ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

'এমপি ভাগ্য' নেই বলে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া

'এমপি ভাগ্য' নেই বলে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া

উপজেলার নেতাই নদীতে এখনও বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করছে গ্রামবাসী- সমকাল

মোস্তাফিজুর রহমান, ময়মনসিংহ

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৩:১৫

স্বাধীনতার একান্ন বছর পেরিয়েছে। এখনও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার জনপদে। স্বাধীনতার আগে নেত্রকোনার দুর্গাপুর, স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পূর্বধলা, এখন হালুয়াঘাট উপজেলার সঙ্গে সেখানকার ভোটের বিনিময় হয়। আপন রাজ্যে যেন পরের অধীন এই জনপদের মানুষ। ধোবাউড়া উপজেলার ৮০ শতাংশ সড়ক কাঁচা ও বেহাল। স্বাস্থ্যসেবায় নানা সমস্যা, শিক্ষায় পিছিয়ে। শুধু 'এমপি ভাগ্য' না থাকায় সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। ধোবাউড়াকে স্বতন্ত্র সংসদীয় আসন ঘোষণার দাবি করেছেন তাঁরা।

ধোবাউড়ার আদি নাম 'জিক্কোয়া বাজার'। অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝিতে নাম পাল্টে হয় ধোবাউড়া। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ধোবাউড়া থানা। ১৯৮৩ সালে পায় উপজেলার মর্যাদা। সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলা। জনসংখ্যা প্রায় ২ লাখ ২৮ হাজার। ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী এবং ভারতের মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা জনপদ ধোবাউড়া। স্বাধীনতার পর নেত্রকোনার পূর্বাধলা উপজেলার সঙ্গে সংসদীয় সীমানা ভাগাভাগি হতো। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধোবাউড়াকে হালুয়াঘাট উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রাজনীতির ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে ধোবাউড়ার মানুষ। আজ পর্যন্ত ধোবাউড়া থেকে কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হননি। তার পেছনে অবশ্য কারণও রয়েছে। এলাকার জনসংখ্যা ও ভোটার কম, এই অজুহাতে সব রাজনৈতিক দলই আসন হারানোর ভয়ে বারবার ফিরিয়ে দিয়েছে এমপি প্রার্থী হতে যাওয়া নেতাদের। শুধু ১৯৮৭ সালে জাতীয় পার্টির নেতা মফিজ উদ্দিন সংসদ সদস্য (এমপি) পদে নির্বাচন করেন, তবে পরাজিত হন। আর এমপি না পাওয়ায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এলকাটিতে। এখানকার সাতটি ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলার সংযোগ সড়ক পাকাকরণের কাজ চলছে শুধু। উপজেলার ৮৪ শতাংশ সড়ক চলাচল অনুপযোগী থাকায় সেখানের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে জানান সেখানকার বাসিন্দা আবুল কালাম।

সম্প্রতি কথা হয় স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী ফজলুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'আমরা পরের সঙ্গে সংসার করেই দিন পাড়ি দিচ্ছি। কিন্তু এলাকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে না। যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেক পিছিয়ে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ ও সরকারের উন্নয়ন বেগবান হবে শুধু একক সংসদীয় আসন হলে।'

গামারিতলা গ্রামের মিরাস উদ্দিনের ভাষ্য, ভোট এলে তাঁদের কদর বাড়ে। বাইরের উপজেলা থেকে নেতা এসে ভোট চেয়ে নেন। কিন্তু তাঁদের এলাকার মানুষের দুঃখ-দুর্দশা কেউ দেখে না। বারবারই বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা।

ধোবাউড়া থেকে এমপি হওয়ার মতো শক্তি-সামর্থ্যে বেড়ে উঠছিলেন ফুরকান উদ্দিন মৃধা ওরফে পাহাড়ি সেলিম। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে ধোবাউড়ার এমপি হতেন- এমন কথা মুখে মুখে। তবে এই নেতা ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর খুন হন।

ধোবাউড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাবেক সভাপতি মফিজ উদ্দিন বলেন, '১৯৮৭ সালে আমরা পূর্বধলার সঙ্গে। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলাম। আমিই একমাত্র ব্যক্তি, যে এ যাবৎকালে এমপি প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। ভূখণ্ডের জটিলতার কারণে এ এলাকার মানুষ কখনও এমপি হতে পারবে না। আগে পূর্বধলার কাছে আর এখন হালুয়ঘাটের কাছে এ এলাকার মানুষ জিম্মি। উন্নয়নে পিছিয়ে আছে।' তাঁর দাবি, পৃথক সংসদীয় আসন হলে এ এলাকার চিত্র বদলাবে।

ধোবাউড়া যদি শুরু থেকে সংসদীয় আসন হিসেবে স্বীকৃতি পেত তাহলে এলাকার চিত্র দ্রুত পাল্টাত। এলাকার উন্নয়ন পিছিয়ে থাকার কারণ সংসদীয় আসন ও এমপি না থাকা। সংসদীয় আসন হলে দ্রুত উন্নয়ন হবে বলে দাবি করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ডেভিড রানা চিসিম।

ধোবাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়তোষ বিশ্বাস বাবুল বলেন, প্রতিবার সংসদ নির্বাচনে ধোবাউড়া থেকে মনোনয়ন চান তাঁরা। তাঁদের দুর্ভাগ্য হলো, উপজেলায় জনসংখ্যা কম, ভোটার সংখ্যা কম- এই অজুহাত।

আরও পড়ুন

×