ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

৭৫ কোটিতে খনন, দু’বছরে চর

৭৫ কোটিতে খনন, দু’বছরে চর

ধলেশ্বরী নদীর মাস্তানঘাট সেতুর নিচে চরের মধ্যে গর্তে হাঁটু পানিতে রাখা নৌকা সমকাল

মো. জাহাঙ্গীর আলম, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ)

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৩ | ০৩:৪৫

সাটুরিয়ায় ধলেশ্বরী ও গাজীখালী নদী খনন করা হয়েছে দুই বছর আগে। ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’-এর আওতায় খননকাজে খরচ হয়েছে ৭৫ কোটি টাকার বেশি। নদী দুটি এখন পানিশূন্য ধু-ধু বালুচর। চাষ হচ্ছে ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল। স্থানীয়দের অভিযোগ, খননের নামে হরিলুট ও মাটি বাণিজ্য হয়েছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মাটি পরিবহনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কোটি টাকার সড়ক। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারাবছর পানি প্রবাহ রাখতে হলে আরও খনন করতে হবে।

ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নদীভাঙন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী ব্যবস্থাপনাসহ ছয়টি লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা একনেকে পাস হয় ২০১৮ সালে। এর অংশ হিসেবে মানিকগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী খননের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। কালীগঙ্গা নদী থেকে ধলেশ্বরীর উৎসমুখ সাটুরিয়ার তিল্লি থেকে গোপালপুর হয়ে গাজীখালী পর্যন্ত ৪৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার খনন শুরু হয় ২০১৯ সালের নভেম্বরে।

পাঁচটি প্যাকেজে এ খনন কর্মসূচির চুক্তি মূল্য ধরা হয় ৭৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সাটুরিয়ার ধলেশ্বরী নদীর মুখ থেকে গাজীখালী নদীর দুটি প্যাকেজের ১০ কিলোমিটার খননের ব্যয় ধরা হয় ১০ কোটি টাকা। কাজ শেষের সময় ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বর। তবে এক বছর সময় বাড়িয়ে কাজ শেষ হয় ২০২১ সালের শেষ দিকে। খননের দুই বছরেই গাজীখালী নদী শুকিয়ে বালুচরে পরিণত হয়েছে।

পাঁচটি প্যাকেজের প্রথমটি শুরু হয় তিল্লিমুখ থেকে জান্না পর্যন্ত ১০ দশমিক ২০ কিলোমিটার অংশে। গত রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, নদীর এ অংশে কয়েকটি ডোবার মতো গর্তে পানি থাকলেও বেশিরভাগ অংশই শুষ্ক। বালুচরে মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করেন। অনেক স্থানে চাষ করা হয়েছে ধান ও ভুট্টা। নদীর অনেক জায়গায় মাটি খুঁড়ে অস্থায়ী কুয়া তৈরি করা হয়েছে। গ্রামের বাসিন্দারা সেখান থেকে পানি সংগ্রহ করছেন।

মাস্তানঘাট এলাকায় নদীর সেতুর নিচে দেখা গেল হাঁটুপানিতে দু-তিনটি ছোট নৌকা অর্ধনিমজ্জিত অবস্থায়। যেখানে কালীগঙ্গা নদী থেকে ধলেশ্বরীর উৎপত্তি হয়েছে সেখানের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। এটি তিল্লিমুখ নামে পরিচিত। সেখানে বিরাট চর পড়ে দুই নদী বিভক্ত হয়ে গেছে। কালীগঙ্গা নদীতে পানির প্রবাহ থাকলেও ধলেশ্বরীতে নেই।

স্থানীয়রা জানান, ধলেশ্বরী নদীর মুখ প্রায় ১৫ বছর বন্ধ ছিল। বর্ষার এক-দুই মাস পানি থাকত। অনেক বছর ধলেশ্বরী থেকে গাজীখালীতে পানি ঢুকতে পারত না। ধলেশ্বরীর মুখসহ বেশ তোড়জোড় করে নদীর মাটি কাটা শুরু হয়। হাজার হাজার ট্রাক মাটি বিক্রি হয়েছে। এক পর্যায়ে ধলেশ্বরীর মুখ দিয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। কিন্তু গত বছরের বর্ষায় পলি জমে ফের ভরাট হয়ে গেছে। এখন সেখানে বিশাল চর।

ধলেশ্বরী নদীর মুখেই বাড়ি আবদুল মজিদের। তিনি বলেন, ধলেশ্বরীর মুখ যথেষ্ট গভীর করে খনন না করায় চর পড়েছে। কালিগঙ্গার গভীরতার সমান ধলেশ্বরী নদী খনন করা হলে এত দ্রুত বন্ধ হয়ে যেত না। কোটি কোটি টাকা খরচ করে নদী খননে মাটি ব্যবসায়ীদের লাভ হলেও আসল কাজ কিছুই হয়নি।

ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলনের নেতা দীপক ঘোষ বলেন, কেবল তিল্লি থেকে জান্না পর্যন্তই নয়; প্রকল্পের পুরো ৪৫ কিলোমিটারের অবস্থা একই রকম। কিছু এলাকায় পানি থাকলেও ধলেশ্বরীর মুখ বন্ধ থাকায় পুরো নদীতে কোনো প্রবাহ নেই। এটি এখন মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাঈন উদ্দীন ধলেশ্বরী নদীর মুখে চর পড়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গাজীখালীতে প্রবাহ না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, শুষ্ক মৌসুমে এমন নদীতে পানি প্রবাহ রাখা কঠিন। সব সময় পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে প্রতিবছরই খনন করতে হবে। ফের খননের জন্য বরাদ্দ চেয়ে পাঠানো হলেও এখনও পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন

×