নিপুণ হাতে বাহারি পোশাক

মানিকগঞ্জ সদরের বোয়ালিয়ায় আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের উপকেন্দ্রে শনিবার কাজে ব্যস্ত নারীরা- সমকাল
বিপ্লব চক্রবর্তী, মানিকগঞ্জ
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২২ | ২২:০৫ | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২২ | ২২:০৫
সুঁই-সুতার কাজের জন্য মানিকগঞ্জের নারীদের সুনাম সারাদেশে। তাদের নকশা করা পোশাক বিক্রি হয় ঢাকাসহ নানা জেলার বিপণিবিতানে। ছোট-বড় নানা ব্র্যান্ডের হয়ে কাজ করেন এই জেলার নারীরা। অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার নারী এ পেশায় স্থায়ী-অস্থায়ীভাবে কাজ করছেন। সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতর সামনে রেখে জেলা থেকে অন্তত পাঁচ লাখ পোশাক গেছে মানিকগঞ্জ থেকে। এর অন্তত দু'লাখ ব্র্যাকের সহযোগী সংস্থা আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের হয়ে আড়ংয়ের আউটলেটগুলোতে শোভা পাচ্ছে।
এ ছাড়া জেলার নারীদের তৈরি পোশাক অঞ্জন'স, কে-কদ্ধ্যাফট, বাংলার মেলা, গ্রামীণ চেক, রঙসহ বহু ব্র্যান্ডের শোরুমে। সারা বছরই সুঁই-সুতায় জীবনের স্বপ্ন বোনেন এসব নারী। তবে ঈদ বা বিশেষ পার্বণে ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এ সময় মৌসুমি কারিগরদেরও দম ফেলার ফুরসত থাকে না।
১৯৮৩ সালে আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জেলায় পাঞ্জাবি ও ফতুয়ায় নকশা বুননের কাজ শুরু হয়। ধীরে ধীরে যা জেলা শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। তারা এখন বাহারি ডিজাইনের স্কার্ফ, ওড়না, কামিজ, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি-শাড়ি, চাদর, ছোটদের পোশাকসহ নানা পণ্য তৈরি করেন। নিপুণ হাতে অ্যাপ্লিক, ভরাট, কাথাস্টিচ, গ্লাস ফিটিংসহ নান্দনিক কাজ করে কিছুটা হলেও সচ্ছলতা ফিরেছে গ্রামীণ নারীদের।
বড় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জেলায় ব্যক্তি উদ্যোগ ও সমিতির মাধ্যমেও গড়ে উঠেছে এ হস্তশিল্পের ব্যবসা। কোথাও একসঙ্গে বসে আবার কোথাও ঘরে বসেই কাজে মগ্ন দেখা গেছে নারীদের। শনিবার সদর উপজেলার বেতিলা, নবগ্রাম, হিজুলী, মত্ত, দাশড়া নয়াকান্দি এলাকায় তাদের ব্যস্ততা চোখে পড়ে।
আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের একটি উপকেন্দ্রে ১৫ বছর ধরে সুঁই-সুতার কাজ করেন মানিকগঞ্জ পৌর এলাকার নয়াকান্দি গ্রামের সালমা বেগম। তিনি বলেন, সারা বছর এখানে তার মতো ৪০ নারী কাজ করেন। তারা গড়ে মাসে ছয়-সাত হাজার টাকা উপার্জন করেন। ঈদ-পার্বণে কাজের চাপ বেড়ে যায়। এ সময় আয়ও হয় বেশি।
সালমা বেগম বলেন, এ কাজ শুরুর আগে স্বামীর আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন। এখন বেশ ভালোই চলছে তার সংসার।
শ্রমিক বাবার সন্তান সুমাইয়া আক্তার কাজ করেন খণ্ডকালীন। পৌর এলাকার পশ্চিম দাশড়া গ্রামের বাসিন্দা তিনি। পড়ছেন একটি কলেজে। সুমাইয়া জানান, দরিদ্র সংসারে লেখাপড়ার খরচ চালাতে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে সুঁই-সুতার কাজ করে যাচ্ছেন। লেখাপড়ার বাইরে তিনি পাঞ্জাবিতে নকশার কাজ করেন। পাঞ্জাবি নকশা ভরাট করে কাজের মানভেদে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত পান।
মানিকগঞ্জ কাপড়ী বাংলার স্বত্বাধিকারী রাজলক্ষ্মী চৌধুরী বলেন, ঈদ উপলক্ষে পাঁচ হাজার পোশাক তৈরি করেছে তার প্রতিষ্ঠান। সুঁই-সুতার নকশা করা এসব পোশাক শুধু নারীদের জন্য। তিনি এসব পাইকারি দরে বিক্রি করেছেন। বর্তমানে যা ঢাকার বিভিন্ন নামিদামি শোরুমে শোভা পাচ্ছে।
২০ বছর ধরে এ ব্যবসায় জড়িত জননী উইভিং অ্যান্ড ক্রাফটসের উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম পরান। তিনি বলেন, গত তিন বছর করোনার কারণে পোশাক তেমন তৈরি করা যায়নি, এবারও স্বাভাবিকের তুলনায় ৭৫ ভাগ তৈরি করা গেছে। চার হাজার গ্রামীণ নারীর হাতে এবার ৪০ হাজার পোশাক তৈরি করেছে তার প্রতিষ্ঠান; যা বিভিন্ন নামিদামি শোরুমে সরবরাহ করেছেন।
- বিষয় :
- সুঁই-সুতা
- মানিকগঞ্জ
- নকশা
- পোশাক বিক্রি
- বিপণিবিতান