ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

চট্টগ্রামে বেসরকারি স্কুলে গলাকাটা ফি, প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ

চট্টগ্রামে বেসরকারি স্কুলে গলাকাটা ফি, প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ

ছবি: ফাইল

শৈবাল আচার্য্য, চট্টগ্রাম

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৩ | ২২:২৬

করোনার অভিঘাতে জীবন পাল্টে গেছে মুহাম্মদ হোসাইনের। প্রথমে বেতন কমে, পরে চলে যায় চাকরি। কোনোমতে কাজ জুটিয়ে টেনেটুনে চলছিলেন। কিন্তু সন্তানদের বিদ্যালয়ের খরচের সঙ্গে পেরে উঠলেন না। গত ডিসেম্বরে শহর ছেড়ে দিলেন। স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে হাটহাজারী উপজেলার চৌধুরীহাটের চিকনদন্ডী গ্রামে চলে আসেন। কিন্তু সেখানেও নিস্তার নেই। বেসরকারি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে ছেলে আবির হোসাইনকে ভর্তি করাতে গিয়ে হতাশায় মুষড়ে পড়েন। সরকার যা নির্ধারণ করেছে, তার কয়েক গুণ বেশি ভর্তি ফি। শেষ পর্যন্ত ছেলেকে ভর্তি করাতে পারেননি মুহাম্মদ হোসাইন। তাঁর মতো বাড়তি ফি দিয়ে সন্তানদের ভর্তি করাতে ব্যর্থ অভিভাবকরা প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনে লিখিত আবেদন করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, বাড়তি ফি অভিভাবকদের ঘুম কেড়ে নিলেও নীরব প্রশাসন। মনিটরিং টিম করা হলেও নেই কোনো তৎপরতা।

বেসরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ (মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তর) শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, মফস্বল এলাকায় সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি সাকল্যে ৫০০ টাকা। তবে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ নির্দেশনা মানছে না। ভর্তি, সেশন ফি ছাড়াও নামে-বেনামে কয়েক গুণ বাড়তি টাকা আদায় করছে। হাটহাজারীর চৌধুরীহাটের 'এপিএবি বোরা প্রাইমারি স্কুল' কর্তৃপক্ষ নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য ৩ হাজার ৪০০ এবং পুরোনোদের জন্য ৩ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। এর সঙ্গে অন্যান্য খাতের নামে সাকল্যে ৬ হাজার ৭০০ থেকে ৬ হাজার ৯০০ টাকা আদায় করছে।

বাড়তি ফির কারণে অনেকে সন্তান ভর্তি করাতে পারেননি। কয়েকজন অভিভাবক বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়- না পোষালে সন্তান অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করুন। 'এপিএবি বোরা প্রাইমারি স্কুল' ও 'সানরাইজিং হাই স্কুলে' ভর্তি করাতে না পেরে ১৫ অভিভাবক সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিভাবকরা জানান, এপিএবি বোরা প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে ৬ হাজার ৭০০ থেকে ৬ হাজার ৯০০ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি পরীক্ষা ফি ১ হাজার, টিউশন ফি ৭০০, শিক্ষা সফর বাবদ ৩০০, পিকনিক ১৮০, খেলাধুলা ১৫০, স্কুল উন্নয়ন ফি ৫০০ টাকাসহ নামে-বেনামে বাড়তি টাকা নিচ্ছে। 'মর্নিং ডিউ স্কুলে' নতুন ভর্তি ফি আদায় করা হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকা। এখানে পুনঃভর্তি ফি ১ হাজার ৫০০ টাকা। খাতা ৪৭০ ও ইউনিফর্ম বাবদ নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার টাকা। মাসিক ফি ৪০০-৫০০ টাকা। আর বইয়ের মূল্য ক্লাস অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে বলে নোটিশ টানিয়েছে।

বাড়তি ফি আদায় ঠেকাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চারজন উপসচিবের নেতৃত্বে পৃথক মনিটরিং কমিটি গঠন করে। তবে চট্টগ্রামের কোথাও কমিটির কার্যক্রম চোখে পড়েনি। ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, 'প্রশাসন নীরব বলেই গ্রামেও গলাকাটা ফি আদায় করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিদুল আলম সমকালকে বলেন, 'অভিযোগ পেয়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাকে তলব করেছি।'

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আবু রায়হান দোলন বলেন, 'ভর্তি ফি আদায়ে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও বাড়তি ফি নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।'

আরও পড়ুন

×