ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

সিংগাইরের শায়েস্তা ইউপি

জমির দাবিদার তিন পক্ষ, ভাড়া নেন প্রভাবশালীরা

জমির দাবিদার তিন পক্ষ, ভাড়া নেন প্রভাবশালীরা

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২২ | ০৪:১২

মানিকগঞ্জের সিংগাইরের শায়েস্তা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবনসংলগ্ন একটি জমিতে তৈরি মার্কেটের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান জমিটি পরিষদের দাবি করে উদ্ধারের আবেদন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে। অন্যদিকে ক্রয়সূত্রে জমিটির মালিকানা দাবি করেছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্যসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কয়েক নেতা। মূল মালিকদের ভাষ্য, ৩০-৩৫ বছর আগে ১২ শতাংশ জমির অর্ধেক দখলে নেয় ইউনিয়ন পরিষদ। বাকি ৬ শতাংশ এক ব্যক্তির কাছে ভাড়া দেওয়া হয়। তাঁকে উচ্ছেদ করে জাল দলিলের মাধ্যমে জমিটি দখলে নেওয়া হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, শায়েস্তা ইউনিয়ন পরিষদের দক্ষিণ পাশের পাকা রাস্তালাগোয়া জমিটিতে টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি আধাপাকা মার্কেট। এখানে সাতটি দোকান তৈরি করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সেখানে রেস্তোরাঁসহ কয়েকটি দোকান রয়েছে।

সেখানে একটি দোকান ভাড়া নেওয়া হয়েছে মোহাম্মদিয়া ট্রাভেলস সার্ভিসের নামে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী মো. রায়হান বলেন, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মো. তমিজ উদ্দিনের কাছ থেকে দোকানটি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসে ৪ হাজার ৫০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়।

রেস্তোরাঁ মালিক মো. লীলচান বলেন, শায়েস্তা ইউপির সাবেক সদস্য আব্দুল মান্নানের কাছ থেকে তিন শাটারের দোকান ভাড়া নিয়েছেন। প্রতি মাসের নির্দিষ্ট সময়ে ভাড়া দিতে হয়।

বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম বলেন, উপজেলা সার্ভেয়ার দিয়ে জায়গাটি মেপে দেখা গেছে, দোকানঘরগুলো পরিষদের জায়গায় পড়েছে। এটি উদ্ধারে ব্যবস্থা নিতে ইউএনওকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই জমিটির দখলদারদের তালিকায় রয়েছে সাবেক চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন চোকদার, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য মো. তমিজ উদ্দিন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি দবির উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ টিপু, সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান ও ফজলুল হক শামীম।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন চোকদার বলেন, 'জায়গাটি ইউনিয়ন পরিষদের নয়। অজিত নাথ রায় নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে জমিটি আমরা কিনেছি। কেনা জমিতেই দোকানঘর তোলা হয়েছে।' তবে ওই জমির পাশে ইউনিয়ন পরিষদের জায়গা রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ ঘটনায় ২০১৭ সালে ১১ মে জমির মালিক অমিত রায়ের মেয়ে অদিতি রায় সিংগাইর থানায় মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন চোকদার, তাঁর ছেলে তুহিন চোকদার, তৎকালীন ইউপি সদস্য মনছুর আলী, আব্দুল মান্নান, ফজলুল হক শামীম, ঢাকার ধামরাই উপজেলার সূত্রাপুর গ্রামের আব্দুল খালেক, মোসলেমাবাদের নাজমুল, সিংগাইর উপজেলার দক্ষিণ চারিগ্রামের দুলাল হোসেন, সাহরাইল গ্রামের গোপাল সাহ ও সিংগাইরের তৎকালীন সাব-রেজিস্ট্রার মোস্তাফিজ আহমেদকে।

মামলার তদন্ত করে সিআইডি বাদীর অভিযোগের সত্যতা পায়। পরে ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন চোকদার ও সাবেক ইউপি সদস্য ফজলুল হককে গ্রেপ্তার হন। পরে জামিনে ছাড়া পান।

জমির মালিক অমিত রায় ভারতে চলে গেছেন কয়েক দশক আগে। তাঁর মেয়ে অদিতি বর্তমানে চিকিৎসার প্রয়োজনে দেশের বাইরে থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

মামলায় তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর বাবা অমিত রায় জীবিত আছেন। শায়েস্তা ইউনিয়ন পরিষদের পাশে তাঁর নামে ১২ শতাংশ জমি রয়েছে। এর মধ্যে ৬ শতাংশ জমি ইউনিয়ন পরিষদ দখল করেছে ৩০-৩৫ বছর আগে। ১৯৯৮ সালে তাঁরা বর্গাচাষি সমশেরের কাছে বাকি ৬ শতাংশ জমি ভাড়া দেন। তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন চোকদার তাঁর বাবাকে মৃত দেখিয়ে জমিটি সাফকবলা দলিল, নামজারি ও জমাভাগ করে দখলে নেন। এর জন্য অমিত রায়ের নাম বদলে অমিত নাথ রায় করা হয়। অদিতির ভাইয়ের নাম অমিত রায় হলেও ভুয়া ওয়ারিশ সনদে অজিত নাথ রায় নাম লেখা হয়। এর পর অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে অজিত নাথ রায় সাজিয়ে সিংগাইর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করা হয়।

ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, একই দাগে ইউনিয়ন পরিষদ এবং অন্য ব্যক্তিদেরও জমি রয়েছে। তবে যে জমিতে মার্কেট করা হয়েছে, তা ইউনিয়ন পরিষদের।

সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিপন দেবনাথ বলেন, এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। সার্ভেয়ার নিয়ে ওই জমিটি মাপা হবে।

আরও পড়ুন

×