ধানের শীষ শুকিয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে
কয়রায় লোকসানের মুখে তিন হাজার বোরো চাষি

শ্রমে-ঘামে ফলানো ফসল এবার ঘরে উঠবে না। শুকিয়ে সাদা হয়ে যাওয়া ধানের শীষ দেখছেন খুলনার কয়রার চিন্তিত এক চাষি - সমকাল
শেখ হারুন অর রশিদ, কয়রা (খুলনা)
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ | ২৩:৪৮
খুলনার কয়রা উপজেলার বেদকাশি গ্রামের কৃষক আফসার গাজী এবার ৬ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন। এতে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৭২ হাজার টাকা। এ টাকার মধ্যে অর্ধেক স্থানীয় সমিতি থেকে ঋণ করেছিলেন। প্রথমদিকে পরিস্থিতি অনেক ভালো ছিল। শেষ মুহূর্তে ধানের শীষ শুকিয়ে সাদা হতে শুরু করেছে। ফসলের অবস্থা দেখে খরচ তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।
শুধু আফসার গাজী নন; এমন অবস্থা উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের বেশিরভাগ বোরো চাষির। তাঁদের অভিযোগ, সময়মতো কৃষি অফিসের পরামর্শ না পেয়ে কীটনাশক কোম্পানির লোকের পরামর্শ নিয়েছেন তাঁরা। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে।
আফসার গাজী জানান, ‘ফলন আসার মুহূর্তে ধান গাছের পাতা শুকাতে শুরু করে। এ সময় স্থানীয় বাজারের সার-কীটনাশক বিক্রেতার পরামর্শে ডিএপি সার প্রয়োগ করি। পরে বিভিন্ন কীটনাশক ছিটানো হলেও কোনো কাজ হয়নি।’ পার্শ্ববর্তী বড়বাড়ি গ্রামের কৃষক পরিমল মণ্ডল বলেন, ‘প্রথমদিকে ধানের খারাপ অবস্থা দেখে কৃষি অফিসের পরামর্শ নেওয়ার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তারা কেউ এলাকায় আসেন না। বাধ্য হয়ে স্থানীয় বাজারে গিয়ে সার বিক্রেতাদের দোকানে বসা কোম্পানির লোকের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে প্রতিকারের চেষ্টা করেছি। কিন্তু ফসল রক্ষা হলো না। এখন সারাবছরের খাওয়া-পরা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি।’
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এবার সাতটি ইউনিয়নে ৪ হাজার ৯২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। আবাদের শুরুতে দুই হাজার কৃষকের প্রতি জনকে ২ কেজি উফশী জাতের বীজ এবং এক হাজার কৃষককে ৫ কেজি করে হাইব্রিড জাতের বীজ বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কৃষকপ্রতি ৫ কেজি ডিওপি ও ১০ কেজি এমওপি সার দেওয়া হয়েছে। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার টন। তবে শেষ মুহূর্তে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা।
সরেজমিন কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি অফিসের দেওয়া বিনামূল্যের বীজ ও সার অধিকাংশ কৃষকের কাছে পৌঁছেনি। তাঁরা স্থানীয় বাজার থেকে বিআর-২৮ ও বিআর-১০ জাতের বীজ কিনে জমিতে লাগিয়েছেন। প্রথমদিকে ধান গাছের চারা ভালোই দেখা গেছে। এক পর্যায়ে পাতা শুকিয়ে যেতে শুরম্ন করে। ধানের শীষ বের শুরু হওয়ার পর অধিকাংশ ক্ষেতে পাতা ও শীষ শুকিয়ে যেতে দেখা গেছে। অনেক কৃষকের ক্ষেতে ফলন আসার আগেই ধান গাছ মরে যাচ্ছে। তাঁরা বলেছেন, চিংড়ি ঘেরের লোনা পানি চুইয়ে আসায় লবণাক্ততার কারণে এমন হয়েছে।
গাতিরঘেরি এলাকার কৃষক দীলিপ মাহাতো বলেন, ‘প্রায় ২৫ বছর পর আমাদের জমিতে ধান চাষ করতে পেরে অনেক খুশি হয়েছিলাম। শেষ মুহূর্তে এসে লবণাক্ততা ও মাজরা পোকার আক্রমণে হতাশ হয়েছি। এর প্রতিকারের উপায়ও খুঁজে পাচ্ছি না।’ এলাকার আরেক কৃষক সাধন সরকার অভিযোগ করেন, বিনামূল্যের বীজ ও সার তাঁরা কেউ পাননি। যাঁরা পেয়েছেন, তাঁদের কেউই ধান চাষ করেননি। তাঁদের কাছ থেকে বীজ ও সার কিনে জমিতে লাগিয়েছেন কৃষকরা। তিনি বলেন, দুই বিঘা জমি আবাদ করতে ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এখন খরচ উঠবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন।
কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাশ বলেন, বিআর-২৮ জাতের ধানে বেশি রোগবালাই দেখা যাচ্ছে। কৃষকদের ওই ধান চাষ করতে নিষেধ করেছি। এর পরও অনেকে বাজার থেকে বীজ কিনে চাষ করেছেন। ওই কৃষকদের জমিতে এবার মাজরা পোকা ও ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। তবে যাঁরা কৃষি অফিস থেকে বীজ নিয়ে চাষাবাদ করেছেন, তাঁদের জমিতে ভালো ফলন হয়েছে।