দাকোপ
সুপেয় পানির কষ্টের দিন ফুরাল নমিতাদের

দাকোপে সুপেয় পানির প্লান্ট থেকে পানি সংগ্রহ করছেন বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা - সমকাল
দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ | ০১:৪২
খুলনা শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে দাকোপ উপজেলার বানিশান্তা ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের পূর্বপাশে রয়েছে প্রমত্তা পশুর নদ এবং দক্ষিণে ঐতিহ্যবাহী সুন্দরবন। এ ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তা কাঁচা।
রোববার সকাল সাড়ে ৬টা। ঢাংমারী গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথ বেয়ে কিশোরী ও মধ্যবয়সী কয়েকজন নারী কাঁধে কলসি নিয়ে পানি সংগ্রহে নেমেছেন। তাঁদের গন্তব্য দেড় কিলোমিটার দূরের পার্শ্ববর্তী ভোজনখালী গ্রাম।
তাঁদের একজন নমিতা রায় (৪৫)। তিনি বলেন, এ সময়ে গ্রামের অধিকাংশ পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় রান্নাবান্না ও খাবার পানির খুবই কষ্ট। ভোজনখালী গ্রামে স্থাপিত 'পিওর ওয়াটার' প্লান্ট সুপেয় পানির সমাধান করে দিয়েছে। এ প্লান্ট থেকে প্রতি লিটার পানি ৫০ পয়সায় কিনতে পারছি এবং চাহিদা অনুযায়ী পাচ্ছিও।
শুধু নমিতা রায় নন, দীর্ঘ সময়ের বিশুদ্ধ পানির কষ্টের সমাধানের কথা বললেন পানি সংগ্রহ করতে আসা এনামুল হক, রমেশ মণ্ডল, দীপা মণ্ডল, রাজু হাওলাদার, প্রিয়াঙ্কা বাইন, নূপুর হালদার, সবিতা সরদার, প্রহদ্মাদ রায়, ফাতেমা বেগম, শামসুর রহমানসহ অনেকে।
এ প্লান্ট থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি দেওয়া হয়। ভোজনখালীসহ রেখামারী, ঢাংমারী, পূর্ব ঢাংমারী, ঝড়খালী গ্রামের ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ পরিবার পানি সংগ্রহ করছে।
গত শুক্রবার প্লান্টটির উদ্বোধন করেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার। উপস্থিত ছিলেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. নমিতা হালদার এনডিসি। উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিদিন এসব গ্রামের অসংখ্য মানুষ পানি পান ও রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন।
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় এবং এফসিডিওর অর্থায়নে পিপিইপিপি প্রকল্প এবং পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন ইউনিটের সহযোগিতায় প্লান্টটি বাস্তবায়ন করে আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার।
এ প্লান্ট থেকে ঘণ্টায় ১ হাজার লিটার পানি তোলা যাবে বলে জানিয়েছেন আদ-দ্বীন ওয়েলফেয়ারের নির্বাহী পরিচালক মহিউদ্দিন শেখ। তিনি বলেন, প্রতি লিটার ৫০ পয়সা নেওয়া হচ্ছে প্লান্টে নিযুক্ত কেয়ারটেকার এবং সমিতির সদস্যদের স্বাবলম্বী করতে।
ইউপি চেয়ারম্যান সুদেব রায় বলেন, সমুদ্র উপকূলীয় এ ইউনিয়নে বছরের প্রায় আট মাস পানি লবণাক্ত থাকে। এতে মানুষের সুপেয় পানির অভাব দেখা দেয়। বিশেষ করে চৈত্র-বৈশাখ মাসে গ্রামে খাবার পানির একমাত্র উৎস পুকুরের পানি শুকিয়ে যায়। তখন বিশুদ্ধ পানির সংকট প্রকট হয়। ভোজনখালী গ্রামে প্লান্ট থেকে পাঁচ গ্রামের মানুষ সুপেয় পানি সংগ্রহ করছেন।
সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার বলেন, 'আশা করছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দাকোপ-বটিয়াঘাটাসহ সব উপকূলীয় উপজেলায় পর্যায়ক্রমে সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ করা হবে।'
- বিষয় :
- দাকোপ
- বানিশান্তা ইউনিয়ন
- পশুর নদ
- সুন্দরবন