নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ দশ
তামিমদের ছয় ক্রিকেটার দিচ্ছে নিউজিল্যান্ড

ছবি: ফাইল
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২১ | ০১:৪১
ছেলেদের আমি বলি, 'নিউজিল্যান্ডে আমরা দু'বার স্বাধীনতা উদযাপন করব, একটি ১০ মার্চ দুপুর ১২টায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টার থেকে বের হয়ে। আর ২৬ মার্চ দেশের স্বাধীনতা দিবসে।' নিউজিল্যান্ড সফরে থাকা জাতীয় দলের হেড অব ডেলিগেট জালাল ইউনুস মজা করে কথাগুলো বললেও এটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ১০ মার্চ ক্রাইস্টচার্চে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষ হলে স্বাধীনতার আনন্দই পাবেন তামিমরা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দেশে সিরিজ খেলার সময় যেটা পাননি তারা। কোয়ারেন্টাইন শেষ হলে বায়োসিকিউর বাবলে থাকতে হবে না বাংলাদেশ দলকে। দেশটির নাগরিকদের সঙ্গে মেলামেশার স্বাধীনতাও দেওয়া হবে। জালাল ইউনুস যেমন খুব উৎসাহ নিয়ে বললেন, 'হোটেল, রেস্তোরাঁয় যেতে বাধা থাকবে না। বাইরে বেরোতে মাস্ক পরতে হবে না। মুক্ত থেকে খেলতে পারবে ছেলেরা।'
ক্রাইস্টচার্চের কোয়ারিন্টিন শেষ হলে কুইন্স টাউনে প্রস্তুতি ক্যাম্প হবে বাংলাদেশের। সেখানে নিজেদের মধ্যে একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে তারা। খেলোয়াড় কম থাকায় দুটি দল বানাতে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের কাছে ছয়জন ক্রিকেটার চাওয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।
২০ জন ক্রিকেটারসহ ৩৬ জনের বহর নিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি ক্রাইস্টচার্চে পৌঁছেছে বাংলাদেশ দল। দেখতে দেখতে ১২ দিন হয়ে গেছে কোয়ারেন্টাইনে। আজ তেরোতম দিন পার করছে তারা। মোহাম্মদ মিঠুন যেমন জানালেন, নিউজিল্যান্ডের জল-হাওয়ার সঙ্গে নিজেদের বেশ মানিয়ে নিয়েছেন এ ক'দিনে। নিউজিল্যান্ডের কোয়ারেন্টাইন একটু অন্যরকম। ক্রাইস্টচার্চে সাতটি হোটেলকে সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে বানিয়েছে দেশটির সরকার। যেগুলোর পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে নিউজিল্যান্ডের সেনাবাহিনী।
বাংলাদেশ দল ক্রাইস্টচার্চে পৌঁছে প্রথম তিন দিন থেকেছে আইসোলেশনে। ওই তিন দিনে দু'বার কভিড টেস্টে নেগেটিভ হওয়ায় চতুর্থ দিন থেকে কিছু স্বাধীনতা দেওয়া হয়। নির্বাচক হাবিবুল বাশারের বর্ণনায় উঠে এসেছে সে অভিজ্ঞতা, 'তিন দিন ঘরের জানালা খুলতে দেওয়া হয়নি। আইসোলেশন শেষ হলে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে লনে এক ঘণ্টা করে মুক্ত হাওয়ায় ঘোরাঘুরির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই লনে হাঁটাহাঁটি করতে হয় প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের দুই মিটার দূরত্ব রেখে। নিয়ম ভাঙার কোনো সুযোগ নেই।'
অবশ্য সাত দিনের পর থেকে জীবন অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে টাইগারদের। অনুশীলনের জন্য ২০ ক্রিকেটারকে চারটি দলে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। 'পাঁচজন ক্রিকেটার ও দু'জন কোচ মিলে একটি দল। চারটি দলে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে ২০ জনকে। জিম ও মাঠ মিলে দিনে চার ঘণ্টা অনুশীলন করতে পারি। মাঠে দুই ঘণ্টা, বাকি দুই ঘণ্টা হোটেলের জিমে। সুযোগ-সুবিধা খুব ভালো।' এক নিঃশ্বাসে এই কথাগুলো বলে গেলেন মিঠুন।
প্রতিটি দলের জন্য ভিন্ন ভিন্ন রঙের কার্ড দেওয়া হয়েছে, যাতে করে এক দলের খেলোয়াড়রা অন্য দলে ভিড়ে যেতে না পারেন। হোটেলে চারটি জিম করা হয়েছে বাংলাদেশ দলের জন্য। হাবিবুল বাশার জানান, যে দলকে যে জিম দেওয়া হয়েছে শেষ দিন পর্যন্ত সেটাই থাকবে। মাঠের অনুশীলনেও একই নিয়ম। টাইগারদের প্রস্তুতির সুযোগ দেওয়া হয়েছে লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে। ভেন্যুতে পৌঁছানোর পর মাস্ক খুলে স্যানিটাইজ করে মাঠে প্রবেশ করতে হয় সাতজনকেই। হোটেলে ফেরার সময় দেওয়া হয় নতুন মাস্ক।
মিঠুন জানান, দেশ থেকে নেওয়া কোনো মাস্ক ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। নিউজিল্যান্ড কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের মাস্ক ব্যবহার করতে হয় সবাইকে। এত স্বাধীনতা থাকার পরও হোটেলে কেউ কারও ঘরে যেতে পারে না।
জালাল ইউনুস বলেন, 'কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে যে ১৪ দিন থাকব, কেউ কারও রুমে যেতে পারব না। রুম গোছানোর কাজও নিজেদেরই করতে হচ্ছে। তবে ভালো দিক হলো, ভালো খাবার পরিবেশন করছে হোটেল থেকে। ছয় রকমের মেন্যু থাকে। যে যার পছন্দের মেন্যু বলে দিলে দরজার সামনে বক্স পৌঁছে দেয়। এখন লন্ড্রিও নিচ্ছে। এদিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। সাতজনের গ্রুপ করে দেওয়ায় অনুশীলন ভালো হচ্ছে। সবাই বেশি সময় ধরে ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং করতে পারছে। ছেলেরা সবাই অনুশীলন নিয়ে খুশি।' ১০ মার্চ দুপুরে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার থেকে অন্য হোটেলে নেওয়া হবে টাইগারদের। সেদিন রাতের ফ্লাইটে দল পৌঁছে যাবে কুইন্স টাউনে।