একটি গোল এবং জীবনভর বিতর্ক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২০ | ২১:১৩
হঠাৎ করে নিভে গেল কিংবদন্তি ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাডোনার জীবন প্রদীপ। ফুটবল বিশ্ব স্তব্ধ হয়ে গেছে তার মৃত্যুতে। শুধু ক্রীড়াঙ্গনে নয় সারা বিশ্বে চলছে শোক। ম্যারাডোনার মৃত্যুর পরও উঠে আসছে ১৯৮৬ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তার সেই বহুল চর্চিত গোলের প্রসঙ্গ।
হ্যান্ড অব গড! ডেটলাইন মেক্সিকো সিটির আজটেকা স্টেডিয়াম। ২২ জুন ১৯৮৬। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের ম্যাচটির প্রথমার্ধ ছিল গোল শূন্য। প্রথম অর্ধে চেষ্টা করেও ইংল্যান্ডের রক্ষণ ভাঙতে পারেনি ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই তাই ইংল্যান্ডকে চেপে ধরে আর্জেন্টিনা। মাত্র ৬ মিনিটের মাথাতেই ওই গোল।
বক্স থেকে বল পাওয়ার পর ম্যারাডোনা বাঁ পায়ে সেটিকে পাস করে দেন টিমমেট জোর্গে ভালদানোকে। ভালদানো ইংলিশ ডিফেন্ডারদের কাটানোর চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু তিনি সুবিধা করে উঠতে পারেননি। ইংলিশ ডিফেন্ডার স্টিভ হজ বলটি ক্লিয়ার করেন। বলটি এর পর যখন পেনাল্টি বক্সের মধ্যে উড়ে আসে, তখন ইংল্যান্ডের গোলকিপার পিটার শিল্টন ডান হাত তুলে লাফিয়ে বলটি ফিস্ট করতে যান। ম্যারাডোনাও অন্য দিকে বল তাড়া করে ছুটতে ছুটতে লাফান হেড করার জন্য। সে সময় তার বাঁ হাতটি মাথার খুব কাছেই ছিল। ম্যারাডোনা গোল করার সময় আগে তার বাঁ হাতটি বলে লাগে। তার পর বল মাথা ছুঁয়ে গোলে ঢুকেছিল। কিন্তু ঘটনাটি এত দ্রুত ঘটে যে তা তিউনিশিয়ান রেফারি আলি বেন্নাসিউরের নজর এড়িয়ে যায়। ম্যারাডোনাও এক বার রেফারি এবং লাইন্সম্যানের দিকে তাকিয়ে পুরোদস্তুর উল্লাস শুরু করেন।
এর কিছু পরেই আসে চোখ ধাঁধাঁনো সেই গোল। যাকে সর্বকালের অন্যতম সেরা গোল হিসেবে ধরা হয়। যেখানে সতীর্থ হেক্টর এনরিকের থেকে বল পেয়ে আউটফিল্ডে ইংল্যান্ডের ৪ জন ফুটবলারকে কাটিয়ে গোল করেন ম্যারাডোনা। আর্জেন্টিনা ম্যাচটি ২-১ জিতেছিল। এই বিশ্বকাপেই ফাইনালে পশ্চিম জার্মানিকে ২-১ হারিয়ে আর্জেন্টিনা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়। কিন্তু, সব নজর গিয়ে পড়ে প্রথম গোলটি নিয়ে। ম্যাচের পর ওই গোলটি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ম্যারাডোনা বলেন, ‘গোলটা এসেছিল আমার হেড এবং ঈশ্বরের হাত থেকে।’
মেক্সিকোর এক ফটোগ্রাফার আলেসান্দ্রো ওদেদা কার্বাজাল একটি ছবি তোলেন ওই গোলের। যে ছবিতে পরবর্তী কালে দেখা যায় ম্যারাডোনার হাত বলে লেগেছিল। এ নিয়ে সারা জীবন ধরেই ম্যারাডোনাকে নানা সময় প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে।
২০০৮ সালে ইংল্যান্ডের একটি পত্রিকা যেমন ম্যারাডোনাকে এক সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে প্রশ্ন করেছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘যদি ফিরে গিয়ে ইতিহাস বদলাতে পারি, তা হলে সেটা করব।’ তার পরই অবশ্য যোগ করেন, ‘কিন্তু একটা গোল সবসময়ই গোল। সে বার আর্জেন্টিনা বিশ্বজয়ী হয়েছিল। আমি সেরা প্লেয়ার হয়েছিলাম। সেই ইতিহাস তো বদলানো যাবে না। তাই আমিও জীবনে এগিয়ে যেতে চাই।’
তবে ওই গোলের জন্য শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চাননি তিনি। বলেছিলেন, ‘এ নিয়ে ক্ষমা চাইব না। আমি বলতে চেয়েছি সে দিনের ইতিহাস বদলানো যাবে না। তাই আমার ক্ষমা চাওয়ারও প্রশ্ন ওঠে না। সে দিন স্টেডিয়ামে ১ লক্ষ দর্শক ছিলেন। ২২ জন ফুটবলার ছিল। দু’জন লাইন্সম্যান ও এক জন রেফারি ছিলেন। তখন ইংল্যান্ডের ফুটবোলাররা প্রশ্ন তোলেনি কেন? তা ছাড়া জীবনে কখনওই ক্ষমা চাইনি। আর এত দিন বাদে ক্ষমা চাওয়ারও অর্থ হয় না।’
সম্প্রতি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধেও তিনি সেই ‘হ্যান্ড অব গড’-এর হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। ম্যারাডোনার জীবনে ‘হ্যান্ড অব গড’ সত্যিই এক রূপকথা। মৃত্যুর পরও যে রূপকথা থেকে যাবে আরও বহু বছর। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
- বিষয় :
- ফুটবল
- দিয়াগো ম্যারাডোনা
- বিশ্বকাপ ফুটবল