ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ

তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি ২১ বছরে

তিন মাসের আহ্বায়ক কমিটি ২১ বছরে

শৈবাল আচার্য্য, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১৪:২৭

তিন মাসের জন্য গঠন করা হয়েছিল আহ্বায়ক কমিটি। এরপর চলে গেছে ২১টি বছর। এর মধ্যে আর কোনো কমিটি আলোর মুখ দেখেনি। পদের আশায় থাকা পদপ্রত্যাশীরাও এখন ক্লান্ত-অবসন্ন। সংগঠন নুয়ে পড়েছে বয়সের ভারে! এভাবেই চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ।

এত বছর পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণায় ব্যর্থ কেন্দ্রীয় নেতারা। ঘোষণা করেন মাত্র ২০ সদস্যের আংশিক কমিটি। এটি ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে চিঠির মাধ্যমে নিশ্চিত করেন তাঁরা। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের কথার সঙ্গে কাজের মিল না থাকায় সেই এক সপ্তাহের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে প্রায় ছয় মাস! এ অবস্থায় সেই 'এক সপ্তাহ' কত বছরে শেষ হবে এমন প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে পদপ্রত্যাশীসহ সংশ্নিষ্টদের মনে। এরই মধ্যে দিচ্ছি, দেব বলে কেন্দ্রীয় নেতারা একাধিকবার ঘোষণা দিয়ে মাঠ গরম রাখলেও এতদিনেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি আলোর মুখ না দেখায় নেতাকর্মীর মাঝে তৈরি হয়েছে হতাশা। একাধিকবার ঢাকায় গিয়ে নেতাদের হাজিরা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন পদপ্রত্যাশীরা। কমিটি ঘোষণায় চট্টগ্রামের সাবেক দুই মেয়রের একাধিক অনুসারীদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা নানামুখী চাপে পড়ার কথা বলছেন সংশ্নিষ্টরা।

দেবাশীষ নাথ দেবুকে সভাপতি ও আজিজুর রহমান আজিজকে সাধারণ সম্পাদক করে গত ৯ মার্চ ২০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ। এর এক সপ্তাহের মধ্যে ১০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়ার ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আংশিক কমিটির প্রধান দুই পদই বাগিয়ে নেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীরা। এ কারণে নওফেল শিবিরে উচ্ছ্বাস বিরাজ করলেও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের শিবিরে এখনও বিরাজ করছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। যে কারণে কমিটির বেশিরভাগ কর্মসূচিতেও একসঙ্গে দেখা যায় না দুই গ্রুপ থেকে পদ পাওয়া অনেক নেতাকর্মীকে। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নাছির অনুসারীদের যোগ্য প্রার্থীদের স্থান দেওয়া না হলে সেই অসন্তোষ আরও প্রকট হবে। পাশাপাশি তাতে কমিটির নানা কর্মসূচি ও কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অনেকেই। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নাছির-নওফেল অনুসারীদের অনেকে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের 'আশীর্বাদ' নিতে একাধিকবার ছুটে গেছেন ঢাকায়। নানাজনকে দিয়ে জোরেশোরে তদবিরও চালাচ্ছেন তাঁরা।

এদিকে, গত ২১ আগস্ট কোটি টাকার চাঁদাবাজির মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবুসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। এই ঘটনায় নতুন করে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে কমিটিতে। এটি নিয়ে বিব্রত চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও। এ কারণে দলের ভাবমূর্তি সংকটে পড়ার কথাও বলছেন অনেকেই। সংশ্নিষ্টদের মতে, বিচার শুরুর আদেশ, সাবেক দুই মেয়রের একাধিক অনুসারীদের ব্যালেন্স করাসহ নানা কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে বিভিন্ন চাপে পড়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

২০০১ সালে তিন মাসের জন্য গঠন করা হয় চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক কমিটি। প্রায় ২১ বছর পর গত বছরের ১৯ জুন বহুল প্রতীক্ষিত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে সম্মেলনের ১৪ মাস পরও ঘোষণা করা হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নিতে বিতর্কিত বেশ কয়েকজন নেতা নানাজনকে ম্যানেজ করে চালাচ্ছেন লবিং-তদবির।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু সমকালকে বলেন, শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি টিম চট্টগ্রাম সফর করেছে। এ সময় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে অনেকেই আমাদের কাছ থেকে জানতেও চেয়েছেন। ক্লিন ইমেজের নেতাকর্মীদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে। শিগগির কমিটি ঘোষণা করতে এখন যাবতীয় কাজ শেষের পথে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।

কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা বলেন, এবার পদ পেতে রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থী জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। সাবেক মন্ত্রী, সাবেক দুই মেয়র, সাংসদসহ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ অনেক নেতার অনুসারীরা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আসতে লবিং-তদবির করছেন। তবে এমন অনেকে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন যাদের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড আশানুরূপ নয়। বিতর্কিতরাও রয়েছেন। এরই মধ্যে দায়িত্ব দেওয়া সভাপতির বিরুদ্ধেও উঠেছে চাঁদাবাজির অভিযোগ। তাই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিতর্কিত কেউ যাতে আসতে না পারে সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

দেবাশীষ নাথ দেবু বলেন, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি। এই মামলাটি তারই একটি অংশ। ভুল বোঝাবুজির কারণে মামলাটি করা হয়েছে। ছাত্রজীবন থেকে আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কখনও কোনো অন্যায়-অনিয়ম করিনি। আমার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে।

আরও পড়ুন

×