চাঁদপুরে সূর্যের দেখা নেই ৫ দিন, শীতে সরকারি কম্বল নিয়ে টানাটানি

শীতে আগুন পোহাচ্ছেন হতদরিদ্ররা- সমকাল
চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ | ১২:১৩ | আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ | ১২:১৩
চাঁদপুরে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। গত পাঁচদিন থেকেই জেলায় সূর্যের আলোর দেখা মেলেনি। ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে পথঘাট। সড়কে যানসহ সাধারণ মানুষের যাতায়ত অনেক কমে গেছে। শীতের সঙ্গে বইছে মৃদু বাতাস। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার চাঁদপুরে তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা জেলায় এ বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
এই তীব্র শীতকে মোকাবিলা করার মতো শীতবস্ত্র নেই অধিকাংশ হতদরিদ্র মানুষের। সরকারি পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে ৪৭ হাজার ৫৫০টি কম্বল ছাড়া কোনো শীতবস্ত্র আসেনি। আর এই উপহারও চাহিদার তুলনায় খুবই কম। যা নিয়ে এরইমধ্যে টানাটানি শুরু হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অফিস ষ্টাফ জীবন কৃষ্ণ সমকালকে জানান, গত মাসে প্রধানমন্ত্রীর উপহার সামগ্রী হিসেবে ঢাকা থেকে ৪৭ হাজার ৫৫০ পিস কম্বল পাঠানো হয়েছে ৮৯টি ইউনিয়ন এবং ৭ পৌরসভা এলাকায় বণ্টনের জন্য। প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ৪৯০টি করে কম্বল বিতরণ করা হবে। কিন্তু মানুষের তুলনায় এত কম পরিমাণ কম্বলও হত দারিদ্রের কাছে ঠিকমতো পৌঁছায়নি। অভিযোগ উঠেছে, এসব উপহারের কম্বল অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিরা তাদের পছন্দের লোকদের মধ্যে দিয়েছেন। যাদের কম্বল কিংবা শীতের পর্যাপ্ত জামা কাপড় আছে, তাদের ঘরেও হতদরিদ্রদের কম্বল গেছে।
এ ব্যাপারে শাহরাস্তি পৌরসভার মেয়র হাজি আবদুল লতিফ বলেন, আমার পৌরসভায় ৪০ হাজার মানুষ শীতের কবলে। সেখানে ৪৯০টি কম্বল দেওয়া হয়েছে আমাকে বণ্টনের জন্য। তবুও এটা প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে অনেক বড় প্রাপ্তি।
সরকার দলীয় লোকরা কম্বল পাচ্ছে অন্যরা পাচ্ছে না, এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহরাস্তি মেয়র বলেন, ‘দলে গরিব আছে বলেই তারা পায় এবং তাদের তো দিতে হবেই। কম্বলের সংখ্যা বেশি হলে অন্যদেরও দেওয়া যাবে। আমরা তো চাই সবাইকে দিতে।’
সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল-মামুন পাটওয়ারী বলেন, প্রাপ্ত কম্বলের মধ্যে 'আঁচল মা'দের (হতদরিদ্র স্বল্পশিক্ষিত মা, যাদের ০ থেকে ১/২ বছরের শিশু আছে) যারা আইসিডিডিআরবির তত্ত্বাবধানে সকালে বাড়ির উঠানে লেখাপড়া করে, তাদের ৯৬টি কম্বল দিয়েছি। আর অন্য ৪০০ কম্বল ২৮/৩০ টা করে মেম্বারদের দিয়ে দরিদ্রদের দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কম্বল আরও বিপুল সংখ্যক প্রয়োজন।
এ দিকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে কম্বল এলেও জেলার দরিদ্র শিশুদের শীত নিবারণে সরকারি পর্যায়ে শিশু বস্ত্র বণ্টন হয়নি। ত্রাণ বিভাগ বলছে- গত বছরও শিশুরা কিছুই পায়নি। আগে শিশুদের জন্য গরম কাপড়চোপড় পাঠানো হতো ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে। শীতে কাপড় না পেয়ে জেলার কয়েক হাজার শিশু কষ্ট পাচ্ছে। শীতে কাবু হওয়া এসব শিশুরা ঠান্ডাজনিত নানা অসুখ নিয়ে হাসপতালে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান সমকালকে জানান, গত সপ্তাহে আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে শীতে আরও কম্বল পাঠানোর জন্য চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করি খুব শিগগিরেই পাবো। কম্বল পাওয়া সাপেক্ষেই তা বণ্টন হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে যা পেয়েছি সেগুলো আমরা পৌর ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। আর আমরা কিছু অসহায়দের মাঝে বিতরণ করেছি।
- বিষয় :
- চাঁদপুর
- শীত
- তীব্র শীত
- কম্বল
- কম্বল নিয়ে টানাটানি