ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

‘পড়ব, কিন্তু এত টাকা পাবো কোথায়?’

‘পড়ব, কিন্তু এত টাকা পাবো কোথায়?’

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রিফাত। ছবি-সমকাল

হিলি (দিনাজপুর) সংবাদদাতা

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২২ | ২৩:৩৮ | আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২২ | ২৩:৩৮

আর্থিক টানাপড়েন, নানা সঙ্কটকে জয় করে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া হিলির মাঠপাড়া গ্রামের মেধাবী রিফাত ইসলাম বললেন, মেডিকেলে ভর্তির পর উচ্চশিক্ষার খরচ মেটাবেন কিভাবে তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন। 

 চলতি বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ৩০০ নাম্বারের মধ্যে ২৭৫.৭৫ নাম্বার পেয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে সুযোগ পেয়েছেন রিফাত।

শিক্ষার্থী রিফাত ইসলাম বলেন, মেডিকেলে পরীক্ষার জন্য আমার শিক্ষকেরা যথেষ্ট সাপোর্ট দিয়েছে। এমনকি আমি অন্যের কাছ থেকে বই এনে পড়েছি। আল্লাহ সহ সবাই চেয়েছে বলেই আমি মেডিকেলে একজন চিকিৎসক হতে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমি জানি একজন গরীব কোন পর্যায়ে থাকে। যে কষ্ট জানবে না, সে বুঝবে না কষ্টটা কেমন। ডাক্তারি পাশ করার পর আমি গরীবের সেবা করতে চাই। যেখানেই থাকি না কেন মাসে অন্তত একবার হলেও গ্রামে এসে দরিদ্র মানুষের সেবা করতে চাই।

উচ্চশিক্ষার খরচ মিটাবেন কিভাবে সে চিন্তায় থাকা রিফাত বলেন, আমি জানি না পড়ার এত খরচ কোথা থেকে আসবে। আমি খুবই চিন্তায় আছি। মেডিকেলে পড়ব, কিন্তু এত টাকা আসবে কোথা থেকে? 

এদিকে রিফাতের সাফল্যে গর্ব, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তার পরিবার ও শিক্ষকরা।

রিফাতের বাবা আমীন ইসলাম বলেন, শিক্ষক, প্রতিবেশী ও সকলের সহযোগিতায় সে এই পর্যন্ত আসতে পেরেছে। আমার যে আর্থিক অবস্থা, তাতে সম্ভব ছিল না। ছাত্র হিসেবেও রিফাত ভালো ছিল। আমার কোনো ব্যাংক ব্যালেন্স নাই। সে যেন মানুষের মত মানুষ হয় তার জন্য সকলে দোয়া করবেন।

২০২১ সালে দিনাজপুরের হাকিমপুর সরকারি কলেজের রিফাত কলেজ থেকে জিপিএ-গোল্ডেন পেয়ে এইচএসসি পাশ করে।

কলেজের প্রভাষক আলী ইলিয়াস হোসেন বলেন, ক্লাসে পড়ালেখায় সে যথেষ্ট মনযোগী ছিল। সে গভীর রাত পর্যন্ত বই নিয়ে পড়তে বসত। তার ভিতর বই ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। আমি পড়ুয়া ছাত্র হিসেবে তাকে পেয়েছি। আমি ভাবতাম সে ভালো কিছু করবে। তার মেডিকেলে চান্স পাওয়ার খবর পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছি।

রিফাতের স্কুল সোনাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, রিফাত মেধাবী ছাত্র। আট-দশজনের মধ্যে সে ছিল ব্যতিক্রম। তার মধ্যে একটি ইচ্ছে-শক্তি ছিল আমি পারব। আমরা তাকে সব সময় উৎসাহ জুগিয়েছি এবং তার কাছ থেকে পজিটিভ কিছু পেয়েছি। সে দেশ ও জাতির সেবা করবে এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে অবদান রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ জানান, টাকা থাক বা না থাক ইচ্ছা-শক্তি, আগ্রহ ছিল বলেই রিফাত নিজ চেষ্টায় এই সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে। সে আমাদের গর্ব। 

রিফাতের আর্থিক সঙ্কটের বিষয়ে তিনি বলেন, রিফাতের উচ্চ শিক্ষার জন্য সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে।


আরও পড়ুন

×