রাবিতে শিক্ষার্থীকে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে

রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৩ | ১৭:০১ | আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৩ | ১৭:০১
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা হলের প্রাধ্যক্ষের সামনে তাঁর কক্ষে এক শিক্ষার্থীকে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক স্মৃতি বালা ও সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুন্নাহার দোলনের বিরুদ্ধে। তবে তাঁরা এই ঘটনা অস্বীকার করেছেন।
এদিকে নির্যাতনের শিকার ছাত্রীকে হলে তুলে দিতে গিয়ে বুধবার অবরুদ্ধ হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর। এদিন দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা হল গেটের ছিটকিনি লাগিয়ে অবস্থান নেন সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এতে ছাত্র উপদেষ্টা ও হলে থাকা পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র উপদেষ্টাকে উদ্ধার করে।
মানসিক নির্যাতনের শিকার সুমাইয়া আক্তার সমাজকর্ম বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এবং বঙ্গমাতা হলের আবাসিক ছাত্রী।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি পানি গরমের হাঁড়ি নিয়ে তাঁর সঙ্গে দোলনের কথা কাটাকাটি হয়। এতে দোলন ক্ষিপ্ত হয়ে সুমাইয়ার ‘বেয়াদবি’র অজুহাতে তাঁর সিট বাতিল করে গণরুমে দেওয়ার জন্য হল প্রাধ্যক্ষের কাছে আবেদনপত্র দেন। এতে তিনি ব্লকের ছাত্রীদের স্বাক্ষর গ্রহণ করেন। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হল প্রাধ্যক্ষ সুমাইয়াকে গণরুমে স্থানান্তর করেন।
তবে হল প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে ব্লকের শিক্ষার্থীরা হল প্রাধ্যক্ষের কাছে সুমাইয়ার পক্ষ নিয়ে আরেকটি চিঠি দেন। এসব বিষয়ে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার সুমাইয়াকে প্রাধ্যক্ষের কক্ষে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ নেত্রী স্মৃতি বালা ও দোলন। এ সময় হল প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্রলীগ নেত্রী ওই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার জন্য সুমাইয়াকে চাপ দেন। সেই সঙ্গে ছাত্রলীগ নেত্রী ও দোলন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে মানসিক নির্যাতন করেন। এক পর্যায়ে ওই শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তখন তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাঁদের বিভাগের শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আর এ ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ছাত্র উপদেষ্টার হাতে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন তাঁদের বিভাগের সভাপতি। এর জেরে সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা হল গেটে উপস্থিত হয়ে ছাত্র উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করেন। এ সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে ঘটনাস্থলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত দু’জন সাংবাদিকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন তাঁরা।
এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। তাঁদের বিভাগের শিক্ষার্থীকে সিটে তুলে দিতে গিয়ে অবরুদ্ধ হয়েছেন– তাই তাঁরা ছাত্র উপদেষ্টাকে উদ্ধার করতে এসেছেন বলে জানান।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম ও অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক প্রমুখ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তাঁরা ছাত্র উপদেষ্টাকে উদ্ধারের জন্য হলের ভেতরে যেতে চাইলে সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাঁদের বাধা দেন। এক পর্যায়ে তাঁরা ভেতরে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পরে ছাত্র উপদেষ্টাকে নিয়ে বের হলে সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন তাঁরা।
এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম বলেন, সমস্যার সমাধান হয়েছে। ছাত্র উপদেষ্টা সরি বলেছেন সংগীত বিভাগের সভাপতিকে। আর নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে।