ঝিনাইগাতীতে বন্যায় বিধ্বস্ত চার শতাধিক বসতঘর

দেবাশীষ ভট্টাচার্য, শেরপুর
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৫ জুন ২০২২ | ০১:৫৪
ঝিনাইগাতীতে সাম্প্রতিক বন্যায় চার শতাধিক বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আর নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে ২৫টি বাড়ি। এই উপজেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। চলতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বোরো ধান ঘরে তুলতে পারেননি তাঁরা। সেই ক্ষত না শুকাতেই বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বাড়িঘর। সব হারিয়ে অনেকে পরিবার নিয়ে স্থানীয় বিদ্যালয়, মাদ্রাসা অথবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের রামেরকুড়া গ্রামের মহারশি নদীর বাঁধের পাশে একটি বাড়িতে বসবাস করতেন কৃষি শ্রমিক জয়নাল। গত রোববার রাতে পাহাড়ি ঢলে নদীতে বিলীন হয় তাঁর বাড়ি। টিনের দোচালা বসতঘর, একটি রান্নাঘর, নলকূপসহ সব স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়ে যায় সর্বনাশা ঢল। তাঁর বাড়ির দিকে তাকালে মনে হয় যেন সুনামির তাণ্ডব হয়েছিল সেদিন। নারকেলের চারাসহ দুই-তিনটি গাছ ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে জয়নালের পরিবার।
জয়নালের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক কষ্টে দিন কাটছে তাঁদের। সরকারি এক প্যাকেট শুকনা খাবার ছাড়া গত পাঁচ দিনে কিছুই জোটেনি। খালার বাড়িতেও সমস্যা। যে কোনো সময় চলে যেতে হবে। কিন্তু কোথায় যাবেন তিনি? এভেবেই তাঁর চোখেমুখে ভর করে রাজ্যের অন্ধকার। তাঁর দাবি, মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করে দিক সরকার।
সদর ইউনিয়নের বৈরাগীপাড়া এলাকার বাঢু মিয়া গরিব মানুষ। তাঁর মাটির ঘরটি ভেঙে যায় ঢলে। এখন অসহায় অবস্থায় দিন পার করছেন তিনি।
রামেরকুড়া গ্রামের কৃষক সোবাহানের দুটি বসতঘরই বিধ্বস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, 'এক সপ্তাহ ধইরা অন্যের বাড়ি ঘুমাই। সরকার ঘর ঠিক কইরা না দিলে আর ঘরে থাকার আশা নাই।'
মহারশি নদীর বাঁধের পাশেই ছিল আবু হারেজের বাড়ি। পানির তোড়ে দুটি ঘর বিধ্বস্ত। উঠেছেন পাশের এলাকার একটি প্রতিবন্ধী স্কুলে। তাঁর ভাষ্য, গত এক সপ্তাহে কেউ তাঁদের খোঁজ নেয়নি। কীভাবে বাড়িঘর মেরামত করবেন এই ভেবে দিশেহারা তিনি। সব এলাকায়ই পানি। কোনো কাজ নেই। খাবারই জোগাড় করতে পারছেন না, ঘর কীভাবে মেরামত করবেন?
ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহাদৎ হোসেন জানান, তাঁর ইউনিয়নে কমপক্ষে ৮০টি বাড়িঘর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্ভোগে রয়েছেন গৃহহীন মানুষ।
ধানশাইল ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের দাবি, তাঁর ইউনিয়নের ৮-১০টি বসতঘর পড়ে গেছে এবং শতাধিক বাড়িঘরের আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
কাংশা ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট দুই দফা বন্যায় তাঁর ইউনিয়নের ৫০ থেকে ৬০টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মালিঝিকান্দা ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হকের দাবি, বন্যায় ২০-২৫টি বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে তাঁর ইউনিয়নে। এ ছাড়া হাতিবান্দা ইউনিয়নে ১৫-২০ বাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত এবং চারটি বাড়ি ভেসে গেছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আল মাসুদ বলেন, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার ১ হাজার ৩০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দপ্তরে পাঠানো হবে। তাঁর ভাষ্য, এখন পর্যন্ত ২৫ ব্যক্তি বসতঘর নষ্ট হওয়ার বিষয়ে আবেদন করেছেন। পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে তাঁদের ঢেউটিন ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হবে।