের ব্যর্থতা! 

তিন ফরম্যাটে একাধিক অধিনায়ক
দেশ            টেস্ট                   ওয়ানডে              টি ১০
ভারত        শুভমান গিল     রোহিত শর্মা         সূর্যকুমার যাদব
পাকিস্তান   শান মাসুদ         রিজওয়ান           সালমান আগা
শ্রীলঙ্কা     ধনাঞ্জয়া         চারিথা আসালাঙ্কা      চারিথা আসালাঙ্কা
আফগানিস্তান     হাসমতউল্লাহ     হাসমতউল্লাহ   রশিদ খান
ইংল্যান্ড     বেন স্টোকস      হ্যারি ব্রুক             হ্যারি ব্রুক
নিউজল্যান্ড     টম লাথাম     মিচেল স্ট্যান্টনার   মিচেল স্ট্যান্টনার
অস্ট্রেলিয়া     প্যাট কামিন্স     প্যাট কামিন্স       মিচেল মার্শ
দক্ষিণ আফ্রিকা      টেম্বা বাভুমা     টেম্বা বাভুমা     এইডেন মার্করাম
আয়ারল্যান্ড     আন্দ্রে বালবিমি     পল স্টার্লিং     পল স্টার্লিং 

শান্ত বলেছেন, তিনি দলের ভালোর জন্যই এমনটি করেছেন, কিন্তু এটা কী ব্যক্তিসংঘাত নয়? তাঁর জায়গায় অন্য কাউকে নেতৃত্ব দেওয়ায় তিনি যে প্রতিক্রিয়া দেখালেন, তাতে সেই অধিনায়কের মনে কি পাল্টা প্রতিক্রিয়া হবে না? তিনি তো টেস্টে সাকিবের সহ-অধিনায়ক ছিলেন না, তাঁকে যখন সরাসরি অধিনায়ক করা হলো, তখন কি তিনি বিসিবির কাছে প্রক্রিয়া মেনে হয়েছে কিনা জানতে চেয়েছিলেন? কিংবা সেই সহ-অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলেছিলেন? 

শান্ত কি জানেন না এই মুহূর্তে টেস্টখেলুড়ে কোনো দেশেই ‘এক অধিনায়ক’ নেই। ভারত ও পাকিস্তানে তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়ক। এটা মেনেই যেন তাদের ড্রেসিংরুমের পরিবেশ ফুল বিছানো নয়। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এমনকি আয়ারল্যান্ডের মতো দলেও সাদা এবং লাল বলের জন্য আলাদা অধিনায়ক।

এতে পরিশ্রমের পাশাপাশি নির্দিষ্ট ফরম্যাটে গভীর মনোনিবেশের ব্যাপারটিও জড়িয়ে থাকে। তা ছাড়া একক নেতৃত্বের জন্য যে ধরনের লিডারশিপ দরকার মাঠ ও মাঠের বাইরে, তেমন ব্যক্তিত্বের অভাবের কারণেও অনেক সময় দলগুলো ভিন্ন ফরম্যাটে ভিন্ন অধিনায়ক বেছে নেয়। শান্ত নিজেই জানিয়েছিলেন টি২০ অধিনায়কত্ব তিনি ছেড়ে দিয়েছিলেন ব্যাটিংয়ে আরও মনোনিবেশ করার জন্য। তাহলে দুই অধিনায়কে নিশ্চয়ই আপত্তি ছিল না তাঁর, সমস্যাটা কি শুধু তিন অধিনায়কে? 

বিসিবি এবং বাংলাদেশ দল একটা পরিবারের মতোই, সেখানে অভিমান-অভিযোগ থাকতে পারে, দলের স্বার্থে রাগ-অনুরাগ অনেক কিছুরই বিসর্জন দিতে হয়। চ্যালেঞ্জ নিতে হয় সত্যিকারের স্পোর্টস ম্যানের মতোই। সব ছেড়েছুড়ে নীরব থাকা ভালো কি, তাতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষত তৈরি হয়– একটা সময় রক্তক্ষরণ হয় অবিরত।

আরও পড়ুন

×