সুন্দরবনে বাঘের পাশাপাশি হরিণ ও শুকরের শুমারি হবে: বন বিভাগ

খুলনা ব্যুরো
প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২২ | ০৪:৪৮ | আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২২ | ০৪:৪৯
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে বাঘের পাশাপাশি হরিণ ও শুকর শুমারিও করা হবে বলে জানিয়েছে পশ্চিম বন বিভাগ।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন।
বাঘের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ ও সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত ২৩ মার্চ ‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদ এ বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত।
পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বনের অভয়ারণ্য ও অভয়ারণ্য এলাকার বাইরে এই বাঘ শুমারি করা হবে। বনের কম লবণাক্ত, মধ্যম লবণাক্ত ও বেশি লবণাক্ত সব এলাকাই জরিপের আওতায় আসবে। বাঘ ৭৮ শতাংশ খাবার হচ্ছে হরিণ। এছাড়া বাঘ শুকর, বানর এমনকি মাঝেমধ্যে কাঁকড়াও খায়। প্রকল্পটির আওতায় বাঘের শিকার প্রাণি জরিপ করা হবে। তবে শিকার প্রাণীর জরিপ করা হবে ২০২৪ সালে।
প্রকল্পটির প্রধান প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে সুন্দরবনের বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে ৪৯ টি ভিলেজ টাইগার রেন্সপন্স টিমের ৩৪০ জন সদস্য ও ৪ টি রেঞ্জের কমিউনিটি পেট্রোল গ্রুপের ১৮৫ জন সদস্যকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। তাদের পোষাক সরবরাহ ও প্রতি মাসে বনকর্মীদের সঙ্গে করা হবে মাসিক সভা।
প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনে বাঘ গণনা করা হবে। বাঘ গণনার উদ্দেশ্যে ৪ মাসের জন্য আবাসন লঞ্চ ও সাপোর্ট বোট ভাড়া করা হবে। ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘ গণনার জন্য বিশেষ ক্যাটাগরির ২০০ টি ক্যামেরা সংগ্রহ, ক্যামেরার ব্যাটারি, এসডি কার্ড কেনা হবে।
জরিপ দলে অনিয়মিত শ্রমিক ও ট্রলার চালক নিযুক্ত করা, জরিপের সব কার্যক্রম পরামর্শক বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে পরিচালনা করার পরিকল্পনা রয়েছে। জরিপ দলের সব সদস্যকে প্রশিক্ষণ প্রদান, উপাত্ত সংগ্রহ, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণসহ বাঘ জরিপে মোট ব্যয় হবে ৩ কোটি ২৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল জানান, নতুন করে ২০০টি ক্যামেরা কেনা হবে। এছাড়া ২০১৮ সালের জরিপের সময় কেনা ৯০টি ক্যামেরা রয়েছে। সেগুলোও এবারের জরিপ কাজে ব্যবহার করা হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, অন্তত দুটি বাঘে স্যাটেলাইট কলার স্থাপনের মাধ্যমে মনিটরিং করা, বাঘের পরজীবীর সংক্রমণ ও অন্যান্য ব্যাধি এবং মাত্রা নির্ণয়, উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ প্রকল্পটির কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবনে প্রায় প্রতিবছর আগুন লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুষ্ক মৌসুমে সুন্দরবনের যে অংশে আগুন লাগার প্রবণতা বেশি, সে জায়গায় দুটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ ও সুন্দরবনে আগুন লাগলে যাতে তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নেভানো যায় সেজন্য আগুন নেভানোর যন্ত্রাংশ, পাইপ ও ড্রোন ক্রয় প্রকল্পের মাধ্যমে করা হবে। সুন্দরবনে বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় নদী ও খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় বাঘ গ্রামে প্রবেশ করে জানমালের নিরাপত্তা হুমকি হয়ে থাকে। ওই ৬০ কিলোমিটার অংশে নাইলনের ফেন্সিং নির্মাণ করে বাঘ মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া ২০২২ সালে বিশ্ব বাঘ সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, বাঘ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে এমন দেশে ২০ জনের শিক্ষা সফরসহ ৫০০ জনের বিশেষ প্রশিক্ষণের সংস্থান এ প্রকল্পে রাখা হয়েছে।
সুন্দরবনে ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর, ২০০৯ সালে আইলা ও ২০২১ সালে ইয়াসের মতো বড় বড় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বনের সমস্ত এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। তখন বনের বাঘ ও বাঘের শিকার প্রাণি আশ্রয়ের জন্য লোকালয়ে প্রবেশ করে। বাঘ ও বাঘের শিকার প্রাণি ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়ের জন্য সুন্দরবনে ১২ টি মাটির কিল্লা স্থাপন করা হবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে।
বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের সকল কার্যক্রমে পরামর্শক বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে বিশেষ প্রশিক্ষণ, জরিপ সম্পন্ন, তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ, প্রতিবেদন তৈরি ইত্যাদি কার্যক্রমে স্বল্পমেয়াদে ১২ জন পরামর্শক বিশেষজ্ঞের সংস্থান প্রকল্পে রাখা হয়েছে। এছাড়া সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের সকল জরিপ ও গবেষণার কার্যক্রম প্রামাণ্যচিত্র হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখা হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ২০১৮ সালের জরিপ অনুয়ায়ী বাংলাদেশে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ১১৪ টি, যা ২০১৫ সালে ছিল ১০৬টি।
- বিষয় :
- সুন্দরবন
- বাঘ শুমারি
- বন বিভাগ
- খুলনা