হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
দুই ঘণ্টা কাতরালেও দেখা মেলেনি চিকিৎসকের, অতঃপর মৃত্যু
-samakal-626577cadd758.jpg)
হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স - সমকাল
হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২২ | ০৮:৩১ | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২২ | ১০:১৮
শ্বাসকষ্ট আর বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন সালাউদ্দিন
(৫৫)। তবে সেখানে দুই ঘণ্টায়ও দেখা মেলেনি কোনো চিকিৎসক, নার্স কিংবা অফিস
সহকারীর। চিকিৎসাসেবা পেতে এতটা সময় চারদিকে শুধু বৃথা ছোটাছুটি করেন
স্বজনরা। মেঝেতে পড়ে থেকে চিৎকার করতে করতেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন
সালাউদ্দিন। রোববার সকালে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে।
সালাউদ্দিন উপজেলার তমরদ্দি ইউনিয়নের পূর্ব ক্ষিরোদিয়া গ্রামের প্রয়াত মোজাফ্ফর আহাম্মদের ছেলে। তিনি হাতিয়া দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার নিরাপত্তা প্রহরী ছিলেন।
রোগী মৃত্যুর ঘটনায় জেলা সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার তাৎক্ষণিকভাবে ওই জরুরি বিভাগের সহকারী সার্জন দীপ্ত চন্দ্র কুরী, উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ইখতিয়ার উদ্দিন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশ্রাফ আলীকে শাস্তি হিসেবে ভাসানচরে বদলি করেন। এ ছাড়া এ ঘটনার জবাব চেয়ে তাদের চিঠি দেওয়া হয়।
সালাউদ্দিনের ছেলে মো. সোহেল বলেন, ‘ভোরের দিকে বাবার বুকে প্রচণ্ড
ব্যথা শুরু হয়। সকাল ৬টায় বাবাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে
নিয়ে আসি। তখন জরুরি বিভাগে কোনো চিকিৎসক, নার্স কিংবা কাউকেই পাওয়া যায়নি।
বাবার ব্যথা আরও বেড়ে গেলে চিকিৎসা পেতে চারদিকে শুধু দৌড়াদৌড়ি করি আমরা।
অতঃপর চোখের সামনেই মারা গেলেন বাবা।’
তিনি আরও বলেন, জরুরি বিভাগে ছিল না কোনো মোবাইল ফোন নম্বর। কারা দায়িত্ব পালন করছেন, তাও লেখা পাওয়া যায়নি কোনো জায়গায়।
উপস্থিত অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর আগেও চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এখানে নার্সদেরও আচরণ অনেক খারাপ। তারা রোগীর লোকদের থেকে টাকা দাবি করে এবং টাকা না দিলে সেবা দিতে অবহেলা করে।
চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে টনক নড়ে প্রশাসনের। প্রথমে অভিযুক্ত সবাইকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। পরে তিনজনকে শাস্তি হিসেবে বদলি করা হয়। সবশেষে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন বলেন, অভিযুক্তদের ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে তাদের বদলি করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে দোষী প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আরও বড় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।