'বড় মাছ খাব, তা কল্পনার অতীত'

দুলালকান্দি বাজারে নিজের চায়ের দোকানে বসে আছেন অলেক-রিনা দম্পতি-সমকাল
শেখ আব্দুর জলিল, বেলাব (নরসিংদী)
প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২২ | ২২:৪৬
রিনা আক্তারের সংসারে ৩ মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ ৭ জন মানুষ। অভাবের সংসারের ঘানি টানতে স্বামী অলেক মিয়ার সঙ্গে চা বানিয়ে বিক্রি করেন। দোকানের আয়েই চলত সংসার। সারা মাসে চা বিক্রি করে লাভ হতো ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। তা থেকে প্রতি মাসে ঋণের কিস্তি দেড় হাজার, চাল, ডালসহ নিত্যপণ্য কিনতে ১০ থেকে ১২ হাজার, স্ত্রীর মাসে ওষুধ লাগে দুই হাজার, তিন মেয়ের লেখাপড়ার ব্যয় হতো পাঁচ হাজার টাকা।
চা বিক্রি করে মাসে যে টাকা পান, তার সবটাই চলে যায় সংসার খরচে। নরসিংদীর বেলাব উপজেলার দুলালকান্দি বাজারে তাঁদের দোকান। অলেক বলেন, 'গরুর মাংস আমার কাছে সোনার হরিণের মতো। প্রায় তিন মাস আগে পোলট্রি মুরগি কিনেছিলাম। বড় মাছ খাব, তা কল্পনার অতীত।'
বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের দোকানে বিক্রি কমে গেছে। আগের মতো আয় হচ্ছে না। রিনা বেগম বলেন, 'চা আগের দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। কষ্টে কোনোমতে বেঁচে আছি।'
আমলাব বাজারের নৈশপ্রহরী জগত মিয়ার পরিবারের সদস্য ৬ জন। এক মেয়ে কলেজে, ছেলে পড়ে দশম শ্রেণিতে। তিনি বলেন, 'চাকরির বেতন ৮ হাজার। ব্যবসায়ীরা বখশিশ দেন মাসে এক হাজার, আর দুই ভাই ও এলাকার কয়েকজন ৩-৪ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন।'
জগত মিয়ার বাড়িতে দেখা যায়, একটি পুরোনো জীর্ণ টিনের ঘরে সবাই একসঙ্গে থাকেন। ছেলেমেয়ে বড় হলেও আলাদা ঘর নেই। ৪ মাস আগে এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ তুলে চোখের চিকিৎসা করিয়েছেন তিনি। গরুর মাংস কত দিন আগে খেয়েছেন জানতে চাইলে চোখের কোণে পানি চলে আসে জগত মিয়ার। তিনি বলেন, 'কোরবানি ঈদে মানুষের দেওয়া কিছু মাংস পেয়েছি। তার পর আর কিনতে পারিনি। মাসে ২-৩ বার পাঙাশ, না হয় ছোট মাছ আনতে পারি। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, কিস্তি, চাল-ডালসহ সংসারের খরচ, ওষুধ কিনতে খুব কষ্ট হয় আমার।'
আমলাব গ্রামের কাঠমিস্ত্রি আব্দুস ছাদেক স্থানীয় বাজারে খাটের ছানি (তক্তা) লাগান। প্রতিদিন মজুরি পান ৫০০ টাকা। তিনি বলেন, 'সমিতি থেকে ৪৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ঘর করেছি। রোজগার থেকে সাপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধ করে সংসার চালাতে কষ্ট হয়।'
দিঘলদীকান্দা গ্রামের রিকশাচালক আমির হোসেন। প্রতিদিন আয় ৩০০ টাকা। ৫ জনের সংসার তাঁর। তিনি বলেন, 'সন্তানদের ভালো খাবার দিতে পারি না। স্ত্রীর শখ পূরণ করতে পারি না। আমরা অভিশাপ হয়ে বেঁচে আছি।'
মানুষের আয় ও কাজ দুটোই কমছে বলে মনে করেন নারায়ণপুর রাবেয়া মহাবিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক স্বপন চন্দ্র দেবনাথ। তিনি বলেন, সঠিক সময়ে বাজার মনিটর হচ্ছে না। শুধু একটা পক্ষ বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। নিয়মিত মনিটর করলে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।
- বিষয় :
- বেলাব
- সংসারের ঘানি
- দরিদ্র
- সংসারে টান