ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

করতোয়ার নাব্যতা রক্ষায় পুলিশের উদ্যোগে নৌকাবাইচ

করতোয়ার নাব্যতা রক্ষায় পুলিশের উদ্যোগে নৌকাবাইচ

পুলিশের উদ্যোগে করতোয়ায় নাব্যতা রক্ষায় করতোয়া নদীতে শুক্রবার নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়- সমকাল

বগুড়া ব্যুরো

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০১৯ | ০৭:১৯ | আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৯ | ০৭:৩৪

নৌকাবাইচকে ঘিরে বগুড়া শহরের বুক চিড়ে যাওয়া করতোয়া নদী শুক্রবার বিকেলে যেন তার প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। ঢাক-ঢোল আর করতালের ছন্দে বৈঠা হাঁকিয়ে ঢেউ তুলে মাঝিদের ছুটে চলা মৃতপ্রায় করতোয়াকে এতটাই প্রাণবন্ত করে তুলেছিল যে, তার রূপ দেখতে দুই তীরে হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে যায়।

জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো এই নৌকাবাইচের আয়োজন করা হয়।  শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে শুরুর কথা ঘোষণা করা হলেও জুমার নামাজের পর থেকেই নদীর দুই তীরে মানুষ জড়ো হতে শুরু করেন। 

শহরে মালতিনগর এসপি ব্রিজ থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে বেজোড়া ব্রিজ পর্যন্ত নৌকাবাইচ দেখতে স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকে ছুটে আসেন। নানা বয়সী নারী-পুরুষের মধ্যে শিশুর সংখ্যাও কম নয়। অনেকে নদীর তীরে জায়গা না পেয়ে পাশের ভবনের ছাদে নয়তো গাছের ডালে ওঠেন।

বিকেল পৌনে ৪টায় এসপি ব্রিজের নিচ থেকে যখন বাইচ অর্থাৎ নৌকার দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হলে এসময় দুই তীরের শত শত মানুষ উল্লাস প্রকাশ করেন। আর বাবা-মার কোলে থাকা শিশুরাও হাততালি দেওয়া শুরু করে।

নৌকাবাইচ উপভোগ করতে বন্ধুদের সঙ্গে আসা বগুড়া জিলা স্কুলের ৯ম শ্রেণির ছাত্র তৌফিকুর রহমান জানায়, সে এবারই প্রথম নৌকাবাইচ দেখছে।

তৌফিক বলেন, 'নৌকাবাইচের কথা আমরা শুধু পাঠ্য বইয়েই পড়েছি। কখনও দেখা হয়নি। এবার দেখলাম। এর মাধ্যমে আমি আমার সংস্কৃতিকে জানলাম।' 

বেজোড়া এলাকার আব্দুস সামাদ (৬৫) জানান, প্রায় ২০ বছর আগে একবার তিনি এরকম নৌকাবাইচ দেখেছিলেন। তিনি বলেন, 'আমার নাতি কখনো নৌকাবাইচ দেখেনি। তাই তাকে এবার নিয়ে এসেছি। ও খুব খুশি।'

'কমিউনিটি পুলিশিং ডে' উপলক্ষে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহযোগিতায় আয়োজিত বাইচে মোট ৬টি নৌকা অংশ নেয়। এগুলো হলো-বগুড়ার গাবতলীর পারানি পাড়ার বাবু মাঝির নৌকা 'আলতাহ্‌ ভরসা' (৭৫ হাত দীর্ঘ), আজিজার রহমান মাঝির 'দেগুন' (৫৫ হাত), হরারদীঘি গ্রামের আমিনূরের তৈরি 'পঙ্খীরাজ' (৭৪ হাত), পাশের নাংলু গ্রামের এবনে ইউছুব সৌদের 'নৌরাজ'(৭৪ হাত), নশিপুরের ফজলুর তৈরি 'তিনবন্ধু' (৩০ হাত) এবং ইটালি গ্রামের আজিজার রহমানের নৌকা 'আমিন হক' (২৮ হাত লম্বা)।

ছয়টি নৌকার মধ্যে বাইচের প্রথম পর্বে দুটি করে নৌকা অংশ নেয়। প্রথম পর্বে বিজয়ী 'আল্লা ভরসা' ও 'নৌরাজ' চুড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে পরে 'আল্লাহ ভরসা' বিজয়ী হয়। পরে বিজয়ী তিনটি দলকে পুরস্কৃত করা হয়।

বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা জানান, করতোয়া নদীর নাব্যতা রক্ষায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিশও কাজ করে যাবে। নদীতে দূষণের কবল থেকে রক্ষার জন্য নদীতে ময়লা-আবর্জনা না ফেলার জন্য আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'করতোয়া নদীকে রক্ষার দায়িত্ব সবার। এক্ষেত্রে কমিউনিটি পুলিশও তার দায়িত্ব পালন করে যাবে।' 

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না জানান, নাব্যতা রক্ষা এবং দখল ও দূষণের কবল থেকে করতোয়াকে রক্ষার জন্য এর আগে তারা গ্রাম থিয়েটার ফেডারেশনের পক্ষ থেকে নৌকাবাইচ আয়োজন করেছিলেন। তিনি বলেন, 'করতোয়া নদীকে বাঁচাতে কমিউনিটি পুলিশের সব ধরনের উদ্যোগে বগুড়ার সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাবে।'

এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বগুড়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. মকবুল হোসেন, পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোকবুল হোসেন, বগুড়া জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি মোজাম্মেল হক লালু, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী ও কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ আলম ঝুনু প্রমুখ।

আরও পড়ুন

×