কুলিয়ারচরে শ্মশান দখলচেষ্টার প্রতিবাদে রানা দাসগুপ্তের আল্টিমেটাম

কিশোরগঞ্জ অফিস
প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২২ | ০৬:১৪ | আপডেট: ০৪ জুন ২০২২ | ০৬:১৪
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে পূর্ব গাইলকাটার শ্মশান দখলের চেষ্টার প্রতিবাদে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্মশান সংলগ্ন এলাকায় বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। তিনি আগামী ১০ দিনের মধ্যে শ্মশানে যাওয়ার রুদ্ধ করা পথটি খুলে দেওয়ার এবং শ্মশানের জমি জবর দখলের পাঁয়তারা থেকে সরে আসার ব্যাপারে আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, স্থানীয় নির্বাচনই হোক, জাতীয় নির্বাচনই হোক, যারা সংখ্যালঘুদের জায়গা-জমি দখল করে, শুধু সংখ্যালঘু জনগণ নয়, ধর্মীয় সংখ্যাগুরু জনগণের দুর্বল কোনো অংশের ওপর যারা অত্যচার চালায়, যারা আমাদের মা-বোনদের ওপর নির্যাতন চালাতে কুণ্ঠাবোধ করে না, যারা দুর্নীতিবাজ, যারা ভূমি খেকো, আপনারা আগামী কোনো নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। যদি মনোনয়ন দেওয়া হয়, ওই দুর্নীতিবাজ, ভূমি খেকোকে আমাদের ভোট দেওয়া সম্ভব নয়। এই না শব্দটি আজকে শুধু কুলিয়ারচর উপজেলার সংখ্যালঘুদের শব্দ নয়, গোটা বাংলাদেশের ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েরও। বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে রাজনীতি-রাষ্ট্রনীতি এবং স্থানীয় প্রশাসন স্থানীয় রাজনীতি যাতে জনগণের পক্ষ অবলম্বন করে, এ বিষয়টিকে বিবেচনা করেই আপনারা যদি এগিয়ে যেতে পারেন, তবেই আমরা আপনাদের সঙ্গেই আছি, আমরা আপনাদের সঙ্গেই থাকব।
তিনি আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে শ্মশানে যাওয়ার রুদ্ধ করা পথটি খুলে দিতে হবে এবং শ্মশানের জমি জবর দখলের পাঁয়তারা থেকে সরে আসতে হবে। হিন্দু সাধারণের ব্যবহারের শ্মশানকে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। যদি তা না দেওয়া হয়, তবে শ্মশানের ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নাম জড়িয়ে যিনি অপকর্মগুলো করেছেন, তার বিরুদ্ধে সারাদেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেওয়া হবে। এটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও প্রচারিত হয়ে যাবে। এতে আন্তর্জাতিকভাবে নেতিবাচক ধারণার তৈরি হতে পারে। সেটি হলে আমরা দায়-দায়িত্ব নেব না।
কুলিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র ইমতিয়াজ বিন মুসা জিসানের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জিপেন্দ্রলাল ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল এবং ঢাকা মহানগর সভাপতি মনিন্দ্র কুমার নাথ বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা তাদের বক্তব্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া একজন জনপ্রতিনিধির ৪০০ বছরের পুরনো শ্মশান দখলের চেষ্টাকে ঘৃণ্য তৎপরতা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, জনপ্রতিনিধিরা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার অধিকার সুরক্ষার শপথ নেন। কিন্তু এখানে ভূমিদস্যুদের ঠেকানোর বদলে শ্মশানে দেয়াল দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব ভূমি দখলবাজের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত।
বক্তারা আরও বলেন, শ্মশানঘাট আছে দেখার পরও সেখানে জায়গা কেনা অপরাধ। বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত সৈনিক হলে এই জনপ্রতিনিধি এটা পারতেন না, উনি বোধহয় অনুপ্রবেশকারী।
প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ দত্ত প্রদীপ, ড. রতন চন্দ্র ঘোষ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এর আগে শ্মশানখলায় সাম্প্রতিক বর্বরোচিত হামলায় বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ক্ষতিগ্রস্ত কুলিয়ারচর পৌরসভার পূর্ব গাইলকাটা শ্মশান পরিদর্শন করেন।
গত ২৫ মে মধ্যরাতে শ্মশানের বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে ফেলে অজ্ঞাত কিছু লোক। রাতের আঁধারে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের মধ্যেই পরদিন সকালে ফের শ্মশানের স্থানে ট্রাক্টর দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ইয়াছির মিয়ার লোকজন বালু ভরাট করতে গেলে সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন বাধা দিলে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।