জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে দ্বন্দ্ব
ফরিদপুরে যুবলীগের ৪ শাখার কার্যক্রম স্থগিত

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ ফারুক হোসেন ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাহাদাত হোসেন (ডানে)
ফরিদপুর অফিস
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ০৮:২২ | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ০৯:২৫
ফরিদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাহাদাত হোসেন। তারই জেরে ভাঙ্গা উপজেলা, ভাঙ্গা পৌরসভা এবং সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা যুবলীগের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা যুবলীগ বৃহস্পতিবার বর্ধিত সভা করে সাহাদাত হোসেনকে বহিষ্কারের দাবি জানায়। ওই দিন সন্ধ্যায় জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান মিঠু স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চারটি কমিটি কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনাদের বার বার নির্দেশনা দেওয়ার পরও আপনারা বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি এবং ফরিদপুর জেলাধীন আওয়ামী যুবলীগের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন না। এমতাবস্থায় আপনাদের দলীয় সব কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হলো।’
ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে যুবলীগের ওই বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মামুন অর রশিদ। বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আকতারুজ্জামান রাজা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী হেদায়েত উল্লাহ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফায়জুর রহমান ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় অর্থবিষয়ক উপকমিটির সদস্য এম এম কামরুজ্জামান কাফী। আকতারুজ্জামান রাজা সভায় বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে কেন্দ্রের নির্দেশনা রয়েছে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের মদদদাতাদের দল থেকে বহিষ্কারের।’ ফরিদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাহাদাত হোসেন ২৫ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করেন, তাহলে তাকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান তিনি।
ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ ফারুক হোসেন। তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। অপরদিকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া সাহাদাত কেন্দ্রীয় যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক।
১৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যুবলীগের যে কোনো স্তরের নেতাকর্মী যদি বিদ্রোহী প্রার্থী বা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করে বা প্রচার প্রচারণা চালায় বা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে তাহলে তার/তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেন্দ্রীয় এ নির্দেশনার পরও যুবলীগ নেতা সাহাদাত হোসেন ১৪ সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, সদরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান ও চরভদ্রাসনের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. কাউসার।
জেলা আহ্বায়ক এ চিঠি দিয়ে গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজ করেছেন দাবি করে ভাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মামুন অর রশিদ বলেন, হয়তো বিশেষ কোনো ব্যাক্তিকে খুশি করার জন্য এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন জেলা যুবলীগ আহ্বায়ক। জেলা যুবলীগ একটি আহ্বায়ক কমিটি। এর মেয়াদ তিন মাস। তিন মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর ওই কমিটির আর কোনো বৈধতা থাকে না। এ জন্য এ সিদ্ধান্ত স্বেচ্ছাচারী ও গায়ের জোরে নেওয়া হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। মামুন বলেন, আমাদের সিদ্ধান্তে সাহাদাত অসন্তুষ্ট হয়েছেন। এ জন্য তাদের পকেট জেলা কমিটি দিয়ে এ কাজটি করিয়েছেন, যা যুবলীগের গঠনতন্ত্রের সঙ্গে যায় না।
তবে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান মিঠু বলেন, ভাঙ্গা যুবলীগ কেন্দ্রীয় ও দলীয় কোনো কার্যক্রম করে না। হঠাৎ করে তারা বর্ধিত সভা করল, তা জেলা কমিটিকে জানায়নি। তা ছাড়া ওখানে যুবলীগের মধ্যে ভাগ রয়েছে। একপক্ষ করেছে অন্য পক্ষ জানেই না। এ নিয়ে ঝামেলা হতে পারে। এ ঝামেলা এড়াতেই কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সাময়িক ওই তিন উপজেলা যুবলীগের কার্যক্রম স্থগিত করার এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। তা ছাড়া সাহাদাত কেন্দ্রীয় নেতা। তাদের বহিষ্কার চাওয়ার ক্ষমতা উপজেলা কমিটির নেই। এটা কেন্দ্রের ব্যাপার।