ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

ঐতিহ্য

মাঠে বাবার সঙ্গে খেয়েই আনন্দ সুমাইয়ার

মাঠে বাবার সঙ্গে খেয়েই আনন্দ সুমাইয়ার

সকালে না খেয়ে কাজে আসেন কৃষি শ্রমিকরা। পরে বাড়ির অন্য সদস্যরা খাবার নিয়ে আসেন। সেই খাবার শ্রমিকরা ভাগাভাগি করে খান। রোববার রানীশংকৈলের পাটাগড়ায়-সমকাল

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২২ | ১২:০০

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার পাটাগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার। কৃষি শ্রমিক বাবা আব্দুল মজিদ কাজ করছিলেন স্থানীয় সমশের আলীর আলু ক্ষেতে। সকালে সামান্য কিছু খেয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন। এ জন্য সাড়ে ১০টার দিকে বাবার জন্য খাবার এনেছে সুমাইয়া। ফিরে বিদ্যালয়ে যাবে সে। মাঠেই বাবার সঙ্গে নিজের খাবারও খেয়ে নিল। প্রতিদিন এভাবেই বাবার সঙ্গে খায় বলে বেশি খাবার দিয়ে দেন মা শরিফা বেগম। এভাবে খেতেই আনন্দ তার।
সুমাইয়া বলছিল, 'বাবার জন্য ভাত আনি প্রতিদিনই। একসঙ্গে খাই। খুব আনন্দ লাগে।' আব্দুল মজিদ বলেন, বাড়িতে মেয়ের সঙ্গে খাওয়া হয় খুব কম। মাঠে একসঙ্গে অনেকে খায় বলে আনন্দ হয়। একজনের দেখে আরেকজন খায় বলে বেশ মজা পায় শিশুরা। এখন আলুর ক্ষেত ছাড়া অন্য কোথাও কাজ নেই। সাড়ে তিন থেকে ৪০০ টাকা দৈনিক হাজিরা মেলে। সেই টাকায় পরিবার নিয়ে বেশ ভালো আছেন। সংসারে অভাব নেই।
দেশে আলু উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয় জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে চলছে আগাম জাতের আলু লাগানো ও পরিচর্যার কাজ। অসময়ে কাজ পেয়ে বাড়তি আয়ে খুশি কৃষক। হালকা শীতের সকালে খেয়ে না খেয়ে কাজে আসতে হয় তাঁদের। বাড়ির অন্য সদস্যরা খাবার দিয়ে যান মাঠে। সন্তান, স্ত্রী বা বাবা-মা এ দায়িত্ব পালন করেন। মাঠে বসেই ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খান সেই খাবার। এতেই তৃপ্তি তাঁদের। গত রোববার রানীশংকৈল পাটাগড়া এলাকায় দেখা মেলে এমন দৃশ্যের।
ষাটোর্ধ্ব জয়তুন বেগম স্বামী ইসলাম উদ্দীনের জন্য খাবার এনেছিলেন একই মাঠে। ইসলাম উদ্দীন কাজ বন্ধ করে হাত ধুয়ে খাওয়া শুরু করেন। জয়তুন খাবার প্লেটে তুলে দিচ্ছিলেন। পানিও ঢেলে দেন গ্লাসে। ইসলাম উদ্দীন বলেন, মাঠে কাজের মধ্যে খাওয়ার আনন্দ অনেক। বাড়িতে খেতে গেলে অনেক সময় নষ্ট হয়। মাঠে ভাত-তরকারি ভাগাভাগি করে খায় সবাই। এতে আন্তরিকতা বাড়ে।
রানীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, ফসলের মাঠে বসে কৃষক-শ্রমিকদের খাবার খাওয়ার দৃশ্য সত্যিই অনেক আনন্দের। এটি প্রাচীন ঐতিহ্য বলা যেতে পারে। কারণ যুগ যুগ ধরে এ প্রথা চলে আসছে। মূলত সময় বাঁচাতে মাঠে খাবার খান কৃষক-শ্রমিকরা। সকালে না খেয়ে কাজে যান বলে পরিবারের সদস্যরা খাবার পৌঁছে দেন।

আরও পড়ুন

×