মদপানে ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু, সংগঠনের দাবি সড়ক দুর্ঘটনা

রাকিবুল ইসলাম। ছবি- সংগৃহীত
ফরিদপুর অফিস
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৩ | ১২:৫৫ | আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৪:০১
গতকাল সোমবার বেলা ২টা ২০ মিনিটে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাকিবের মৃত্যু হয়। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে জানাজা শেষে তাকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
রাকিব ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বেলজানি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য শরিফুল ইসলামের ছেলে।
রাকিবের মৃত্যু নিয়ে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অবশ্য কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে সোমবার রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শোক প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ স্বাক্ষরিত শোকবার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফরিদপুর জেলা শাখার সহ-সভাপতি রাকিবুল ইসলাম আজ (সোমবার) বেলা আনুমানিক ৩টা ৩০ মিনিটে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। তার মৃত্যুতে ছাত্রলীগ পরিবার গভীরভাবে শোকাহত। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাকিবুল ইসলামের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের শোকবার্তার পরই বিষয়টি নিয়ে ফরিদপুরে আলোচনার সৃষ্টি হয়। তবে মদ পানে ওই ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু হয়েছে বলে তার বন্ধু, স্বজন ও হাসপাতাল সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সোমবার সকাল ৯টার দিকে বন্ধু পরিচয়ে আবির নামের এক তরুণ রাকিবকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪২৭৮৩/২৩ সিরিয়ালে ভর্তি করেন। ভর্তির জায়গায় ‘পুলিশ কেস’ সিল মারা ছিল। এছাড়া হাসপাতালের রেজিস্টার খাতায় ভর্তির কারণ হিসেবে ‘ভমিটিং অ্যালকোহল পয়জনিং’ উল্লেখ করা হয়েছে।
ভর্তি করতে আসা আবির নামের ওই যুবক জানিয়েছিলেন, ঘন ঘন বমি করায় রাকিবকে হাসপাতালে আনা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির এক নারী কর্মচারী জানান, ভর্তি হওয়ার সময় রাকিব আবিরকে বলেছিলেন, ‘মদের সাথে আমাকে কী খাওয়ালি? আমার বুক ও গলা জ্বলে যাচ্ছে।’ এরপর থেকে আবিরের আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এমনকি হাসপাতালে আবির যে মুঠোফোন নম্বরটি দিয়েছে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বমির কথা বলে তাকে ভর্তি করা হলেও তার সমস্যা ছিল অ্যালকোহলজনিত বিষক্রিয়া। তাকে দ্রুত নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ২টা ২০ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়।
ওই হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আতিয়ার রহমান বলেন, এটি একটি পুলিশ কেস। এজন্য তার মৃত্যুর পর যাবতীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
এ বিষিয়ে ফরিদপুরের কোতয়ালী থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহরীয়ার বলেন, এ মৃত্যু সংক্রান্ত থানায় কোনো তথ্য নেই।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ তামজিদুল রশিদ চৌধুরী রিয়ান বলেন, আমার জানামতে রাকিব মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হন। পরে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। অ্যালকোহলজনিত মৃত্যুর বিষয়টি আমার জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, রাকিবকে তিনি চেনেন না। কেন্দ্র কমিটি অনুমোদন করার সময় তার নাম কলম দিয়ে হাতে লিখে দিয়ে অনুমোদন করা হয়।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, বিষয়টি পুলিশের কাছে না আসায় আমরা তার বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিতে পারিনি। আমরা খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি। কেন কীভাবে তার মৃত্যু হল, সেটা জানার চেষ্টা করছি।