সিলেট মহানগর
পাঁচ মার্কেটের ১০ হাজার দোকান অগ্নিঝুঁকিতে

সিলেটের পুরোনো হকার্স মার্কেট। ছবি- ইউসুফ আলী/সমকাল
ফয়সল আহমদ বাবলু, সিলেট
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৩ | ০৮:১৩
প্রায় ৪৫ বছরের পুরোনো সিলেটের পুরোনো হকার্স মার্কেট। এর বেশ কয়েক বছর পর পাশেই গড়ে তোলা হয় নতুন হকার্স মার্কেট। এর পাশে রয়েছে সিটি বাণিজ্যিক ভবন এবং সিটি সুপার মার্কেট। এই সিটি মার্কেটের উত্তরে ৬০ বছরের হাসান মার্কেট। সিলেট সিটি করপোরেশন কোনো কোনো মার্কেট পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পরও কার্যক্রম চলছে নির্বিঘ্নে। এসব মার্কেটের কোনোটিতে নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। বলতে গেলে, এই পাঁচ মার্কেটের প্রায় ১০ হাজার দোকান রয়েছে অগ্নিঝুঁকিতে।
সরেজমিন দেখা যায়, মার্কেটগুলোতে ঘিঞ্জি পরিবেশে ছোট ছোট দোকানে পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বিক্রি করছেন দোকানিরা। মার্কেটের ভেতরে সরু গলিপথ। ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে পথ চলাই কঠিন। এ ছাড়া পাইকারি ও খচুরা পণ্যের বাজার হওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এসব মার্কেটে ভিড় করেন।
নগরীর লালদীঘিরপার এলাকায় হকারদের পুনর্বাসনে গড়ে তোলা হয় হকার্স মার্কেট। ১ হাজার ৩৫টি দোকান নিয়ে গড়ে ওঠা মার্কেটটি রয়েছে অগ্নিঝুঁকিতে। মার্কেটের প্রথম গেট জামে মসজিদের সামনের গলি। একেবারে সরুপথ। বিভিন্ন ধরনের পণ্যের পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে দোকানের সামনের গলিপথে। ওই মার্কেট দিয়ে পাশাপাশি দু’জন হাঁটাও কষ্টসাধ্য। অনেক দোকানে মাথার ওপরে বিদ্যুতের তারও ঝুলতে দেখা যায়। গত রমজানে ওই মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নকাণ্ডে ৭৭টি দোকান পুড়ে যায়। দমকল বাহিনীর ১৭ ইউনিট প্রচেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তখন দমকল বাহিনীর সদস্যরা পুরাতন হকার্স মার্কেটকে ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ এবং এটি অপরিকিল্পিত মার্কেট বলে ঘোষণা করে।
ওই মার্কেটের দোকানিরা বলছেন, মার্কেটে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলে তা হবে ভয়াবহ। স্বাভাবিকভাবে মানুষের গাদাগাদিতে মার্কেটের ভেতর পথ চলা কঠিন। ফলে মার্কেটে আগুন লাগলে অসংখ্য প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে
এ ব্যাপারে মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক হাজি আব্দুস সোবহান বলেন, মার্কেটের মালিক সিটি করপোরেশন। আমরা মেয়রকে বলেছিলাম মার্কেটের উন্নয়নের কথা। তিনি বলেছেন, এখানে হবে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স। তাই মার্কেটের কোনো উন্নয়ন করা যাচ্ছে না। এ কারণে এই অবস্থায়ও তাঁদেরকে ব্যবসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
একই চিত্র পাশে অবস্থিত নতুন হকার্স মার্কেটের। এ মার্কেটের রাস্তা পুরোনো হকার্স মার্কেট থেকে একটু বড়। ওই মার্কেটে রয়েছে প্রায় ৫ হাজার দোকান। তবে এখানেও ঘিঞ্জি পরিবেশ। এই মার্কেটের দোতলার অবস্থা খুবই খারাপ। সিঁড়িগুলো খুবই বিপজ্জনক; কোথাও উঁচু কোথাও নিচু। অনেক স্থান দিয়ে পানিও পড়ে। দোতলার ওপরটা অপরাধীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। রাত গভীর হলে এখানে অপরাধীদের আনাগোনা বেড়ে যায় বলে জানান অনেক ব্যবসায়ী।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে লালদীঘিরপার নতুন হকার্স মার্কেটের সভাপতি মো. শামসউদ্দিন বলেন, আমাদের মার্কেট অনেকটা গোছানো আছে। নতুন করে বিদ্যুতের লাইন টানা হয়েছে। ট্রান্সফর্মার বসানো হয়েছে। আমরা সচেতন আছি।
ওই মার্কেটের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছিল আরেকটি মার্কেট। লালদীঘিরপার তৃতীয় হকার্স মার্কেট ছিল এটি। অপরিকল্পিত হওয়ায় মার্কেটটি ভেঙে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে হকারদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। বর্তমানে কয়েকটি মাছের দোকান ছাড়া কোনো দোকান নেই সেখানে। নগর ভবনের ঠিক পাশেই সিটি সুপার মার্কেট। আর পেছনে সিটি বাণিজ্যিক ভবন। এই দুটি মার্কেটই বেশ কয়েক বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে নগর কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় ওই মার্কেটগুলোতে। ঝুঁকি নিয়ে চলে কেনাবেচা। ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটটি ভাঙার জন্য সিটি করপোরেশন তোড়জোড় চালালেও ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে ব্যর্থ হয়েছে।
ওই মার্কেটগুলোর উত্তরে বন্দরবাজার হাসান মার্কেট। ১৯৫৯ সালে নির্মিত মার্কেটটিতে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ীরা। ভেতর-বাহির মিলে প্রায় চারশ দোকান রয়েছে মার্কেটে। এই মার্কেট নিয়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের শেষ নেই।
হাসান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিয়াজ মোহাম্মদ আজিজুল করিম বলেন, মার্কেটে চারশ দোকান রয়েছে, তবে ঝুঁকিপূর্ণ নয়। আমরা ইতোমধ্যে ৮ হাজার লিটারের পানির ট্যাঙ্ক স্থাপন করেছি, যাতে আগুন লাগলে আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থা থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
প্রতিটি মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, কোনোটাতেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, পানি ও ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম নেই। নেই অগ্নিকাণ্ডের সময় দ্রুত বের হওয়ার বিকল্প পথ। মার্কেটগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা জোরদার করতে কয়েক দফা চিঠি দেয় সংস্থাটি। তবে এখন পর্যন্ত সে ব্যবস্থা জোরদার করেনি এসব মার্কেট কর্তৃপক্ষ।
সিলেট ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান সমকালকে বলেন, আমরা সব সময় ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে আসছি। তাঁদেরকে আগুন নিয়ে সতর্কতা হিসেবে মহড়াও দিয়েছি। নিজে বাঁচতে হলে সচেতন থাকতে হবে– এটা বলেছি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশনের অনেক মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা ব্যবসায়ীদের সতর্ক এবং সচেতন হয়ে ব্যবসা করার জন্য বলেছি। পরিত্যক্ত মার্কেট ভাঙার জন্য তাঁদের প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেন বলেন, বঙ্গবাজারের ঘটনায় আমরা খুবই মর্মাহত। ওই ঘটনার পর আমরা সব সময় সতর্ক আছি। আমাদের সিলেটের ঝুঁকিপুর্ণ মার্কেটগুলো নিয়ে ঈদের পর প্রশাসনের সঙ্গে বসব।
- বিষয় :
- অগ্নিঝুঁকি
- মার্কেট
- দোকান
- সিলেট