ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, ডিবির ৭ সদস্য সাসপেন্ড

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২০ | ১০:০৮
ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চার লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাত সদস্য। গত বুধবার ব্যবসায়ী সোহেলকে ঢাকার সদরঘাট থেকে তারা তুলে নিয়ে যান।
এ ঘটনার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় সাতজনকেই সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন এসআই, একজন এএসআই ও চারজন কনস্টেবল। ঢাকা জেলা পুলিশ তাদের নাম প্রকাশ করেনি।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় সাতজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, ভুক্তভোগী সোহেলের বাড়ি কেরানীগঞ্জের নাজিরাবাগে। তিনি বৃহস্পতিবার ঢাকার এসপির কাছে লিখিত অভিযোগে অপহরণ ও মুক্তিপণের বিষয়টি জানিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ভুক্তভোগী অভিযোগে বলেছেন, গত বুধবার সন্ধ্যায় সদরঘাট থেকে তিনি দুটি লুঙ্গি কিনে বাসায় ফিরছিলেন। সূত্রাপুরের লালকুঠির নৌকাঘাটে পৌঁছলে ছয়-সাতজন তাকে ঘিরে ধরেন। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ডিবি পরিচয়ে হাতকড়া পরিয়ে নৌকায় তুলে বুড়িগঙ্গার ওপারে নিয়ে নম্বরপ্লেটবিহীন মাইক্রোবাসে ওঠানো হয়। এরপর চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে তার হাতের আঙুল ও নখে আঘাত করা হয় প্লায়ার্স দিয়ে। মারধরও করা হয় তাকে। মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে বলা হয়- পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে, নইলে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হবে। আতঙ্কে সোহেল স্বজনদের কাছে ফোন করে বাঁচার জন্য কান্নাকাটি করেন।
অপহরণকারী পুলিশ সদস্যরাও তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন এবং মুক্তিপণের টাকা দ্রুত পাঠাতে বলেন। সোহেলের জীবন বাঁচাতে আতঙ্কিত স্বজনরা মুক্তিপণের সাড়ে চার লাখ টাকা নিয়ে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে যান রাতে। স্থান বদল করেন অপহরণকারীরা। স্বজনদের বছিলা ব্রিজে যেতে বলা হয় ফোনে। ব্রিজে যাওয়া মাত্র একটি মাইক্রোবাসে স্বজনদের তুলে নিয়ে যান অপহরণকারীরা। অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গভীর রাতে সোহেলের মুখোমুখি করা হয় তাদের। মুক্তিপণের টাকা পাওয়ার পর সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে সোহেল ও তার স্বজনদের ছেড়ে দেন তারা।
এ ঘটনা কাউকে জানালে পরে ধরে নিয়ে ক্রসফায়ার অথবা মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেওয়া হয়।