ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

আশা জাগাচ্ছে সরিষা ও গম

আশা জাগাচ্ছে সরিষা ও গম

সাজ্জাদ রানা, কুষ্টিয়া

প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৯:২২

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের পুরাতন কুষ্টিয়া, গোপিনাথপুর ও সালদা মৌজা। পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে বিশাল মাঠ। এ মাঠের প্রায় পুরোটায় হলুদ আর হলুদ। বাকি অংশে গমের আবাদ করেছেন কৃষকরা। ২০২১ সালে এ মাঠে মাত্র ২০ বিঘায় সরিষা আবাদ করেছিলেন এলাকার কৃষকরা। এবার ৫০০ বিঘার ওপরে সরিষা আবাদ করেছেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ভোজ্য তেল ও আটার চাহিদা বেড়েছে বহুগুণ। এ কারণে ভালো দাম পাওয়ার আশায় সরিষা ও গম আবাদে ঝুঁকেছেন কৃষকেরা।

কৃষি বিভাগ ও কৃষকরা জানায়, আমদানি কমিয়ে দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ করতে সরিষা আবাদ বাড়াতে পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য সরিষা আবাদে কৃষকদের প্রণোদনা কয়েকগুণ বাড়ানোর নির্দেশ দেন তিনি।

খামারবাড়ির তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে রবি মৌসুমে সরিষা আবাদের জন্য মাত্র ৫ হাজার কৃষককে সার-বীজ দেওয়া হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার জনকে। এর প্রভাব পড়েছে ফসলের মাঠে।

জেলার প্রতিটি এলাকার মাঠে দিগন্ত জোড়া সরিষার ক্ষেত। কৃষকদের মুখেও হাসি ফুটেছে। গত মৌসুমে ৯ হাজার ১৪৭ হেক্টরে সরিষা আবাদ হলেও এবার হয়েছে ১১ হাজার ৬৪৫ হেক্টরে, যা গত মৌসুম থেকে প্রায় ৩০ ভাগ বেশি। আগামী তিন বছর দেশে সরিষার আবাদ ৪০ ভাগ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে সরকার। সেখানে এ বছর কুষ্টিয়া জেলায় ৩০ ভাগের বেশি অর্জিত হয়েছে, যা মাইলফলক হিসেবে দেখছেন কৃষিবিদরা।

এবার গমে আবাদ বিগত ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে জেলায়। গত বছর ১১ হাজার ৫৫৭ হেক্টরে গম আবাদ হলেও এবার আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৬৫৪ হেক্টরের বেশি। হেক্টর প্রতি ৪ থেকে সাড়ে ৪ টন গমের ফলন হবে বলে জানান খামারবাড়ির উপপরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ। তিনি বলেন, জেলায় গত বারের তুলনায় সরিষা থেকে তেল উৎপাদন এবার ১৫ থেকে ২০ ভাগ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গম আবাদেও বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে।

হরিপুরের সালদা এলাকার কৃষক মামুনুর রশিদ। তিনি এ বছর ৮ বিঘা জমিতে সরিষা ও ৩ বিঘায় গম আবাদ করেছেন। ইতোমধ্যে সরিষা কাটতে শুরু করেছেন। আগে রোপণ করায় সরিষার ফলনও ভালো হয়েছে বলে জানান তিনি। গমের ফলনও আগের বছরগুলোর তুলনায় ভালো হবে বলে জানিয়েছেন এই কৃষক।

মামুন বলেন, আটা এখন বাজারে ৬০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি। সয়াবিন তেলের দামও বেশি। এ কারণে সরিষা ও তেলের দামও আগের তুলনা বেড়েছে। এ বছর গম ও সরিষা আবাদকারী কৃষকদের ভালো লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে।
কৃষক ইসমাইল, তৈয়ব আলী, দুলাল হোসেন ও ফিলিপ আলী জানান, সরকার এবার সরিষার বীজ ও সার দিয়েছে। ধান পাকার পর তারা কেটে নেওয়ার আগে জমিতে বীজ ছিটিয়ে দেন। ধান কেটে নেওয়ার পর বীজ থেকে চারা বের হয়। এরপর জমিতে সেচ দিয়ে সার ছিটিয়ে দিলে দ্রুত সরিষা বড় হয়ে যায়। ফলনও এবার ভালো হবে। সরিষার এমন আবাদ বিগত ১৫ বছরে হয়নি বলে জানান তাঁরা।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে আগামীতে সরিষা ও গমের আবাদ আরও বাড়লে এসব আমদানি কমে আসার পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল জানান, প্রধানমন্ত্রী দেশে ভোজ্য তেল উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়ার পর তাঁরা কৃষকদের নিয়ে উঠান বৈঠক, সভা-সেমিনার করেছেন। আমন ধান কাটার পর বেশির ভাগ জমি কয়েক মাস পড়ে থাকে। এ সময় চাষ ছাড়াই অল্প খরচে সরিষা আবাদ করা যায়। এই সুযোগটাই এবার নিয়েছেন কৃষকরা। ফলে সরিষায় বিপ্লব হতে যাচ্ছে। মাঠের পর মাঠ সরিষা আবাদ হয়েছে। নিজেদের ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিক্রি করে বাড়তি অর্থ পাবেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

×