শেয়ারবাজার
পতনের ধারা গভীর হচ্ছে সূচক ৫ বছরে সর্বনিম্ন

প্রতীকী ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫ | ০৪:০২ | আপডেট: ২৯ মে ২০২৫ | ০৪:০২
পতনের ধারাতেই রয়েছে শেয়ারবাজার। টানা ষষ্ঠ দিনে গতকাল বুধবারও অধিকাংশ শেয়ার দর হারিয়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের ৭৩ শতাংশের দর পতন হয়েছে। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৬৩ পয়েন্ট হারিয়ে ৪৬১৫ পয়েন্টে নেমেছে। সূচকের এ অবস্থান করোনাকালে ফিরেছে, যা ২০২০ সালের ১০ আগস্টের পর বা গত পৌনে পাঁচ বছরের সর্বনিম্ন। গত ছয় কর্মদিবসে ডিএসইএক্স ১৮৬ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ কমেছে।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত সরকারের পতনের পর প্রথম চার কর্মদিবসে শেয়ারবাজার বেশ চাঙ্গা হয়েছিল। এর পর থেকে দর পতন চলছে। প্রতিদিনই শত শত বিনিয়োগকারী লোকসানে সব শেয়ার বেচে দিয়ে লোকসান আরও বড় হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। চলতি মাসে পৌনে তিন হাজার বিনিয়োগকারী বিও অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে বাজার ছেড়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের পুরো সময় বিবেচনায় সংখ্যাটি ৩২ হাজারের বেশি। এর বাইরে ৪৫ হাজারের বেশি বিও হিসাব পুরোপুরি শেয়ারশূন্য হয়েছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত বছরের ১২ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত ৩৯৭ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৭৪টির পতন হয়েছে। এর মধ্যে দর কমপক্ষে অর্ধেকে নেমেছে হয়েছে ৫০টির। ২০ শতাংশের বেশি দর পতন হয়েছে ৩০৫টির।
সরকার ব্যাংকার খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়। তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের দেড় মাস পর শেয়ারবাজার সংস্কারে সুপারিশ করার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। কিন্তু টাস্কফোর্স আট মাস পর আইপিও, মার্জিন ও মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালার কিছু সংশোধন প্রস্তাব ছাড়া কোনো প্রস্তাব দেয়নি।
জানতে চাইলে ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজারে আস্থার সংকট তীব্র। যারা বিনিয়োগ করতে এসেছিলেন, তাদের উপলব্ধি তারা ভুল করেছেন। সাইফুল ইসলাম সমকালকে আরও বলেন, ‘এই বুঝি পতন বন্ধ হলো’– এমন আশায় যারা শেয়ার কিনেছিলেন, অপেক্ষাকৃত কম লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন। যাদের লোকসান ৩০ থেকে ৮০ শতাংশ, তারা এ লোকসান নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে বাজারে আসাই বন্ধ করে দিয়েছেন। এ হতাশার শেষ কবে, তার উত্তর কারও কাছে নেই। ফলে ক্রেতা সংকট বাড়ছে।
ডিএসইতে লেনদেন দুইশ কোটির ঘরেই আটকে থাকছে। গতকাল কেনাবেচা হয় ২৬৫ কোটি টাকার শেয়ার, যা মঙ্গলবারের তুলনায় পৌনে আট কোটি টাকা কম। গতকাল লেনদেন শুরুর প্রথম ১৫ মিনিট শেষে ডিএসইএক্স সূচক ১৮ পয়েন্ট বেড়ে ৪৬৯৬ পয়েন্ট ছাড়ায়। দুপুর দেড়টার পর ওই অবস্থান থেকে ৯৬ পয়েন্ট হারিয়ে ৪৬০০ পয়েন্টের নিচে নামে। করোনা মহামারির সময় ২০২০ সালের ১০ আগস্টের পর এই প্রথম ৪৬০০ পয়েন্টের নিচে নেমেছিল।
গত মঙ্গলবার বিএসইসির কমিশন সভায় বিও হিসাবের নবায়ন ফি ১৫০ টাকায় নামিয়ে আনা, বার্জার পেইন্টসের রাইট শেয়ার বিক্রির অনুমোদনসহ চার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। গতকাল ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর সঙ্গে এক বৈঠকে ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, সরকার পুঁজিবাজার উন্নয়ন নিয়ে খুবই আন্তরিক। বিনিয়োগকারীদের হতাশ না হয়ে উৎসাহের সঙ্গে ভালো শেয়ারে নতুন বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। এর বাইরে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর ব্যবধান ১০ শতাংশ করা, ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীর জন্য মূলধনি মুনাফায় এবং নগদ লভ্যাংশ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত কর অব্যাহতি দিতে তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
- বিষয় :
- শেয়ারবাজার