ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ধর্ষণের অভিযোগ ৪ লাখ টাকায় ‘রফা’

ধর্ষণের অভিযোগ ৪ লাখ টাকায় ‘রফা’

প্রতীকী ছবি

মাদারীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৩ | ২২:৪৬

মাদারীপুর সদর উপজেলায় এক কিশোরীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দুই বছর ধরে ধর্ষণের ঘটনা ৪ লাখ টাকায় মীমাংসার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘাটমাঝি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গত ৬ ফেব্রুয়ারি নিজ বাড়িতে সালিশ ডেকে এ সিদ্ধান্ত দেন। ওই সিদ্ধান্ত না মানায় চাপের মুখে কিশোরীকে ঢাকায় পাঠাতে বাধ্য হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।

সালিশ মীমাংসার কথা স্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান বাবুল আকতার হাওলাদার। তবে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন তিনি। সালিশে থাকা দু’জন টাকা দিয়ে মীমাংসার কথা স্বীকার করেছেন।

স্থানীয় সূত্র এবং ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে জানা যায়, ইউনিয়নের শাহাবুল খানের ছেলে মেহেদীর সঙ্গে ওই কলেজছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেহেদী গত দুই বছর ধরে বিয়ের প্রলোভনে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে। তবে বিয়ের কথা বললে নানা অজুহাতে এড়িয়ে যেত মেহেদী। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বিয়ের দাবি নিয়ে মেহেদীর বাড়িতে যায় ওই কিশোরী। ওই সময় মেহেদীর মা, চাচি ও পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিলে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়।

এর পরই স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। স্থানীয় মাতবরদের নিয়ে ঘটনার ১৮ দিন পর গত ৬ ফেব্রুয়ারি চেয়ারম্যান বাবুল আকতার নিজ বাসায় উভয়পক্ষকে ডেকে সালিশ বসান। সেখানে ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান জয়নাল তালুকদারের নেতৃত্বে ‘জুরি বোর্ড’বসিয়ে মেহেদীর পরিবারকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পরে চেয়ারম্যান তা ৪ লাখ করেন। তাৎক্ষণিক ৫০ হাজার এবং এক সপ্তাহের মধ্যে বাকি টাকা দিতে বলা হয়। বিষয়টি গোপন রেখেই সমাধানের চেষ্টা চালানো হয়।

ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, তারা টাকা চাননি। মানসম্মান তো টাকা দিয়ে পাওয়া যায় না। মেহেদী সালিশে অভিযোগ স্বীকারও করেছে। তবে বিচার না মানলে চেয়ারম্যানকে অপমান করা হবে। তাঁরা ঝামেলায় পড়বেন। তাঁরা স্বেচ্ছায় সালিশে যাননি। স্থানীয় মাতবর পিন্টা বিশ্বাস, দেলোয়ার খাঁসহ কয়েকজন তাঁদের চেয়ারম্যানের বাসায় নিয়ে গেছে।

মাতবররা বলেছেন, থানায় যাওয়ার দরকার নেই। তাঁরা দরিদ্র হওয়ায় মাতবরদের কথা না মেনে উপায় ছিল না। তবে কিশোরী ওই সিদ্ধান্ত না মানায় চাপের মুখে তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তাঁরা।

মেহেদীর বাবা শাহাবুল খাঁর দাবি, তাঁর ছেলের সঙ্গে কিশোরীর প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। তাঁরাও অনিচ্ছায় সালিশের সিদ্ধান্ত মেনেছেন। না হলে মারধর ও লাঞ্ছিত হতে হতো। কিশোরীকে দিয়ে মামলার ভয়ও দেখানো হয়েছে। তাঁরা নিরুপায় হয়ে মাতবরদের কাছে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে এসেছেন। এর বেশি কিছু জানতে হলে চেয়ারম্যান ও মাতবরদের কাছে যেতে বলেন তিনি।

সালিশকারীদের একজন দেলোয়ার খাঁ সমকালকে বলেন, ‘আমরা উপস্থিত ছিলাম। উভয়পক্ষের সম্মতি নিয়েই চেয়ারম্যান সমাধান করে দিয়েছেন। এ নিয়ে তো কোনো দরবার ওঠার কথা না। আপনারা এ নিয়ে কিছু লেইখেন না। আপনারা কজন আসছেন, আপনাদের একটা তেল খরচ আছে। আমি আপনাদের তেল খরচ দিয়ে দিচ্ছি। এই ঘটনায় নিউজ করার দরকার নেই। ওরা গরিব মানুষ।’

ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান জয়নাল তালুকদারের দাবি, ছেলেমেয়ের প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে মারামারির ঘটনা শুনে উভয়পক্ষকে ডেকে সমাধান করে দিয়েছি। তবে ধর্ষণ বা শারীরিক সম্পর্কের কথা শুনিনি। টাকা নিয়েও বিচার করিনি এবং কোনো টাকা জমা রাখিনি।

চেয়ারম্যান বাবুল আকতার বলেন, আমাদের কাছে এসেছিল মীমাংসা করে দিয়েছি। আপনাদের কেউ কি অভিযোগ দিয়েছে? এটা নিয়ে আপনাদের কী দরকার? তাদের ভালো না লাগলে মামলা করুক।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, ধর্ষণ হলে মামলা করতে হবে। এটা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার বিষয় নয়। এমন হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে স্থানীয় সাকিব হোসেনের অভিযোগ, ইউপি চেয়ারম্যান উকিল এবং বারের সেক্রেটারি হওয়ায় কোনো কিছু পরোয়া করেন না। সব সালিশই করে দেন। তাঁর কারণে নারীরা সঠিক বিচার থেকে বঞ্চিত হন।

আরও পড়ুন

×