টাঙ্গাইলে অন্তঃসত্তা নারী ও তার ৪ বছরের মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা

ছবি: গুগল
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০১৯ | ০৫:০৯
টাঙ্গাইলের পৌর শহরের ভাল্লুককান্দী এলাকায় লাকী আক্তার নামের ৮ মাসের অন্তঃসত্তা এক নারী ও তার চার বছরের মেয়ে হোমাইরা আক্তার আলিফাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে করেছে দুর্বৃত্তরা।
নিহত লাকী আক্তার ভাল্লুককান্দী এলাকার ফ্লেক্সিলোড ও বিকাশ এজেন্ট আলামিনের স্ত্রী। নিহত আলিফা তাদের একমাত্র সন্তান ছিল।
নিহতের স্বামী আলামিন জানান, ভাল্লুককান্দি এয়ারপোর্ট রোডে আসাদ মার্কেটে তার দোকান। দোকান থেকে তার বাসায় যেতে পায়ে হেঁটে প্রায় পাঁচ মিনিট সময় লাগে। বাসার একশ’ গজের মধ্যে কোন বাড়ি নেই। শুধু আলামিনের একটিই বাড়ি। বাড়িতে শুধু আলামিনের স্ত্রী ও মেয়ে আলিফা থাকতো। একটি টিনের ঘর ও ছোট্র একটি রান্নাঘর। বাড়ির সামনে ডোবা। ছোট্র একটি রাস্তা দিয়ে ওই বাড়িতে যেতে হয়। রাস্তায় অন্ধকার থাকে বিধায় প্রতিদিন রাতে দোকান বন্ধ করে আলামিন তার স্ত্রীকে মোবাইলে কল দিতেন লাইট নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য। প্রতিদিনের ন্যায় শনিবার রাত ১২টার দিকে দোকান বন্ধ করে আলামিন তার স্ত্রীকে ফোন দেয়। কিন্ত ১০/১২বার ফোন দিলেও স্ত্রী ফোন ধরেনি। হয়ত ব্যস্ত রয়েছে এমন চিন্তায় সে বাড়িতে আসেন। বাড়িতে ঢুকেই উঠানে দেখেন তার স্ত্রী ও কন্যার বিভৎস লাশ পড়ে রয়েছে। দেখেই সে চিৎকার করে। পরে আশপাশের লোক এসে ভীড় করে।
নিহতের চাচা শ্বশুর মো. রওশন আলী বলেন, তার ভাতিজা আলামিন প্রায় ১০/১২ বছর ধরে ফ্লেক্সিলোড ও বিকাশের ব্যবসা করেন। প্রায় দুই বছর আরগ জমি কিনে বাড়ি করেছেন। তার স্ত্রী খুবই ভাল ছিল। তিনি হত্যাকারীদের দ্রুত খুঁজে বের করার দাবি জানান।
নিহত লাকির মামা ফেরদৌস হিরা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, পরিচিত লোকজনই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। বাড়িতে টাকা রয়েছে যারা জানতো তারাই এই কাজ করেছে। আমার ভাগ্নি অত্যন্ত ভাল ছিল। আলামিনের সাথে আমিই বিয়ে দিয়েছিলাম। পেটের সন্তানসহ তিনজনকে এভাবে হত্যার শিকার হতে হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। তিনি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেন।
টাঙ্গাইল সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশাররফ হোসেন জানান, শুক্রবার রাতে কে বা কারা তাদের বাড়িতে ঢুকে মা ও মেয়েকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে লাশ উদ্ধার করে। পরে রোববার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে পুলিশ হত্যাকারীদের খুঁজতে মাঠে নেমেছে।
ওসি বলেন, আমরা পারিবারিক পূর্বশত্রুতা, ব্যবসায়ীক সমস্যা অথবা অন্য কোন কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে কি-না সবকিছু মাথায় নিয়েই তদন্ত করছি।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে রোববার সকালে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সফিকুল ইসলাম (ডিএসবি), অতিক্তি পুলিশ সুপার রেজাউর রহমান (সদর সার্কেল), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসেন (পিবিআই), র্যাবের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার সহকারি পুলিশ সুপার শফিকুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, নৃশংস ও বর্বর এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে ইতিমধ্যে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ, পিবিআই ও সদর থানা পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছে। ঘটনাস্থল থেকে সকল আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুতই এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করে আসামীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।