ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

রেফারিরা এবার কার কাছে যাবেন

রেফারিরা এবার কার কাছে যাবেন

সাখাওয়াত হোসেন জয়

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২২:১০ | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২২:১০

ম্যাচ হারলে সব দোষ গিয়ে পড়ে রেফারিদের কাঁধে। ঘরোয়া ফুটবলে এটা যেন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি মৌসুমে চারপাশ থেকে সমালোচিত হচ্ছেন রেফারিরা। প্রিমিয়ার লিগে শেখ রাসেল ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে বাজে রেফারিংয়ের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। বাফুফের কাছে চিঠি পাঠানো সাইফ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছে। একটি ক্লাব থেকে রেফারির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠা নতুন কিছু নয়। কিন্তু ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হয়ে কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন স্বয়ং যখন রেফারিদের সমালোচনা করবেন, তখন ব্যাপারটা তো অবশ্যই বড় বিষয়।

ম্যাচপ্রতি প্রধান রেফারির সম্মানী ২৪০০ টাকা, সহকারী রেফারির ২২০০ টাকা

পৃথিবীর কোনো দেশের ফুটবলপ্রধান রেফারিদের নিয়ে সমালোচনা করেছেন, এমন নজির আছে বলে মনে হয় না। কারণ রেফারিরা তো ফুটবল ফেডারেশনের অধিভুক্ত। তাদের ভুলগুলো বরং মিডিয়ার আড়ালে রেখে রেফারিদের উৎসাহিত করার কথা। কিন্তু রোববার কমলাপুর স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের উদ্বোধন করতে গিয়ে সালাউদ্দিন হতাশা প্রকাশ করেছেন রেফারিং নিয়ে। 'সাইফ বাজে রেফারিংয়ের শিকার এবং বসুন্ধরার পক্ষে বাঁশি বাজিয়েছে'- সরাসরি এমন কথা বলে দিয়ে দেশের রেফারিংয়ের মান নিয়ে প্রশ্নটা সালাউদ্দিনই তুলেছেন। ক্লাবের পর বাফুফে সভাপতির সমালোচনা, তাহলে রেফারিরা এখন কোথায় যাবেন। চারদিক থেকে সমালোচনায় বিদ্ধ রেফারিরা একসময় এ পেশা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তাও করবেন। নতুনরাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন এ পেশা থেকে।

সামান্য সম্মানীও ঠিকমত পান না রেফারিরা, এক মৌসুমের টাকা পান পরের মৌসুমে

এবার রেফারিং নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে ১৩ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জে শেখ রাসেলের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে সাইফ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে লাথি মারার অভিযোগ নিয়ে। যদিও ডিসিপ্লিনারি কমিটি ভিডিওতে এর সত্যতা পায়নি। সেই ম্যাচের রেফারি বিটুরাজকে বহিস্কার করা হয়েছে। এরপর মোহামেডানের পক্ষে রেফারি বাঁশি বাজিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন সাইফের কর্মকর্তারা। বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিন সাইফের হয়ে রেফারির বিপক্ষে তার মন্তব্য করেছেন। মন্তব্যটা যখন খোদ প্রেসিডেন্ট করেছেন, তাই এ ব্যাপারে অনেকেই মুখ খুলতে চাইছেন না। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেফারি চারদিকের সমালোচনা প্রসঙ্গে বলেন, 'যে ঘটনাগুলো ঘটেছে আপনারা শুনেছেন, দেখেছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল বলা যাবে না। এটা করার সুযোগ নেই। মানুষ মাত্রই ভুল।' তাহলে রেফারির প্রতি নতুনরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন? এর উত্তরটা একটু অন্যভাবে দিলেন ওই রেফারি, 'রোড যদি কঠিন হয়, তখন চলাচলে অসুবিধা হয়। পথটা কঠিন হয়ে গেলে, তখন তো আর আসতে চাইবে না।'

এক কোটি টাকা বকেয়ার মধ্যে ৪৪ লাখ টাকা দিয়েছে ফেডারেশন

একজন ভালোমানের রেফারি বের করতে হলে অনেক সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেটা পাচ্ছেন না রেফারিরা। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ৩০-৪০ জন রেফারি খেলা পরিচালনা করেন। ম্যাচপ্রতি সম্মানী ২৪০০ টাকা, সহকারী রেফারির ২২০০ টাকা। এক মৌসুমের টাকা পান পরের মৌসুমে। তাও পুরোপুরি নয়। এক কোটি টাকার মতো বকেয়া ছিল। সেখান থেকে ৪৪ লাখ টাকা দিয়েছে ফেডারেশন। সুযোগ-সুবিধাও আন্তর্জাতিক মানের নয়। বকেয়া বাকি রাখার সঙ্গে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না দিয়ে তো রেফারিদের কাছ থেকে ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যায় না। তাই সবকিছু মিলিয়ে ভালো সুযোগ-সুবিধা দিতে পারলেই রেফারির মানটাও ভালো হবে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই রেফারি, 'রেফারিরা কিন্তু ভালো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। সম্মানীর সঙ্গে ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে মনোযোগ দেওয়া দরকার বেশি। ভালো সম্মানী, ভালো পরিবেশ থাকলে অবশ্যই সবাই রেফারি পেশার দিকে এগিয়ে আসবে।' 

পেশাদার লিগ কমিটির চেয়ারম্যান একসঙ্গে রেফারিজ কমিটিরও চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী। তার মতে, রেফারিদের উৎসাহ দিতে হবে, 'তারা যদি নিরুৎসাহিত হয়, তাহলে বাঁশি বাজাতে পারবে না। এই জন্য আমাদের রেফারিদের জন্য কোর্সের ব্যবস্থা করতে হবে।'

আরও পড়ুন

×