ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ

জায়গার মালিক সওজ ঈদবাজার প্রভাবশালীর

জায়গার মালিক সওজ ঈদবাজার প্রভাবশালীর

সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ের পাশে বসানো ঈদবাজারে শনিবার সন্ধ্যায় ক্রেতার ভিড়- সমকাল

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৩ | ২৩:২৯

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) ৩৭ শতাংশ জায়গা ভরাট করে ঈদবাজার বসিয়েছে একটি প্রভাবশালী চক্র। জেলা সওজ কার্যালয় থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে এর অবস্থান হলেও সংস্থাটির পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। প্রথম রমজান থেকে এখানে টাকার বিনিময়ে বসানো হয়েছে প্রায় ১০০ দোকান। এজন্য নির্দিষ্ট টাকা অগ্রিম দিতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। পাশাপাশি দৈনিক ভাড়া দিচ্ছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে এখানে প্রায় অর্ধ কোটির টাকার লেনদেন হচ্ছে।

সরেজমিন গতকাল শনিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ের পাশে এ চিত্র দেখা গেছে। সৌদি-বাংলা মার্কেটের সামনে সওজের মালিকানায় ৩৭ শতাংশ জায়গা রয়েছে। এখানে কয়েক দিন আগেও ছিল একটি জলাশয়। মাসখানেক আগে সেখানে মাটি ভরাট করে অস্থায়ী দোকান বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন মো. রিপন নামে এক যুবক ও তাঁর সহযোগীরা। স্থানীয় সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের সঙ্গে রিপনের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাঁর প্রভাব খাটিয়েই প্রকাশ্যে ওই জায়গা দখলে নিয়েছেন তিনি।

শিমরাইল মোড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান বলেন, মহাসড়কের পাশে প্রকাশ্যে বেশ কয়েক দিন ধরে সরকারি জায়গা ভরাট করা হয়। পরে ইট বিছিয়ে টিনের বেড়া দিয়ে জায়গাটি দখলে নেওয়া হয়। এখন ঈদবাজার বসানো হয়েছে। তবে প্রশাসন ও সওজ বিভাগের কর্মকর্তারা কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, তা বোধগম্য নয়।

মহাসড়ক ঘেঁষে এখানে বাজার বসানোয় শিমরাইল মোড়ে ভয়াবহ যানজট দেখা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম।
যেখানে ঈদবাজার বসানো হয়েছে, এর অবস্থান নারায়ণগঞ্জ সওজ কার্যালয়ের ২০০ গজ উত্তর-পশ্চিমে। তবে সওজ কর্মকর্তাদের নীরবতাকে রহস্যজনক বলছে স্থানীয় লোকজন। তারা মনে করছে, কোনো না কোনোভাবে তাঁদের হাত করেই ঈদবাজার বসানো হয়েছে এখানে।

দোকানিরা জানিয়েছেন, রমজান মাসের ১ তারিখ ঈদবাজার শুরু হয়। যা চলবে মাসব্যাপী। তাঁদের তথ্য অনুযায়ী, এখানে প্রায় ১০০ দোকান রয়েছে। আকার-অবস্থানভেদে প্রতি দোকান থেকে ৪০-৬০ হাজার টাকা অগ্রিম আদায় করা হয়েছে। এ ছাড়া দিনে দেড় হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

এ বিষয়ে মো. রিপনের ভাষ্য, দরিদ্র মানুষ এখানে ব্যবসা করছেন। ঈদে যেন তাঁরা বাড়তি আয় করতে পারেন– এ চিন্তা থেকেই আয়োজন করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্যান্ডেল করতে যা খরচ হয়েছে, আমি দোকানিদের কাছ থেকে ওই খরচই নিয়েছি। এতে আমার কোনো লাভ নেই।’ তবে এর জন্য থানা ও নারায়ণগঞ্জ সওজ বিভাগকে ‘ম্যানেজ’ করতে হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

তবে ঘনিষ্ঠ সহযোগী মো. রিপনের বিষয়ে এমন তথ্য জানেন না বলে দাবি করেছেন নাসিকের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল। তিনি বলেন, ‘রিপন ঈদবাজার করছে কিনা, আমি কিছুই জানি না।’

এখানে বসানো সব দোকানে দেওয়া বিদ্যুতের সংযোগ অবৈধ বলে জানা গেছে। একটি সূত্র জানায়, এর জন্য ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিডেটের (ডিপিডিসি) ডেমরা অঞ্চলের সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে আয়োজকরা গোপনে আঁতাত করেছেন। এ অভিযোগ অস্বীকার করে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি দেখছি।’

নারায়ণগঞ্জ সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, ‘সওজের জায়গা  ভরাট কিংবা দখল করে কোনো মেলা বা ঈদবাজার করার অনুমতি কাউকে দিইনি। আমি ওই জায়গার দখল ছেড়ে দিতে নোটিশ করেছি।’ জায়গা না ছাড়লে শিগগিরই সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে বলেও জানান তিনি।

মহাসড়কের পাশে সওজের ওই জায়গা কারা দখল করেছেন, তা জানেন না সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘কারা ঈদবাজার বসিয়ে চাঁদা নিচ্ছেন, আমার জানা নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও মেলা বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি।’ এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

আরও পড়ুন

×