ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

স্ক্রলে যখন বিরক্তি!

স্ক্রলে যখন বিরক্তি!

গ্রাফিকস: মো. মিলন

সাব্বিন হাসান

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩:৩২ | আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৬:৩০

ইনস্টা, রিলস ও ইউটিউব– সারাবিশ্বে ভিডিওর জনপ্রিয় তিনটি কনটেন্ট অ্যাপ। কয়েক সেকেন্ড থেকে ঘণ্টা ব্যাপ্তির ভিডিওর দর্শন মিলবে তিনটি মাধ্যমে। কিন্তু মাধ্যম তিনটি আবার বিভ্রান্তি, বিরক্তি ও বিকল্প সূত্র খোঁজার দিকে ধাবিত করছে প্রতিনিয়ত। গবেষণা বলছে, দর্শক এখন সোশ্যাল মিডিয়ার ‘বোরডম’ সমস্যায় ভুগছেন। লিখেছেন সাব্বিন হাসান   

রাত-দিন চলছে সোশ্যাল মিডিয়ার উন্মাদনা। মাঝেমধ্যে ভালো কনটেন্ট না থাকায় উদ্বেগে সৃষ্টি হয় বিরক্তি। 

খুঁজছেন, কিন্তু কোনোভাবেই ধরা দিচ্ছে না যথাযথ কনটেন্ট, যা সৃষ্টি করছে বোরডম। পরিত্রাণের পরামর্শে গবেষকরা দিয়েছেন বহুমাত্রিক তথ্য-উপাত্ত। স্বল্প সময়ের ভিডিও এখন তুমুল জনপ্রিয়। আর তা বিরক্তি ও সমালোচনার কারণও বটে, যা ইনস্টা বা রিলস উদ্ভাবনে নেপথ্য ছিল। অর্থাৎ ৩০ সেকেন্ডে বা তার চেয়ে কম সময়ে মূল বিষয়কে দর্শকের সামনে উপস্থাপনের চ্যালেঞ্জে আত্মপ্রকাশ করে।

রাত-দিনের বেশির ভাগ সময়জুড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরাঘুরি এখন অনেকেরই নিত্যদিনের অভ্যাসের অংশ। কখনও পোস্ট, কখনও রিলস; কিন্তু নজর কাড়ছে না কিছুই। উল্টো হচ্ছে বিরক্তির কারণ। সঙ্গে ইনস্টা বা ইউটিউব রিলস দেখতে ছোটাছুটি। কিছুতেই যেন পরিতৃপ্তি মিলছে না। যা বিভোর রাখছে, চিন্তার কারণ হচ্ছে; কিন্তু প্রকৃত খোঁজের মিলছে না সদুত্তর।

বিষয়টি নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করেছে টরন্টো স্কারবোরো ইউনিভার্সিটি। মূল লক্ষ্য, শর্ট ভিডিও বা রিলস কেন বিরক্তি ও উদ্বেগের কারণ হয়ে সামনে আসছে। পেছনের কারণটা হচ্ছে, ভালো কিছু খোঁজা, গবেষণা বা জ্ঞানতথ্যের খোঁজ। অর্থাৎ যে রিলস বা ভিডিও প্রতিনিয়তই দেখছেন, তা অপছন্দের কারণ হয়ে উঠছে। গবেষকরা বলেন, ভালো কিছুর খোঁজই উদ্ভাবনের নেপথ্যে কাজ করে আসছে। প্রকৃত জানার ইচ্ছা তীব্র না হলে সভ্যতার বিকাশ কখনোই সম্ভব ছিল না। অন্তহীন খোঁজ রীতিমতো ক্লান্ত করে তুলছে। শেষমেশ বিরক্ত হয়ে হুট করে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে প্রস্থান, যার সারসংক্ষেপ বোরডম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো গুজব ক্রমে প্রশ্নবিদ্ধ করছে সবকিছু। খুঁজছি, পাচ্ছি; কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছি না। কিংবা ছড়ানো ঘটনার পেছনে আবার প্রকৃত সোর্স হাতড়িয়ে বেড়ানো।

গবেষণাপত্র ‘ফাস্ট ফরোয়ার্ড টু বোরডম’ শিরোনামে প্রকাশ, দিনে দিনে সারাবিশ্বেই ডিজিটাল বোরডম বাড়ছে। মূল গবেষক ট্যাম বলেন, মনঃসংযোগের সঙ্গে ‘বোরডম’ সাংঘর্ষিক। কারণ মনোযোগ হারালেই কেবল তা বিরক্তির সৃষ্টি করে, অন্যথায় নয়।

ঠিক যা চাইছেন বা খুঁজছেন, সেটা পাচ্ছেন না বলেই যত বিপত্তি। উল্লিখিত কারণে ভিডিও ফরোয়ার্ড থেকে থাকছেন বিরত। কিন্তু চাইলেই সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সহজ নয়। অর্থাৎ কনটেন্ট হতে হবে প্রয়োজনীয় আর সুসম্পাদিত। 
মনের আর তথ্যের তৃপ্তি মিলবে– এমন কনটেন্টই সবার আগ্রহে জায়গা করে নেয়।

মিডিয়া কনজাম্পশন আর বোরডমের মধ্যকার সম্পর্ক কতটা ঠিক, তা-ই গবেষণায় স্থান পেয়েছে। গবেষকদের ভাষায়, নিরন্তর ভিডিওর খোঁজ মানে যা কিছু সামনে আসছে, তা মনের খোরাক মেটাতে ব্যর্থতার প্রমাণ দিচ্ছে। মূলত এটাই বোরডমকে সম্প্রসারিত করছে।

গবেষণায় অংশ নেওয়া বেশির ভাগ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, ভিডিও থেকে একের পর এক সুইচ করার অর্থ হলো বোরডম বাড়ছে। ভালো লাগছে না কিছুই। পজিটিভ কাজের হাজারো বাধা সামনে দৃশ্যমান হয়। গবেষণায় অংশ নেওয়া আন্ডারগ্র্যাজুয়েটরা বলছেন, অনেক ভিডিও কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিট দেখার পরই তা থেকে সরে (স্কিপ) যেতে হয়। কারণ, ১০ মিনিটের বেশি ভিডিওর সম্পাদনা দুর্বল হলে তা দর্শক হারিয়ে ফেলে। কনটেন্ট যদি তথ্যবহুল, দৃষ্টিনন্দন আর সুসম্পাদিত না হয়, তা দ্রুতই গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে বিরক্তির কারণ হয়।

শিক্ষার্থীরাই ভিডিও কনটেন্ট নিয়ে বেশি বিরক্ত হয়ে পড়ছেন বলে গবেষণায় প্রকাশ। অনেকে আবার কনটেন্ট অসম্পূর্ণতার কথা উল্লেখ করেছেন। সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে প্রথমে দু-তিনটি কনটেন্টে গিয়ে যদি হতাশ হতে হয়, তাহলেই ঘটে বিপত্তি। ঠিক ওখান থেকেই বিরক্তির উৎপত্তি। অনেকে আবার বলেছেন, সুইচ করে প্রাপ্ত ভিডিও প্রত্যাশা পূরণ করে।

কিন্তু বাস্তবে দেখা মিলছে উল্টো চিত্র। দ্রুত কনটেন্ট বদল হলে, কনটেন্ট যতই ভালো হোক না কেন, তা দর্শক টানতে ব্যর্থ হচ্ছে। উল্টো বাড়ছে বোরডম। ফলে সহজেই অনুমেয়, অনেকের মধ্যে কনটেন্ট থেকে দ্রুত বেরিয়ে (স্কিপ) যাওয়ার প্রবণতা বিদ্যমান।

সুতরাং একদিকে যেমন কনটেন্ট সার্চে বিষয়ভিত্তিক সুকৌশলী হতে হবে, অন্যদিকে কনটেন্ট নির্মাতাদের দায়িত্বও হবে যথার্থ কনটেন্ট তৈরিতে আরও মনোযোগ বাড়ানো। তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ার বিরক্তি থেকে দু’পক্ষই নিজেদের সমৃদ্ধ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে না। সারাবিশ্বে প্রতিমুহূর্তে তৈরি হচ্ছে হাজারো কনটেন্ট। কিন্তু সব কনটেন্ট কেন দর্শক টানতে সামর্থ্য হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখার সময় এখন।

আরও পড়ুন

×