ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

চারঘাট সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ গুলি বিনিময়

চারঘাট সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফ গুলি বিনিময়

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০১৯ | ১২:১০

রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে ভারতীয় জেলেদের ইলিশ ধরার সময় বাধা দিয়েছেন বিজিবি সদস্যরা। এ সময় বিজিবি সদস্যরা তিন ভারতীয় জেলেকে আটক করেন। পরে বিএসএফের চার জওয়ান ওই জেলেদের ছিনিয়ে নিতে গুলি চালালে বিজিবিও আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়। 

বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে পরে দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে উভয়পক্ষ বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে একমত হয়েছে। বতর্মানে সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাতে রাজশাহী বিজিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দীন মাহমুদ জানান, মা ইলিশ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে দেশের জেলেরা নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত রয়েছেন। তবে তা মানছেন না ভারতীয় জেলেরা। উল্টো তারা ঢুকে পড়ছেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। সকালে মা ইলিশ শিকারের বিরুদ্ধে পদ্মা নদীতে অভিযান চলছিল। ওই সময় রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মা নদীতে বাংলাদেশের ভেতরে মাছ শিকারের সময় ৪ কেজি কারেন্ট জালসহ তিন জেলেকে আটক করা হয়। পরে বিজিবি জানতে পারে তারা ভারতীয় জেলে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিএসএফের চার জওয়ান তাদের ছিনিয়ে নিতে আসেন। এ সময় বিজিবি পতাকা বৈঠক ছাড়া ভারতীয় জেলেদের তুলে দিতে অস্বীকার করলে বিএসএফ জওয়ানরা বিজিবিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। বিজিবিও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। এ সময় বিএসএফ সদস্যরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে ভারতীয় জেলে প্রণব মণ্ডলকে আটক করে নিয়ে আসে বিজিবি। পরে তাকে চারঘাট থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও বেআইনিভাবে মাছ ধরার অপরাধে দুটি মামলা হবে।

এ নিয়ে বিকেলে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পতাকা বৈঠকে বসেন। বিজিবির অধিনায়ক জিয়াউদ্দীন বলেন, 'পতাকা বৈঠকে বিএসএফ দাবি করেছে, তাদের এক জওয়ান নিহত এবং বিএসএফের হেড কনস্টেবল আহত হয়েছেন।' তিনি বলেন, পতাকা বৈঠকে সীমান্তে শান্তিপূর্ণ অবস্থান ধরে রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যে ঘটনাটি ঘটেছে তা অনাকাঙ্ক্ষিত। বিএসএস ভারতীয় জেলেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা না করলে এমন ঘটনা ঘটত না। পতাকা বৈঠকে উভয় দেশের বাহিনী আশ্বস্ত করেছে যেন এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে। বর্তমানে সীমান্ত পরিবেশ শান্ত রয়েছে।

এ ঘটনায় রাতে বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সকালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের শূন্য লাইন থেকে পদ্মা নদীর পাড়ে আনুমানিক ৩৫০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারত থেকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী ৩ জেলেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে দেখা যায়। এ সময় বিজিবির চারঘাট বিওপির টহল দল মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান তদারকির জন্য উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট আবু রায়হান এবং আরও দু'জন সহকারীসহ ঘটনাস্থলে গমন করে এক জেলেকে অবৈধ কারেন্ট জালসহ আটক করতে সক্ষম হয়। পরে বিএসএফের ১১৭ ব্যাটালিয়নের কাগমারী বিওপি হতে স্পিডবোটে ৪ বিএসএফ সদস্য চারঘাটের বালুঘাট এলাকার শাহারিয়াঘাটের বড়াল নদীর মুখে আনুমানিক ৬৫০ গজ বাংলাদেশের ভেতরে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করলে চারঘাট বিওপির টহল দল তাদের বাধা দেয়। তাদের মধ্যে বিএসএফের একজন সদস্য ইউনিফর্মধারী হলেও বাকিরা হাফপ্যান্ট ও গেঞ্জি পরিহিত ছিল। বিএসএফ টহল দলের কাছে অস্ত্রও ছিল। পরে বিএসএফ ওই জেলেকে জোর করে ফিরিয়ে নিতে চাইলে তাদের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে নিয়মমাফিক ফেরত দেওয়া হবে বলে বিজিবি টহল দল জানায়। এ ছাড়া বিজিবি টহল দল বিএসএফ সদস্যদের আরও জানায় যে, 'আপনারাও অবৈধভাবে বাংলাদেশে এসেছেন, তাই আপনাদেরও নিয়ম অনুযায়ী পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হবে।' এ সময় বিএসএফ সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে জোরপূর্বক ধৃত জেলেকে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে চাইলে বিজিবি সদস্যরা তাদের বাধা প্রদান করেন। এ সময় বিএসএফ সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে ফায়ার করেন এবং ফায়ার করতে করতে স্পিডবোট চালিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে চলে যেতে থাকেন। বিজিবি টহল দলও তখন আত্মরক্ষার্থে ফায়ার করে। বিএসএফের অনুপ্রবেশের ছবি বিজিবির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে সরবরাহ করা হয়েছে। পরে উভয়পক্ষ তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে একমত হয়েছে। এ ছাড়া এ বিষয়ে আরও আলোচনার জন্য আবারও পতাকা বৈঠক করার ব্যাপারে উভয়পক্ষ একমত হয়েছে। পতাকা বৈঠক শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে।

আরও পড়ুন

×