ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

মুজিবনগর আম্রকানন

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রক্ষার এক যোদ্ধা

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রক্ষার এক যোদ্ধা

গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত জহির শেখ - সমকাল

ফারুক হোসেন, মেহেরপুর

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৩ | ১০:৫৬

বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথের স্থান ঐতিহাসিক মুজিবনগর আম্রকানন। এর পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। তবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মারা গেছে কয়েকশ গাছ। অনেক ইতিহাস মুছে যেতে বসেছে। এসব গাছ রক্ষণাবেক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্য ধরে রাখতে এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় ভবেরপাড়া গ্রামের জহির শেখ। নিজ উদ্যোগে বিনা পারিশ্রমিকে ২১ বছর ধরে চারা রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করছেন তিনি। এ পর্যন্ত অন্তত ৪০০ গাছ রোপণ করেছেন জহির।

৩৫ বছর আগে বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা দাউদ শেখ মারা যাওয়ার পর অভাব-অনটনের সংসারে পড়ালেখার সুযোগ হয়নি জহির শেখের। জমিজমা না থাকায় কষ্টে চলে সংসার। আম্রকাননে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চিরকুমার রয়ে গেছেন। আশায় আছেন, স্বেচ্ছাশ্রমের কাজের জন্য সরকার মূল্যায়ন করলে সংসার পাতবেন তিনি। অবশ্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন তবে এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

জানা গেছে, ঐতিহাসিক আমবাগানটি প্রতি বছর লিজ দেয় জেলা প্রশাসন। লিজের অর্থ সাইরাত মহল ইজারাবিষয়ক একটি কোডে (খুলনা বিভাগীয় হিসাবে) জমা হয়। তবে বাগান পরিচর্যা ও নতুন গাছ লাগানোর জন্য রাখা হয় না বরাদ্দ। এ অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছেন জহির। বিনা পারিশ্রমিকে মরা গাছের জায়গায় নতুন চারা রোপণ ও পরিচর্যা করে চলেছেন।

জহির শেখ বলেন, ঐতিহাসিক মুজিবনগর আম্রকাননের প্রেমে পড়ে দীর্ঘদিন নিজ খরচে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছেন। কোনো আর্থিক সহযোগিতা না পেয়ে অনেক কষ্টে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে আম্রকাননের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে চান তিনি।

মুজিবনগরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে গার্ড অব অনার দেওয়া আনসার সদস্য আজিমুদ্দিন শেখ বলেন, জহির শেখ ভালোবেসে এ কাজ করছেন। ভালোবেসে যিনি কাজ করেন, তাঁর দ্বারাই ভালো কাজ হয়। জহিরকে রক্ষণাবেক্ষণের প্রকল্পে নিয়োগ দিলে আরও ভালোভাবে কাজটি করতে পারবেন।
আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গার্ড অব অনার দেওয়া আনসার সদস্য সিরাজ উদ্দিন বলেন, এ বাগানের গুরুত্ব অনেক হলেও সেভাবে পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। জহির শেখ যে কাজ করেন, তা এত বড় বাগানের জন্য সামান্যই। এ জন্য দরকার সরকারি উদ্যোগ। কৃষিমন্ত্রী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২১ বছর আগে একটি প্রকল্প করে বাগান ও মুজিবনগর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স সুরক্ষায় ১২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১০ জন কয়েক মাস কাজ করেও বেতনভুক্ত না হওয়ায় চলে যান। তবে সুভাষ বাবু ও জহির শেখ বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করছিলেন। সুভাষ বর্তমানে ভাতাভুক্ত হয়েছেন।
স্থানীয় চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন বলেন, শুধু জহির শেখ নয়, আরও অনেকে ভালোবেসে মুজিবনগর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন। স্মৃতিসৌধ ঝাড়ূ দেওয়া ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা সুভাষ বাবুকে মাসিক ১৬ হাজার টাকা ভাতার ব্যবস্থা করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। জহির শেখের বিষয়েও কথা হয়েছে। মন্ত্রী তাঁর ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন।

জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মেহেরপুরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মো. সামছুল আলম বলেন, গত ১৬ নভেম্বর কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক আম্রকাননে গিয়ে গাছ রক্ষায় জেলা প্রশাসনকে প্রকল্প তৈরি করতে বলেছেন। গাছগুলো মালচিং পদ্ধতিতে রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।

জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, কৃষিমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পর ৮২ লাখ টাকার প্রকল্প তৈরি করে সংশ্নিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষি বিভাগ নাকি বন বিভাগ বাস্তবায়ন করবে, তা জানিয়ে দেওয়া দেবে। জহিরকে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ থাকলে করা হবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মুজিবনগরে ঐতিহাসিক আম্রকানন রক্ষায় একটি প্রকল্প চালু করা হবে। সেখানে জহির শেখকে নিয়োগ দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

আরও পড়ুন

×