ঢাকা বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫

কলম্বোয় জয়ের খোঁজে মিরাজরা

কলম্বোয় জয়ের খোঁজে মিরাজরা

ওয়ানডে ট্রফি হাতে দুই অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা ও মেহেদী হাসান মিরাজ -এএফপি

সেকান্দার আলী, কলম্বো (শ্রীলঙ্কা) থেকে

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫ | ০১:১৫ | আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫ | ১১:৪৩

শ্রীলঙ্কান এক সাংবাদিক মেহেদী হাসান মিরাজকে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বাউন্সার দেওয়ার চেষ্টা করেন। জানতে চান, ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের ৪ নম্বর দলের সঙ্গে ১০ নম্বর দলের লড়াই হবে কিনা? তিনি পাদটীকায় যুক্ত করেন, অবসর নেওয়া সিনিয়র ক্রিকেটারদের শূন্যতা কীভাবে পূরণ করবেন টাইগার অধিনায়ক? কলম্বোর ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষে যায় না এ রকম আরও অনেক তথ্যই মনে করিয়ে দেওয়া হলো।

কিন্তু মিরাজ কিছুতেই বিচলিত হলেন না। অকুতোভয় নাবিকের মতো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেন টাইগার দলপতি। এই দলটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে কিছুটা সময়ও চেয়ে নিলেন নতুন অধিনায়ক। তিনি হয়তো ভুলে গেছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউকে সময় দেয় না। শিশুর হোঁচট খেয়ে হাঁটা শেখার মতো ক্রিকেট দলকেও হার-জিতের মধ্য দিয়ে উন্নতির সোপান বেয়ে পায়ের নিচের মাটি শক্ত করতে হয়। বাংলাদেশ ওয়ানডে দল এখন সেই উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে এগোচ্ছে। ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ থেকে সংগ্রাম শুরু হলেও দুই বছর লাগিয়েও থিতু হতে পারেনি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হার নিয়ে হতাশায় ভুগতে হচ্ছে টাইগার বাহিনীকে। এতে র‌্যাঙ্কিংয়েও পতন ঘটেছে।

সাত নম্বর থেকে ১০ নম্বরে অবনমিত হতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এখান থেকে উত্তরণ ঘটানোই মিরাজের চ্যালেঞ্জ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ দিয়েই জয়ের পথে ফিরতে চান তিনি। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে আজ জয় লেখাতে চান মিরাজ।

বাংলাদেশ শেষ ওয়ানডে খেলেছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গেল মার্চে। তিন মাসের বেশি সময় ধরে ৫০ ওভারের আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলায় একটু হলেও মানসিকভাবে পিছিয়ে গেছে। ব্যাটিং-বোলিংয়ে মরচে ধরে থাকলে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে পেরে ওঠা কঠিন। এই শ্রীলঙ্কা আবার ভয়ংকর। ২০২৪ সাল থেকে দেশের মাটিতে ওয়ানডে সংস্করণে দারুণ ক্রিকেট খেলছে। প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ভারত, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে হারিয়েছে।

লঙ্কান দলপতি চারিথা আসালঙ্কা ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে জানান, রেকর্ডগুলো আরও সমৃদ্ধ করে নিতে চান দেশের মাটিতে। মিরাজের মতো তিনিও জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করতে চান। আসলে লঙ্কান দলপতি নিজেদের সক্ষমতা মাথায় রেখেই প্রত্যাশার কথা বলেছেন। মিরাজের বক্তব্যে বাস্তবতার চেয়ে আবেগ বেশি ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। সিনিয়র ক্রিকেটারদের শূন্যস্থান পূরণে তরুণরা উন্নতি দেখাচ্ছে দাবি মিরাজের, ‘মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম ভাই অবসর নিয়েছেন। তারা লম্বা সময় দেশের হয়ে খেলেছেন। তাদের জায়গা রাতারাতি পূরণ হবে না। তবে তারা না থাকায় বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটার উঠে এসেছেন। আমরা যারা সাত-আট বছর ধরে খেলছি, সবার এখন সেরাটা দেওয়ার সময়। আমাদের বোলিং ভালো আছে। ব্যাটিংটা ঠিক মতো করতে পারলে জেতা সম্ভব।’

এই সিরিজ দিয়ে মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিমের জায়গা লিটন কুমার দাস ও মিরাজ নিজে পূরণ করতে চান। মিরাজ হয়তো মুশফিকের ভূমিকা নেবেন। লিটন খেলতে পারেন মাহমুদউল্লাহর জায়গায়। এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন মিরাজ, ‘মুশফিক ও রিয়াদ ভাই যে জায়গায় ব্যাট করতেন, সেখান থেকে গেম এগিয়ে নিতে হয়। সেদিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ-ছয় পজিশন। ওই জায়গায় কোনো জুনিয়র ক্রিকেটারকে দেওয়া ঠিক হবে না। লিটন আর আমি দায়িত্ব নিতে চাই।’

মিডলঅর্ডারে তারা দু’জন ব্যাট করলে ওপেনিংয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন পারভেজ হোসেন ইমন ও নাঈম শেখ। তানজিদ হাসান তামিমের সঙ্গে ইমনকে খেলাতে পারেন কোচ। নাজমুল হোসেন শান্ত তিন নম্বর, আর চারে তাওহীদ হৃদয়। শুধু সাত নম্বর পজিশন নিয়ে ভাবতে হবে টিম ম্যানেজমেন্টকে। দিবা-রাত্রির ম্যাচ হওয়ায় সঠিক বোলার নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পেস ইউনিটে তাসকিন আহমেদের সঙ্গে বাকি দু’জনকে নিতে হবে ভেবেচিন্তে। মিরাজ জানান, ‘আমরা শ্রীলঙ্কায় টেস্ট সিরিজ খেলেছি। সাদা বলের কয়েকটি অনুশীলন সেশন করেছি। সেগুলো কাজে লাগিয়ে ভালো একটা শুরুর চেষ্টা করব। সিরিজ জিততে পারলে ভালো হবে। কারণ ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করার জন্য এখন থেকে প্রতিটি সিরিজি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটি বেঁধে দেওয়া সময়ে র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আট দলে থাকতে হবে। আশা করি, আমরা সেটা  পারব। কাল থেকে আমরা সে মিশন শুরু হচ্ছে।’

তবে বাংলাদেশের জন্য একটা দুঃসংবাদ হচ্ছে, জ্বরের কারণে রিশাদ হোসেন আজকের ম্যাচে অনিশ্চিত।

আরও পড়ুন

×