অ্যান্টিভেনম নেই বেড়েছে মৃত্যুঝুঁকি

নড়াইল সদর হাসপাতাল (ফাইল ছবি)
নড়াইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ২৩:১০
নড়াইল সদর হাসপাতালে সাপের বিষ প্রতিষেধক অ্যান্টিভেনম সিরাম নেই। চলতি বছর ২১ জুলাই আনা ২০০ পিস সিরামের মেয়াদ ছিল ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। মেয়াদ থাকার পরও গত মাসের ১৫ তারিখে প্রতিষেধক ইনজেকশন দেওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে এক কিশোরের মৃত্যু ঘটে। গত ৫ বছরে কত পিস সিরাম এসেছে এবং কতটি ব্যবহার হয়েছে সে তথ্য দিতে পারেননি কর্তৃপক্ষ।
অ্যান্টিভেনম না থাকায় নড়াইলের মতো সাপপ্রবণ এলাকায় মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়েছে। গত দেড় মাসে সাপের দংশনে তিনজন মারা যান। এছাড়া ২০-২৫ জনকে সাপ দংশন করেছে বলে জানা গেছে।
সদরের আউড়িয়া ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের কুরবান আলী জানান, ১৫ আগস্ট তাঁর ছেলে আশিক (১৪) রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে তাকে সাপে কাটে। রাত
১১টার দিকে তাকে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসক-নার্স প্রথমে স্যালাইন ও পরে ইনজেকশন অ্যান্টিভেনম দেন। কিন্তু এর ১০ মিনিটের মাথায় আশিক নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
একই ইউনিয়নের খলিশাখালী গ্রামের হেনা বেগম জানান, ৩১ আগস্ট বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তাঁর ছেলে প্রকৌশলী (ডিপ্লোমা) মামুন রহমানকে সাপে কাটে। রাত ২টার দিকে খুলনায় নেওয়ার পথে ছেলের মৃত্যু ঘটে। সদর হাসপাতালে নিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবেশীদের কাছে তাঁরা জেনেছিলেন হাসপাতালে অ্যান্টিভেনমের মেয়াদ নেই। তাই তাঁকে খুলনায় নিয়ে যাচ্ছিলেন।
আউড়িয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আনোয়ারা বেগম জানান, কমলাপুর, খলিশাখালীসহ কয়েকটি গ্রামে গত এক মাসে কমপক্ষে ১০ জনকে সাপে কেটেছে এবং তাঁরা সবাই স্থানীয় ওঝা-কবিরাজদের দ্বারস্থ হয়েছেন।
সদরের বাহিরডাঙ্গা গ্রামের দীপক বিশ্বাস জানান, তাঁদের গ্রামে গত ১ মাসে ৬ জনকে সাপে কেটেছে। তাঁদের সবাই ওঝার কাছে গিয়ে ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নিয়েছেন।
হাসপাতালের স্টোরকিপার (ভারপ্রাপ্ত) আলফাজ উদ্দিন বলেন, ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসি বিভাগ থেকে সদর হাসপাতালের জন্য ৫০০ পিস প্রতিষেধক সিরাম আসে। এগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এ বছরের ২১ জুলাই ২০০ পিস সিরাম আনা হয়, যার মেয়াদ ছিল ৪০ দিন অর্থাৎ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এগুলোর মধ্য থেকে মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ডে ১০০ পিস সিরাম দিয়ে বাকিগুলো স্টোরে রেখে দেওয়া হয়। গত ৬ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নতুন করে ১০০ পিস সিরাম বরাদ্দ হলেও সেগুলো ২৫ সেপ্টেম্বর দেওয়া হবে। গত ৫ বছরে কত পিস সিরাম এসেছে এবং কত পিস ব্যবহার হয়েছে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ তথ্য তাঁর কাছে নেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে গত সোম ও মঙ্গলবার সদর হাসপাতালের আরএমও এবং তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে দেখা করতে গেলে জানা যায় তাঁরা অফিসিয়াল অনুষ্ঠানে আছেন। ফলে তাঁদের সঙ্গে দেখা করে তথ্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। আরএমও ডা. সুজল বকশীকে এ বিষয়ে কল দিলে তিনি তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডলের কাছে গত ১৫ আগস্ট অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের ১০ মিনিটের মধ্যে সাপে কাটা এক রোগীর মৃত্যু সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ফোনে বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, বিভিন্ন কারণে মারা যেতে পারে। গত এক বছরে কতটি অ্যান্টিভেনম সিরাম ব্যবহার হয়েছে প্রশ্নে তিনি স্টোরকিপারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। স্টোরকিপার বিষয়টি জানেন না জানালে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, তিনি কি এসব মুখস্থ করে বসে আছেন?
- বিষয় :
- নড়াইল সদর হাসপাতাল
- অ্যান্টিভেনম
- সাপের বিষ